অসমের রাজনৈতিক ভাগ্য এখন বোড়োল্যান্ডের জখম 'রাজা'র হাতে?

২০১৬ সালে কংগ্রেসের ১৫ বছরের রাজত্বকে শেষ করে প্রথমবারের মতো অসমে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি। সেই জয়ের নেপথ্যে কংগ্রেস ত্যাগী হিমন্ত বিশ্বশর্মার অবদান যতটা ছিল, তার থেকে কোনও অংশে কম ছিল না হাগরামা মহিলারির। নির্বাচনের আগে এনডিএ ছেড়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়ে এমনটাই দাবি করেছিল বোড়োল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট। আর এই নির্বাচনে যদি কোনও ভাবে বিজেপি ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে না পারে, তাহলে রাজ্যের কিংমেকার হতে পারেন রাজনৈতিক ভাবে জখম মহিলারি।

সুর চড়াতে শুরু করে বিপিএফ

মহাজোটে গিয়েই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করে বিপিএফ নেতৃত্ব। কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েই বিপিএফ-এর দাবি ছিল, অসম নির্বাচনে বিজেপি কম করে ২৫-৩০টি আসনে মুখ থুবড়ে পড়বে যা গত নির্বাচনে তাদের ঝুলিতে গিয়েছিল। বিপিএফ-এর শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, ২০১৬ সালে বিপিএফ-এর সাহায্যেই সরকার গড়েছিল বিজেপি। তবে এবার সমীকরণটা পাল্টে যাবে।

ফোকাসে বোড়োল্যান্ড

উল্লেখ্য, অসমের তৃতীয় এবং অন্তিম দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার। অসমের ১২টি জেলার বিভিন্ন আসনে এই পর্বে ভোটগ্রহণ হবে। মূলত লোয়ার অসম এবং বোড়োল্যান্ডের আসনগুলিতে নির্বাচন হতে চলেছে আগামীকাল। এই এলাকাতেই বহু বছর ধরে একছত্র আধিপত্য দেখিয়ে এসেছেন মহিলারি এবং তাঁর দল।

তৃতীয় দফায় কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন বিজেপি

গত দুই দফার নির্বাচনে নিজেদের জয়ের দাবি জানিয়ে বিজেপি, কংগ্রেস উভয় পক্ষই। এই আবহে দুই পক্ষের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে এই অন্তিম দফার নির্বাচন। অন্তিম দফার নির্বাচন যে বিজেপির জন্যে চ্যালেঞ্জের হতে চলেছে, তা মেনে নিয়েছেন বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা নিজে। এর জেরে যদি অসমে বিজেপি ম্যাজিক ফিগার না ছুঁতে পারে, তাহলে কিংমেকার হবেন মহিলারি।

হিমন্ত-মহিলারি ফোনালাপ

সূত্রের খবর, জোট ভাঙলেও গত কয়েকমাস ধরে বহুবার ফোনে কথা হয়েছে হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং মহিলারির। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বোড়োল্যান্ড অঞ্চলের ১২টি বিধানসভা আসনেই জিতেছিল বিপিএফ। তবে সেই ফলাফল এবার তাদের পক্ষে ধরে রাখা যে কঠিন হবে, তার ইঙ্গিত মিলেছিল ২০২০ সালের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হওয়া স্থানীয় নির্বাচনেই। সেই নির্বাচনে ৪০টি কাউন্সিল আসনের মধ্যে বিপিএফ জিতেছিল মাত্র ১৭টি। বিজেপি ৯টি আসনে জিতেছিল।

হারের বদলা নিতে বদ্ধপরিকর মহিলারি

বোড়োল্যান্ডের নির্বাচনে বিপিএফ-এর সঙ্গ না পেলেও নতুন জোট গড়ে মাধ্যমে বাজিমাত করেছিল বিজেপি। নির্বাচন পরবর্তী জোট গঠনের মাধ্যমে বোড়োল্যান্ডে ইউনাইটেড পিপলস পার্টি লিবেরালের সঙ্গে কাউন্সিল গঠন করে বিজেপি। এর জেরে বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনসট্রেশন প্রথমবার হাতছাড়া হয় বিপিএফ-এর। এবার বিজেপিকে হারিয়ে সেই হারের বদলা নিতে বদ্ধপরিকর মহিলারি।

কিংমেকার মহিলারি

প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক ময়দানে নামার আগে মহিলারি একজন বিচ্ছিনতাবাদী নেতা ছিলেন। বোড়োল্যান্ড লিবারেশন টাইগারের প্রধান ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে মূল স্রোতে ফিরে বিপিএফ গঠন করেন তিনি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে এখনও বেআইনি অস্ত্রের কারবারের অভিযোগ রয়েছে। এই আবহে গত কয়েকদিন ধরে মহিলারিকে আক্রমণ শানিয়েছেন হিমন্ত। এর জেরে প্রচার থেকে নিষিদ্ধও হতে হয়েছিল তাঁকে। তবে অসমের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে অনেক বিশেষজ্ঞরই মত, শেষ পর্যন্ত সেরাজ্যে কিংমেকার হতে পারেন মহিলারি।

More ASSAM News