সুমন ভট্টাচার্য : প্রেমে পড়া বারণ। তখনও এই গানটা লেখা হয়নি, তাই অহরহ আমাদের চারপাশের লোকজন প্রেমে পড়তেন। আর কি আশ্চর্য, প্রেমে পড়লেই কতজন যে আমাকে ‘পিটারক্যাট’-এ খাওয়াতে নিয়ে যেতেন! আমার এক নিকট আত্মীয় তখন গড়িয়াহাটের এক মহিলার প্র্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তাই রাত হলেই আমাকে সঙ্গে নিয়ে চলে যেতেন ‘পিটারক্যাট’এ। তিনি যখন তাঁর প্রেম, বিরহের কথা বলতে বলতে বলতে পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিতেন, আমি তখন মন দিয়ে নান আর চিকেন ভর্তা খেতাম।

লিখলেন– সুমন ভট্টাচার্য

 

এটা প্রায় তিরিশ বছর আগের কথা। তখনও পার্ক স্ট্রিটের এই রেস্তোরাঁ কলকাতার ‘ফুড ম্যাপে’ এতটা ‘আইকন’ হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আটের দশকের শেষ থেকে পরের কুড়ি বছর যে কতজনের প্রেমের গল্প শুনতে পিটারক্যাটে গিয়েছি, আর মন দিয়ে চিকেন ভর্তা বা বিভিন্ন ধরনের ‘সিজলার’ খেয়েছি, তা গুনে শেষ করতে পারব না। অন্যের প্রেম যখন উষ্ণতা ছড়াচ্ছে, মানে, তাঁর গল্প বা টুকরো আলতো কথায়, তখন পিটারক্যাটের ভিতরে আলো আধারিতে আমার ‘সিজলারে’ ধোঁয়া উঠেছে।

প্র্রেমে পড়ে গেলাম। মানে এইভাবে যেতে যেতে আর অন্যের প্রেমের গল্প শুনতে শুনতে কবে যেন আমিও পার্ক স্ট্রিটের পিটারক্যাটের প্রেমে পড়ে গেলাম। এমনিতেই সাহেবী পাড়া বলে পরিচিত পার্ক স্ট্রিটে তো আর ‘ফুড ইটারি’র কমতি নেই। আর তারমধ্যে অনেকগুলোই যেমনই ‘আইকনিক’, তেমনই খাবারের দিক থেকেও বিখ্যাত। কিন্তু কিভাবে যেন পিটারক্যাট হয়ে উঠল মধ্যবিত্ত বাঙালির অভিজাত হয়ে ওঠার চেষ্টার সেরা ঠিকানা। এই করোনা কালের পর পিটারক্যাট বিধি মানতে অনেক বদল এনেছে। ঢোকার মুখে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র, তো ভিতরে দুই টেবিলের মাঝে কাঁচের দেওয়াল। কিন্তু যেটা বদলায়নি সেটা একটা আলো আধারিতে ঘেরা শুধু রমনীয় পরিবেশ নয়, অসাধারণ খাবার পরিবেশনের এত বছরের ঐতিহ্য।

আমাদের সঙ্গে, মানে আমরা যারা পঞ্চাশের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, তাদের সঙ্গে পিটারক্যাটের যখন প্রথম পরিচয়, তখনও পার্ক স্ট্রিটের এই রেস্তোরাঁ এত ‘আইকনিক’ হয়ে ওঠেনি, খোদ রাহুল গান্ধী কলকাতায় এসে পিটারক্যাটের চেলো কাবাব খেয়ে দেশ জুড়ে চর্চার কেন্দ্রে নিয়ে যাননি। কিন্তু আমাদের বয়সের প্রায় সমান সমান পিটারক্যাট ধীরে ধীরে নিজের যে ‘ব্র্যান্ড ইক্যুইটি’ বা সুনাম অর্জন করেছে, তাই আজও এই রেস্তোরাঁর প্রধান ফিক্সড ডিপোজিট। রাহুল গান্ধী এসে এবং চেলো কাবাব চেখে হয়তো পিটারক্যাটকে সর্বভারতীয় চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে গেলেন, কিন্তু তার আগে থেকেই কিন্তু পিটারক্যাটের এই ‘ইরানীয় ডিস’ নিয়ে কলকাতার খাদ্যরসিকদের উচ্ছ্বাসের অন্ত ছিল না। ‘মার্কিনী ফার্স্ট ফুড’গুলোর কল্যানে যখনও অবধি আমরা কম্বো মিল জানি না, তখন থেকেই পিটারক্যাটের চেলো কাবাবের ডিস আসলেই একটা ‘কম্বো প্যাক’। কাবাব আছে, ডিম আছে, সব্জি আছে, আর আছে মাখন লাগানো ভাত। ঠিক তেহেরানের কোনও রেস্তোরাঁয় এই ‘ইরানীয় ডিস’কে

যেভাবে পরিবেশন করা হয়, পিটারক্যাটের হয়তো তার রকমফের আছে। কিন্তু এই যে এত কিছুর সমাহার, তাতে মুগ্ধ না হয়ে বাঙালি খাদ্যরসিক যাবেন কোথায়?

পিটারক্যাট নামক রেস্তোরাঁর আস্তিনে অবশ্য শুধু চেলো কাবাবের মতো ‘গুগলি’ নেই। শেন ওয়ার্নের মতো অনেক ‘স্লোয়ার ডেলিভারি’ও আছে। যেখানে বল দেরিতে ভেঙে এমনভাবে উইকেট তুলে নিয়ে যাবে, যে খাদ্যরসিকদেরও খেয়াল থাকবে না। যেমন ধরা যাক মাটনের বিভিন্ন ডিস। এমন তুলতুলে করে রান্না করা মাটন, যে জিভে জল আসবেই। তার উপর আগেই বলেছি বিভিন্ন ধরনের সিজলার পিটারক্যাটের তুণে রয়েছে। চিকেন, ফিস, মাটন সিজলারের পাশাপাশি বড় আকর্ষণ স্পেশাল ননভেজ সিজলার, যাতে একই পাত্রে রয়েছে মাটন, চিকেন, চিংড়ি, ডিম এবং হরেক রকমের সব্জি।

জার্মানির বিখ্যাত সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাস যেমন চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউের একটি পানশালায় খেয়ে এবং আড্ডা দিয়ে বিখ্যাত করে দিয়েছিলেন, তেমনই রসিকজনদের পান-ভোজনের জন্য পিটারক্যাটের খ্যাতি কম নয়। ‘পান’ এর জন্য সব আয়োজন পার্ক স্ট্রিটের এই রেস্তোরাঁয় যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে দারুন সব স্টার্টার। পিটারক্যাটের ব্যাটিং অর্ডারে ওপেনিংয়ে যদি এইসব থাকে, তাহলে মিডল অর্ডারে তো সিজলার থেকে চেলো কাবাবের মতো দুরন্ত সব ব্যাটসম্যান রয়েইছে। আর একেবারে শেষ পাতে যে সব মিষ্টি কিংবা আইসক্রিম রয়েছে, সেগুলো মারকাটারি।

এই ভোটের আবহে যখন চারপাশে উত্তাপ বাড়ছে, তখন পার্ক স্ট্রিটের এই রেস্তোরাঁয় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ঢুকে পড়লে মন্দ কি।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

করোনা পরিস্থিতির জন্য থিয়েটার জগতের অবস্থা কঠিন। আগামীর জন্য পরিকল্পনাটাই বা কী? জানাবেন মাসুম রেজা ও তূর্ণা দাশ।