নিরুত্তাপ গম্ভীর
গৌতম গম্ভীর বলেন, বিশ্বকাপ জয় অন্তত আমার একেবারেই মনে হচ্ছে না যেন গতকালের ঘটনা। দশ বছর হয়ে গেল। আমি খুব বেশি অতীতকে আঁকড়ে থাকতে ভালোবাসি না। অবশ্যই বিশ্বকাপ জেতা গৌরবের মুহূর্ত ছিল। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটকে সামনের দিকে তাকাতে হবে। যত দ্রুত আমরা পরের বিশ্বকাপ জিততে পারি সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমি রান করব এটা দলের প্রত্যাশা ছিল, আমি ৯৭ করেছি। জাহির উইকেট নেবে সেটা দলের প্রত্যাশা ছিল, জাহির উইকেট পেয়েছে। অর্থাৎ আমরা সকলেই নিজেদের দায়িত্বটুকুই পালন করেছি।
কর্তব্য পালন
২০১১ বিশ্বকাপে সকলে তাঁদের থেকে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্সই করেছেন বলে দাবি গম্ভীরের। ২০০৭ টি ২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী গম্ভীর বলেন, আমাদের যা করা কাম্য ছিল সেটাই সকলে করেছে। বিশ্বকাপ জেতার কথা মাথায় রেখেই আমাদের দলে রাখা হয়েছিল। আমরা শুধু অংশ নিতে বিশ্বকাপে যাইনি, জিততে গিয়েছিলাম। তাই সেই আবেগে এখনও ভাসব সেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা একস্ট্রা অর্ডিনারি কিছু করিনি। হ্যাঁ, আমরা দেশকে গর্বিত করতে পেরেছি, মানুষ আনন্দ পেয়েছেন। তবে সে সব ভুলে এখন সামনের বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবতে হবে। অতীত নিয়ে খুব বেশি ভাবার ফলেই দলে বিশ্বমানের এতো ক্রিকেটার থাকা সত্ত্বেও ভারত বিশ্বকাপ জয় থেকে দূরে থাকছে বলে মনে করেন গৌতম গম্ভীর। তিনি বলেন, যদি আমরা ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপ জিততে পারতাম তাহলে আমাদের বিশ্বে সুপারপাওয়ার বলে গণ্য করা হতো। দশ বছরে আমরা আর বিশ্বকাপ জিততে পারিনি। তাই ওহ্ কী অসাধারণ কৃতিত্ব- এমন গোছের কোনও ভাবনা আমার মাথায় আসে না।
অতীত আঁকড়ে নয়
গৌতম গম্ভীর বলেছেন, আমি বুঝতে পারি না কেন এখনও সকলে ১৯৮৩ আর ২০১১ বিশ্বকাপ নিয়ে এতো বেশি কথা বলেন! আমরা বিশ্বকাপ জিতেছি ভালো কথা, এটা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। তবে পিছনে না তাকিয়ে সামনে তাকানোই উচিত। যত আমরা অতীত আঁকড়ে থাকব, তত সামনে এগোতে অসুবিধা হবে। গম্ভীর মনে করেন, দলে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হিতে বিপরীত হতে পারে। একটা জায়গার জন্য চার-পাঁচজন তৈরি রাখা যেতেই পারে। তবে তাতে অনেক যদি, কিন্তু সামনে আসে। দলে জায়গা পেতে প্রতিযোগিতা যেমন হয়, তেমনই দ্রুত জায়গা হারানোর আশঙ্কাও থাকে ক্রিকেটারদের মনে। তাই বিশ্বকাপের অন্তত মাস ছয়েক আগে থেকে ১৫-১৬ জনকে বাছাই করে দল গড়লেই সাফল্য আসতে পারে। এতে ক্রিকেটারদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়াও গড়ে ওঠে। তাতে দলের সাফল্য পেতে সুবিধা হয়। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ যত দল বেশিবার বিশ্বকাপ জিতেছে দেখা যাবে মাস ছয়েক ধরে একই দল ধরে রাখা হয়েছে বিশ্বকাপের আগে থেকে। ২০১১ বিশ্বকাপে কোন দল খেলবে তা বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই সকলে বুঝতে পেরেছিলেন। সেটাই জরুরি।
উত্তর অজানা
ওপেনিংয়ে তিনি ভালো খেলা সত্ত্বেও বীরেন্দ্র শেহওয়াগ ও সচিন তেন্ডুলকরকেই ওপেন করতে দেখা গিয়েছে বিশ্বকাপে। তিনি তিনে নেমেছেন। তবে এজন্য কোনও আক্ষেপ নেই। গম্ভীরের সাফ কথা, প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়া বড় কথা। আর সেই সুযোগ পেলে যে কোনও জায়গায় খেলার জন্য তৈরি থাকতে হবে। এখন অনেকে বলে আমি ওপেন করতে বা চার-পাঁচে ব্যাট করতে ভালোবাসি, এ সব হাস্যকর। প্রথম একাদশে এলে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই খেলতে হবে। তবে একটা প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা গম্ভীরের কাছে। বিশ্বকাপজয়ী দলটাকে পরে ধরে রাখা হয়নি। গম্ভীর বলেন, এটা আমাকে হরভজনও বলেছিল। তবে এটা কেন হয়েছিল তার উত্তর দিতে পারবেন ডানকান ফ্লেচার, মহেন্দ্র সিং ধোনি আর নির্বাচকরাই। তবে সেটা একেবারেই ভালো হয়নি। বিশ্বে এমন নজির নেই যেখানে বিশ্বকাপ জেতা দলের প্রথম একাদশে থাকা ক্রিকেটাররা পরে একসঙ্গে আর কোনও ম্যাচ খেলেননি!