মনহাসের মেয়ে ও ভাইপোর আর্তি
মনহাসের মেয়ে রাগভি সে মাওবাদীদের উদ্দেশ্যে তার বাবার সুরক্ষিতভাবে ফিরে আসার জন্য আবেদন করেছে। এরপরই তার চোখেও জল চলে আসে। কাকুর কোলে বসে রাগভি এই আবেদন করে। ঘরের ভেতর মনহাসের পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। পাঁচ বছরের শিশুর আর্তি শুনে কেঁদে ফেলেন তাঁর কাকাও। শনিবার বিজাপুরে মাওবাদী-নিরাপত্তা রক্ষীদের সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ২২ জন জওয়ানের। পুলিশ-প্রশাসনের বিশ্বাস মনহাসকে বন্দী বানিয়েছে মাওবাদীরা। তবে শুধু মনহাসের মেয়েই নয়, তাঁর ৭ বছরের ভাইপো আকাশও তাঁর কাকা কোথায় চলে গিয়েছে তার খোঁজ নেয়। বাড়িতে আসা সাংবাদিকদের আকাশ প্রশ্ন করে, ‘কাকু, তুমি সংবাদমাধ্যমে রয়েছো, তাহলে তুমি অবশ্যই জানবে আমার কাকা কোথায় রয়েছে।' না, কোনও উত্তর দিতে পারেননি সাংবাদিকরা এই শিশুর প্রশ্নের।
মনহাসের স্ত্রীকে ফোন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির
মনহাসের অপহরণের খবর চাউর হতেই চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন আত্মীয়রা মনহাসের বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করে। পরিবারের একটি বিয়েতে মনহাসের যোগ দেওয়ার কথা ছিল এবং তিনি ১৫ এপ্রিল বাড়ি ফিরবেন বলেও জানিয়েছিলেন। নিখোঁজ জওয়ানের স্ত্রী মীনু মনহাস বলেন, ‘পাঁচদিন আগে, আমি ফোনে স্বামীর সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমায় জানিয়েছিলেন যে তিনি কোনও অপারেশনে যাচ্ছেন এবং ফিরে এসে আমায ফোন করবেন। আমি যখন টিভিতে এই সংঘর্ষের খবর পাই, তখন আমি ভয় পেয়ে যাই এবং ক্রমাগত স্বামীর নম্বরে ফোন করতে থাকি।' বহুবার স্বামীর নম্বরে ফোন করে কোনও সাড়া না পেয়ে মীনু এরপর মনহাসের এক সহকর্মীকে ফোন করেন, যিনি মীনুকে জানান যে সংঘর্ষের পর থেকেই তাঁর স্বামী নিখোঁজ রয়েছেন। মীনু এও জানান যে তাঁর পরিবার আরও হতবাক হয়ে যায় সোমবার দুপুরে তিনি এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির ফোন পান, যিনি নিজেকে বিজাপুরের স্থানীয় সাংবাদিক বলে দাবি করেন। তিনি মনহাসের স্ত্রীকে জানান যে তাঁর স্বামীর মুক্তির জন্য তিনি যেন ভিডিও করে মাওবাদীদের কাছে আবেদন জানান। মীনু বলেন, ‘ওই ব্যক্তি আমায় জানায় যে মাওবাদীরা আমার স্বামীকে অপহরণ করেছে আর তাই আমার ভিডিও মেসেজ রেকর্ড করা উচিত, যেখানে আমার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার আবেদন করব। আমি সেই আবেদন পাঠাই, কিন্তু আমি খুব অবাক হয়েছি যে কেউ বিজাপুরে বসে আমার নম্বর কীভাবে পেল। এটার তদন্ত হওয়া দরকার।'
বাবার জন্য কেঁদে চলেছে পাঁচ বছরের মেয়ে
মীনু খুবই আশাবাদী যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত আহ তাঁর স্বামীকে নিরাপদের সঙ্গে ফিরিয়ে আনার নিশ্চয়তা দেবেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী উইং কম্যান্ডার অভিনন্দকে নিরাপদে ফিরিয়ে এনেছিলেন পাকিস্তান থেকে এবং আমি আশাবাদী যে আমার স্বামীকেও সুরক্ষিতভাবে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেবেন তিনি।' মীনু জানিয়েছেন যে তাঁর মেয়ে প্রকৃত অর্থে কী হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারেনি এবং অনবরত তার বাবার জন্য কেঁদে চলেছে।
মায়ের আর্তি
মনহাসের ৭৫ বছরের মা, কুন্তি দেবীও আশাবাদী যে সরকার মাওবাদীদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে তাঁর ছেলেকে ফিরিয়ে আনবে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীও সিআরপিএফে ছিলেন এবং নিজের জীবন দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। আমার ছেলেও তাঁর বাবাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সিআরপিএফে যোগ দেয়। আমরা আশাবাদী যে সরকার মাওবাদীদের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে একটি সুযোগও ছাড়বে না এবং আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনবে।'
সিআরপিএফের আশ্বাস
এদিকে, সিআরপিএফ তাদের কর্মীদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের আশ্বাস দিয়েছে এবং নিখোঁজদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত করতে কেন্দ্র সরকার কোনও প্রকার গাফিলতি করবে না। জম্মুর সিআরপিএফ হেডকোয়ার্টারের কম্যান্ডান্ট পিসি গুপ্তা বলেন, ‘আমি এখানে এসছি এই পরিবারকে আশ্বস্ত করতে যে গোটা সিআরপিএফ ও কেন্দ্র সরকার এই পরিবারের পাশে রয়েছে, আমরা এই অপারেশনে আমাদের সাহসী জওয়ানদের হারিয়েছি কিন্তু আমরা এই পরিবারকে আশ্বাস দিচ্ছি যে তাদের ছেলে শীঘ্রই ফিরে আসবে।'