সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ ব্যারাকপুরের ছাউনিতে প্রথম প্রকাশ্য বিদ্রোহ করেছিলেন বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩৪ নং ব্যাটেলিয়নের সিপাহী মঙ্গল পাণ্ডে। অসম লড়াইয়ে ব্যাপকভাবে আহত মঙ্গল পাণ্ডের ফাঁসির সাজা হয়েছিল। তারিখটি ছিল ১৮ এপ্রিল। কিন্তু সেই তারিখ নিয়ম বিরুদ্ধেভাবে ১০ দিন এগিয়ে নিয়ে আসা হয়। ৮ এপ্রিল সেনা ছাউনিতে ফাঁসি দেওয়া হয় মঙ্গল পাণ্ডেকে। ২২ এপ্রিল মঙ্গল পাণ্ডেকে সাহায্য করার অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হল জমাদার ঈশ্বরীপ্রসাদ পাণ্ডেকে।
নেতৃত্বের অভাবে মঙ্গল পাণ্ডের সিপাহী বিদ্রোহ সফল না হলেও এই ঘটনা সারা ভারতবর্ষের সিপাহীদের মধ্যে প্রবল সাড়া জাগিয়েছিল। সিপাহী মঙ্গল পান্ডের আত্মবলিদানে উজ্জীবিত ভারতীয় সিপাহীরা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস ব্যারাকে মীরাট, দিল্লি, এলাহাবাদ, অযোধ্যা, লক্ষ্ণৌ, কানপুর, ঝাঁসী, বারানসী,পাটনা, এমনকি চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট, যশোর, রংপুর, পাবনা ও দিনাজপুরের মহা বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে এবং খণ্ডযুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়। সারা ভারতবর্ষ জুড়ে আলোড়িত সিপাহী বিদ্রোহকে স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ বলেও চিহ্নিত করা হয়।
ইংরেজ ও ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য ভারতীয় সিপাহীদের অন্তরে যে আগুন ধিকধিক করে জ্বলছিল তা ভারতীয় সিপাহীদের এনফিল্ড বন্দুক টোটা ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্মনাশের আশংকায় সিপাহী বিদ্রোহের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছিল। ১৮৫৭সালের ২৯শে মার্চ বারাকপুর ক্যান্টনমেন্টের ৩৪ বাংলা নেটিভ ইনফরানটি-র ঊনত্রিশ বছর বয়সের সিপাহী মঙ্গল পান্ডে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম গুলিবর্ষণ শুরু করেন এবং অন্য সিপাহীদের ইংরেজদের সীমাহীন অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জানাতে আহ্বান করেন। অসম যুদ্ধে আহত হয়ে শেষ পর্যন্ত মঙ্গল পাণ্ডে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু আহত মঙ্গল পান্ডেকে বন্দী করে চিকিৎসায় সুস্থ করে তোলার আগেই বিচারের প্রহসনে তাঁকে ফাঁসির নির্দেশ দেওয়া হয়। ব্যারাকপুরে তার নামে ” মঙ্গল পাণ্ডে শহীদ স্মৃতি উদ্যান”এ আজও বহু মানুষ তাকে শ্রদ্ধা জানাতে যায়।
১৯৮৪ সালের ৫ অক্টোবর ভারত সরকার পাণ্ডের স্মরণে তার ছবি সম্বলিত ডাকটিকিট জারি করে। দিল্লি-ভিত্তিক শিল্পী সি আর পাকরাশি ডাকটিকিট এবং এর প্রচ্ছদ নকশা করেছিলেন। ব্যারাকপুরে ব্রিটিশ সেনাদের যে স্থানে পাণ্ডে আক্রমণ করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল সেখানে তার স্মরণে শহীদ মঙ্গল পান্ডে মহা উদ্যান নির্মাণ করা হয়। পরে ব্যারাকপুর সেনা ক্যাম্প এলাকায় তার একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল, যা মঙ্গল পাণ্ডে বাগান নামে পরিচিত।
তাঁকে নিয়ে অনেক সিনেমা হয়েছে। অন্যতম , মঙ্গল পাণ্ডে: দ্য রাইজিং শিরোনামে বিদ্রোহের ঘটনাটগুলির ক্রম ভিত্তিক একটি চলচ্চিত্রে কেতন মেহতার পরিচালনায় পাণ্ডের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভারতীয় অভিনেতা আমির খান, যেটি ২০০২ সালের ১২ আগস্ট মুক্তি পেয়েছিল। দ্য রোটি রিভেলিয়ন শীর্ষক পাণ্ডের জীবনীমূলক মঞ্চ নাটকটি রচনা ও পরিচালনা করেছিলেন সুপ্রিয়া করুণাকরণ। “স্পর্শ” নাট্যদল পরিচালিত নাটকটি ২০০৫ সালের জুন মাসে অন্ধ্র প্রদেশ, হায়দ্রাবাদ, অন্ধ্র সরস্বত পরিষদের দ্য মুভিং থিয়েটারে পরিবেশিত হয়েছিল।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.