সঞ্চিতা পাল, ঢাকা: (বিবাহসূত্রে বাংলাদেশের রাজধানীতে শ্বশুরবাড়ি। নিজের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে। লকডাউনের মুহূর্ত দু’বার দেখছেন। ফের বাংলাদেশ স্তব্ধ। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশেই দ্বিতীয়বার সম্পূর্ণ লকডাউন শুরু হলো)

করোনা প্রতিরোধে জানুয়ারিতে টিকা দেওয়া শুরু হয় বাংলাদেশে। ধারণা করা হয়েছিলো, গত বছরের মতো পরিস্থিতি দেখা দেবে না। কিন্তু মার্চের শেষ সপ্তাহে বাড়তে থাকে করোনা আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। পরিস্থিতি এমন হয়, ১৮ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হতে থাকে।

করোনার কারণে গত এক বছরে এমনিতেই ঘরের বাইরে বেরিয়েছি খুবই কম। সর্বোচ্চ প্রয়োজনে বেরিয়েছি। প্রায় বন্দি থেকে করোনাকে দূরে রাখতে সফলও হয়েছি। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন সড়ক নির্মাণকাজের জন্য ধুলোময় ঢাকায় সামান্য সর্দি-কাশি-জ্বরও কাবু করতে পারেনি।

এই এক বছরে হাওড়ায় নিজের বাড়িতে যাইনি। টেলিফোনে শুধু কথাই হয়েছে। ঘরে বসে থেকে একেবারেই হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। তাই পরিবার নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ঘুরে আসার পরিকল্পনা করেছিলাম গত মার্চে। ঠিক হয়েছিলো, ৬ই এপ্রিল কক্সবাজার যাবো নভোএয়ার-এ। উঠবো রয়্যাল টিউলিপ হোটেলে। ওদের নিরিবিলি সৈকতে ঘুরে দুই রাত থেকে ৮ই এপ্রিল ওই একই এয়ারলাইন্সে ঢাকা ফিরবো। কিন্তু হঠৎ করে লকডাউন সব পরিকল্পনা লন্ডভন্ড করে দিলো। ৫ই এপ্রিল থেকে ১১ই এপ্রিল, প্রাথমিক ভাবে সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা হয়েছে বাংলাদেশে। এ সময়ে বাস, ট্রেন, বিমানসহ গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। বাইরে বের হওয়া যাবে বিশেষ শর্তে।

‘শর্তে’ বন্দী জীবন। গত বছর মার্চে যখন এদেশে প্রথম করোনা হানা দেয়, তখন বিশেষজ্ঞদের যুক্তি দিয়ে গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছিলো; শীতে করোনার প্রকোপ আরো বাড়বে। আর গরমে প্রায় কমে আসবে। সেই মতো এখানকার মানুষজন প্রস্তুতি নিতে থাকে। শীতে করোনা রোগীর সংখ্যা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে ছিলো। একারণে বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে স্থাপিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আইসোলেশন সেন্টার গুটিয়ে ফেলা হয়। শীত চলে যেতেই পুরো দেশটা যেন একসঙ্গে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বিয়েসহ সব ধরণের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন হতে থাকে।

ঢাকায় আমাদের বাড়ির নিচের তিনটি ফ্লোর কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রথম দফার লকডাউন উঠে যাবার পর সেখানে প্রায় প্রতিদিনই গড়ে একটি করে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় বিনোদন কেন্দ্রগুলো উপচে পড়ে মানুষের ভিড়। রাস্তাঘাটে মানুষ মাস্ক ছাড়াই বের হতে শুরু করে। মোটকথা, গরমে করোনা চলে গেছে-এই বিশ্বাস দৃঢ় হতে থাকে এখানকার মানুষের মধ্যে। এই সময়ে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে যাওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো। শিক্ষামন্ত্রীও দিনক্ষণ ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই পুরো এক বছর ঘরে বসে অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে কখনও দুপুর পর্যন্ত, কখনও দুপুরের পর পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। স্কুল খোলার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় একটু খুশির নিঃশ্বাস ফেলেছিলাম। কিন্তু করোনা বেড়ে যাওয়ায় অনলাইন ক্লাস থেকে মুক্তি মিললো না।

গরমকালে মানুষের সচেতনতা যত কমেছে, করোনা আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা তত বেড়েছে। গত বছর করোনা রোগী শনাক্তের পর প্রথম যখন একজন মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, সেদিন আতংকে মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হয়নি। শহরের রাস্তাঘাট একেবারে ফাঁকা। ঠিক যেনো হলিউড সিনেমায় দেখা কোনো ভুতুড়ে শহর। এই এক বছরে চিত্র একেবারে পাল্টে গেছে। এবার করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড প্রতিদিনই ভাঙ্গছে। এখন প্রতিদিন গড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে ৫৫ জনের ওপরে। কিন্তু মানুষ নির্বিকার।

টেলিভিশনের খবরে দেখা যায়, রাস্তায় বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক ছাড়াই ঘুরছে। আর যারা পরেছে, তাদেরটা রয়েছে থুতনির নিচে। সচেতনতার অভাব সর্বত্র। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আবার সব শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

করোনা পরিস্থিতির জন্য থিয়েটার জগতের অবস্থা কঠিন। আগামীর জন্য পরিকল্পনাটাই বা কী? জানাবেন মাসুম রেজা ও তূর্ণা দাশ।