মন বলছে বিজেপি জিতবে, যুক্তি বলছে তৃণমূল

গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই বেশ জোরালো একটা বিজেপি হাওয়া উঠেছিল। তার কারণ, ঠিক আগের বিধানসভা নির্বাচনের হিসেবে তৃণমূলের ভোট কমেনি বরং কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু বিজেপির ভোট হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল দ্বিগুণেরও বেশি। এর পুরোটাই প্রায় বামপন্থী ভোট। তাছাড়া তৃণমূলের অন্তর্কলহ কাজ করেছে কিছুটা। ফলে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি করায়ত্ত করতে পেরেছিল আঠারোটি লোকসভা আসন, সাংসদ। এরাজ্যে সংগঠনের তেমন জোর না থাকলেও দিল্লির বিজেপি হাইকমান্ডের মনে হয়েছিল তাদের বিরোধী প্রবলতম কাঁটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উৎখাত করার একটা সুযোগ তাওয়া গরম থাকতে থাকতেই নিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া এই ভোটের পর তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে গিয়েছিল। দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ করে তুলতে মমতা কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছিলেন। এবং ঠিক করেই ফেলেছিলেন বিধানসভা নির্বাচনে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের অনেককেই বাদ দিয়ে দেবেন। বিজেপি সেই সুযোগটা নিয়ে দলের দরজা হাট করে খুলে দিয়েছিল তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের জন্য। তাতে হাওয়ার জোর আর একটু বেড়ে গিয়েছিল। প্রথম দু'দফায় ৬০টা আসনের ভোট হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার হল তৃতীয় দফার নির্বাচন। ৩১টি আসনে। তিন দফায় ৯১টা আসনে নির্বাচন হয়ে গেল। প্রথম দু' দফার নির্বাচন যে এলাকায় হয়েছে সেখানে বিজেপির প্রভাব ছিল কিছুটা বেশি। কারণ তার অনেকটাই শুভেন্দুর গড়। চলতি প্রবাদ অনুযায়ী নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য শুভেন্দু তৃণমূলের বিরুদ্ধে যা নয় তাই বলেছেন উচ্চকণ্ঠে। তা সত্ত্বেও এই তিন দফার নির্বাচনে বিজেপি খুব বেশি হলে ৩০-৩২টি আসন পেতে পারে। এরপর বাকি পাঁচ দফায় উত্তরবঙ্গ আর দক্ষিণবঙ্গের দু'-একটি পকেট ছাড়া কোথাও বিজেপি হাওয়ার তেমন জোর নেই।

উন্নয়ন এবং জনমুখী প্রকল্পই এগিয়ে রেখেছে তৃণমূলকে

মঙ্গলবার ভোট হল হাওড়া ও হুগলির গ্রামীণ এলাকায় এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ষোলোটি আসনে। এইসব এলাকার বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে মনে হল বিজেপি হওয়ার তেমন প্রভাব নেই। যা প্রভাব আছে তাতে তারা অল্প কয়েকটা সিট পেলেও পেতে পারে। কিন্তু সরকার গড়ার মতো গরিষ্ঠতা জোগাড় করার আভাস মিলবে না। এই সব এলাকায় কারও সঙ্গে কথা বলতে গেলে প্রথমেই তাঁরা বলছেন এবার বিজেপির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে তৃণমূলের। কিন্তু যখনই জানতে চাইছি কোন আসনে কী ভাবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, তখন কিন্তু তাঁরা যুক্তি দিয়ে আর বলতে পারছেন না। বরং তাঁদের কথাবার্তায় যা বেরিয়ে আসছে তা হল : এক, উন্নয়নের কাজ বেশ ভালোই হয়েছে। দুই, এই সরকারের আমলে সকলেই কমবেশি জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে। আর তিন, মহিলারা বেশিরভাগই মমতার পক্ষে! তাহলে আর হাড্ডাহাড্ডি কোথায়? সবই তো তৃণমূলের পক্ষে। বিপক্ষে কী? মমতার সরকার অপদার্থ। এরাজ্যে শিল্প হয়নি। ছেলে মেয়েদের চাকরি নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা মমতা মুসলমানদের খুব মাথায় তুলে রেখেছে। তাদের জন্য সব কিছুতেই ছাড়, সব জায়গায় বাড়তি সুবিধা। বিজেপি এগুলো বলছে। জোর গলায় খোলাখুলি বলছে। তাতেই অনেকে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। তার ফলে এদিক-ওদিক থেকে দু-চারটে সিট বিজেপির মিলে গেলেও যেতে পারে।

লোকের অভাবে বিজেপিকে বাতিল করতে হচ্ছে হেভিওয়েট সভা

বিভিন্ন জেলায় ঘুরে দেখলাম মাঠে নেমে লড়ার মতো কর্মীর খুবই অভাব বিজেপিতে। যে কারণে ছোটখাটো মিছিল বা সভা করার উদ্যোগ তারা নিচ্ছে না। হেভিওয়েটদের সভা আর রোড শো-র ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে প্রথম দিকে এই সমস্ত রোড শো বা সভায় যেটুকু লোকজন আসছিল এখন আর তাও আসছে না। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ বা বিজেপির তা বড় নেতারা এত ঘনঘন এখানে আসছেন যে তাঁদের দেখার বা তাঁদের কথা শোনার আর কোনও আকর্ষণই থাকছে না। মাঠ সাজিয়ে বসে থাকলেও লোক আসছে না। ফাঁকা চেয়ার হাওয়া খাচ্ছে। তার কারণে নানা অজুহাতে হেভিওয়েট নেতাদের সভা বাতিল করতে হচ্ছে।

বিজেপি না তৃণমূল, কে জিতবে?

সোমবার এক ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। কলকাতায় কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় কাজ করেন। পূর্ব মেদিনীপুরের লোক। ভোট দিতে দেশের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি ভোটের আগে বেশ জোর দিয়েই বলছিলেন, এবার সব পদ্ম। সবাই পদ্ম চিহ্নে ভোট দেবে। ভোট দিয়ে ফিরে আসার পর তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, সবাই পদ্ম চিহ্নে ভোট দিল? তিনি উত্তর দিলেন ময়নায় মনে হচ্ছে অশোক দিন্দাই জিতবে। ক্রিকেটার অশোক দিন্দা। এবার ময়না কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী। বুঝলাম ভদ্রলোক ময়নার ভোটার। আবার জিজ্ঞেস করলাম, তার মানে পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপি ভালোই রেজাল্ট করবে তাই না? এই কথা নিয়ে তার মধ্যে আলোচনার কোনও উৎসাহ দেখলাম না। বললেন, ময়নায় অশোক দিন্দা জিততে পারে। তবে এবার মহিলারা অনেক ভোট দিয়েছে। তাদের বেশিরভাগই তৃণমূলকে ভোট দেবে। তাছাড়া স্বাস্থ্যসাথী কার্ডটার জন্যেও লোকে মমতাকে ভোট দেবে। তারপরও বলছেন বিজেপি জিতবে? তিনি বললেন, মন তো বলছে বিজেপি জিতবে। দেখা যাক কী হয়!

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় টানা তিন বার মাইক বন্ধ

সংখ্যালঘুদের প্রতি আবেদনে ভঙ্গ হয়েছে আচরণবিধি, কমিশনের কড়া নোটিশ মমতাকে

More WEST BENGAL ASSEMBLY ELECTION 2021 News