সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : ট্র্যাজিক কুইন বললে একটুও ভুল হয় না। জন্ম থেকে শুরু করে নামকরণ হয়ে বিবাহ জীবন থেকে অল্প বয়সেই মৃত্যু। তিনি ট্র্যাজিক কুইন। মিনা কুমারী।
বাবা আলী বক্সের যখন মেয়ের জন্ম দেন নাম রাখেন মেহজবিন, অর্থ চাঁদের মতো কপাল, আদতে যা ছিল না। বাবা নিজের উপর নিজেই বীতশ্রদ্ধ ছিলেন ফের মেয়ের জন্ম দিয়ে। কন্যাকে রেখে এসেছিলেন অনাথ আশ্রমের দরজায়। পরে ভাবেন কাজটা ভালো হচ্ছে না, নিজেই ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। নাম রাখেন মেহজবিন। এই ফিরিয়ে নিয়ে আসাই ভাগ্য ঘুরিয়ে দেয় আলি বক্সের। বাবা থিয়েটারে হারমোনিয়াম বাজাতেন, মা ছিলেন ইকবাল বানু। মাত্র চার বছর বয়সেই মেহজবিনের স্টুডিয়ো পাড়ায় প্রবেশ মেহজবিনের। প্রকাশ স্টুডিয়োর মালিক বিজয় ভট্ট চান্স দিলেন সিনেমা ‘ফরজান এ হিন্দ’ বা ‘লেদার ফেস’-এ। মেয়ের পারিশ্রমিক পঁচিশ টাকা। ১৯৩৯ সালে ‘লেদার ফেস’ দিয়ে শুরু মেহজবিনের অভিনয়-পথ। পরপর এলো ‘অধুরি কহানি’, ‘পূজা’, ‘নয়ি রোশনি’।
পড়াশোনায় ঝোঁক থাকলেও পরিবারের আর্থিক অনটনে আর তা করা হয়ে ওঠেনি। ‘এক হি ভুল’ সিনেমায় বিজয় ভট্ট ‘মেহজবিন’ নাম বদলে নাম রাখলেন ‘বেবি মীনা’। তখনকার দিনে ছবি হিট হওয়ার পেছনে স্ক্রিন নেমের একটা মাহাত্য আছে এরম একটা ধারনা ছিল, অনেকটা যাত্রা পালার মতো। শিশু শিল্পী হিসেবে আরও কিছু ছবি করার পরে কিদার শর্মা, হোমি ওয়াদিয়ার মতো ছবিওয়ালাদেরও নজরে পড়েন। বেবি মীনা ‘মীনা কুমারী’ নাম নিয়ে তেরো বছর বয়সেই নায়িকার ভূমিকায় নামেন। সিনেমার নাম ‘বচ্চোঁ কা খেল’।
ষোলো বছর বয়সে বীর ঘটোৎকচ, ‘শ্রী গণেশ মহিমা’, ‘আলাদিন অউর জাদুই চিরাগ’ ধরনের ছবিতে অভিনয় করে পরিবারের সাচ্ছল্য ফিরিয়ে আনেন মীনা। মাঝে মা মারা গেলেন। বাবা মেয়ের স্বাধীনতার রাশ শক্ত করেন। কিন্তু একটু বেশিই চাপ দিয়েছিলেন। বাবার রাশ থেকে বেরিয়ে বিয়ে করেন পরিচালক কামালকে। সেখানেও আসতে শুরু করে হাজারও বাধা। সেই জাল ছিঁড়ে বেরোতে গিয়ে ধর্মেন্দ্র থেকে শুরু করে বহু উঠতি নায়কের সঙ্গে নাম জড়ায় তাঁর। কিন্তু অভিনয়ের ধার বাড়ে বই কমেনি।
পঞ্চাশ-ষাটের দশকে মীনাকুমারী সবাইকে ছাপিয়ে সফলতম ও ব্যস্ততম অভিনেত্রী হয়ে উঠেছিলেন , যদিও সেই সময় তাঁর প্রতিদ্বন্ধির অভাবও ছিল না। কিন্তু সবাইকে সরিয়ে নিজের একটা আলাদা ঘরানা তৈরি করেছিলেন তিনি ‘পরিণীতা’, ‘ফুটপাথ’, ‘এক হি রাস্তা’, ‘শারদা’, ‘ইহুদি’ প্রভৃতি সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে কখনো দুঃখিনী যুবতী, কখনো বাল্যবিধবা, কখনোবা বৃদ্ধস্য তরুণী হিসাবে দুরন্ত অভিনয় করতে শুরু করেন। অভিনয়ের খ্যাতি পরিচালক স্বামীর খ্যাতিকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল। অভিনয়ের সঙ্গে মীনা কুমারী কবিতাও লিখতেন। ছদ্মনাম ছিল নাজ। ঊঠতি গীতিকার গুলজ়ারের সঙ্গে তিনি কাব্যচর্চায় অনেক সময় কাটাতেন। এদিকে সঙ্গে সঙ্গে চলছে বিতর্কও।
কামাল মীনা কুমারীকে অমর করার জন্য তিল তিল করে তৈরী করেন সিনেমা ‘পাকিজা’। অথচ সেই পাকিজ়া’-র কয়েকটি দৃশ্য তোলার পরেই কামাল-মীনা আলাদা হয়ে যান। এই সিনেমাও হয়ে যায় বাক্সবন্দী। ততদিনে মীনার শরীরে অবসাদ আর সিরোসিস অব লিভার যৌথভেবে পোক্ত বাসা বেঁধেছে , ওদিকে এসব শুনে কামালেরও রাগ একটু থিতু হয়েছে। সকলের অনুরোধে বারো বছর পর সিনেমার রিলগুলো নিয়ে দেখার পর কয়েক জন কামালকে বলেছিলেন, ‘নিজেদের অভিমানের জন্য ভারতীয় সিনেমার এত বড় ক্ষতি কোরো না। এই ছবি শেষ করো।’ কথা শুনেছিলেন কামাল।
পাকিজা ছিল বিগ বাজেটের ছবি। সব শর্ত শেষে যখন শুরু হল শুটিং, মীনার স্বাস্থ্য ততদিনে ঢলে গিয়েছে। শরীরে রোগের ছাপ লুকোতে মীনা নিজেই ওই বিশেষ কাটের পোশাকের ডিসাইন করেছিলেন ।ওই স্টাইলের পোশাক তখন বিখ্যাত হয়েও ছিল খুব।
১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় ‘পাকিজ়া’। প্রথমে হল ভরলেও মিনা কুমারির স্বাস্থ্যের খবর ছড়িয়ে পড়ায় অদ্ভুতভাবেই দর্শক মুখ ফেরাতে থাকে হল থেকে। একদম ফ্লপ হতে গিয়েও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল পাকিজা। নাম ওঠে ‘ক্লাসিক সিনেমা’-র তালিকায়।
এদিকে সিরোসিস অফ লিভারে ২৫ মার্চ মিনার পেট থেকে তিন বালতি ফ্লুইড বার করেন চিকিৎসকরা। খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে, পা ফুঁটো করে গ্লুকোজ ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ছবি করে যাচ্ছেন মীনা। ‘চলতে চলতে, ইয়ুহি কোই মিল গয়া থা…’ তখনও সুপারহিট। ৩১মার্চ,১৯৭২, মাত্র ৩৯ বছর বয়সে ট্র্যাজিক জীবনের ইতি টানেন।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.