কায়ার সঙ্গে ছায়ার যুদ্ধ
পূর্ব মেদিনীপুরে শুভেন্দু অধিকারীর প্রতাপ পারিবারিক। নন্দীগ্রামের জমি রক্ষা আন্দোলন শুভেন্দুকে রাজনৈতিক মঞ্চে প্রতিষ্ঠা করে। তবে এই আন্দোলন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলকেও ক্ষমতার দিকে অনেকটা এগিয়ে দেয়। সেই লড়াইয়ে শুভেন্দু ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতি। মমতার ছায়া। এবার সরাসরি কায়াই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। ভবানীপুরের আসন ছেড়ে শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম থেকেই লড়াই করে মমতা যেমন নন্দীগ্রামের মানুষের কাছে বার্তা দিতে চেয়েছেন যে তিনি এখান থেকেই জিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন আবার, তেমনই শুভেন্দু চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছেন এই আসন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে না পারলে তিনি রাজনীতি থেকেই সরে যাবেন। চিরতরে।
মমতার অ্যাডভান্টেজ
তৃণমূল কংগ্রেসে তিনি একমেবাদ্বিতীয়ম। রাজ্যের ২৯৪টি আসনে প্রার্থী ২৯৪ জন থাকলেও আসলে প্রার্থী একজনই। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতাও তাই বলেন। বলেন আপনারা আমায় ভোট দিন। সাধারণ মানুষও তাই মনে করে। এরাজ্যে বহুদল বহুমত। যুযুধান প্রত্যেকটি দলের নিজস্ব একটা ভোট ব্যাংক আছে। তার বাইরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজস্ব একটা ভোট ব্যাংক তৈরি করেছেন। একটা বিরাট প্রাপক গোষ্ঠী। গত দশ বছরে এই রাজ্যে ক্ষমতায় থেকে মমতা সেই গোষ্ঠী তৈরি করেছেন। তাছাড়া নন্দীগ্রামের মানুষের মমতার প্রতি একটা স্বাভাবিক দুর্বলতা আছে। সেই সঙ্গে মমতা এবারে এখান থেকেই প্রার্থী হওয়ায় তাদের দুর্বলতা আরও একটু বেড়ে গিয়েছে। এখানকার লোক বলছে, সারা রাজ্যে যে ব্যাপক উন্নয়নের কাজ হয়েছে এই এলাকায় তা হয়নি। নন্দীগ্রাম অনেকক্ষেত্রেই নাকি বঞ্চিত। তাদের ধারণা এবারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরাজ্যে ক্ষমতায় আবার আসবেন। তাই তিনি যদি এখান থেকে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন তাহলে নন্দীগ্রামের গুরুত্ব অনেক বাড়বে। সুবিধাও বাড়বে অনেক।
শুভেন্দুর অ্যাডভান্টেজ
এখানকার জমি রক্ষা আন্দোলন থেকেই শুভেন্দুর উত্থান। তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য হয়ে ওঠায় রাজ্যের রাজনীতিতে তাঁর ব্যাপক গুরুত্ব বেড়েছে। নন্দীগ্রাম সহ পুরো পূর্ব মেদিনীপুরে তিনি ছিলেন মমতার প্রতিনিধি। যা কিছু হয়েছে সবই তাঁর হাত ধরে। অতএব তিনিও এই এলাকায় তাঁর নিজস্ব একটা কর্মী গোষ্ঠী তৈরি করতে পেরেছেন। যে বিশাল কর্মী গোষ্ঠী তিনি তৈরি করেছিলেন, তারাই এই এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য চালিয়েছে এতদিন। তাঁর দলেরই অন্য কারও তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার কোনও সুযোগ ছিল না। ভয় ছিল তাঁর বিরোধিতা করলে প্রত্যক্ষভাবে তা মমতার বিরোধিতা বলেই প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই কারণে ক্ষোভ থাকলেও শুভেন্দুর বিরুদ্ধে একটা কথা বলার কোনও সাহস কারও ছিল না। শুভেন্দু দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় অনেকে যেমন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে, তেমনই অনেকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বাধ্য হয়েছে। যারা বাধ্য হয়েছে তারাই শুভেন্দুর শক্তি। এই শক্তি নন্দীগ্রামে কিন্তু কম নয়। তাদেরও মরণ-বাঁচন লড়াই এটা। এই লড়াইয়ে জিততে না পারলে শুভেন্দু যেমন রাজনৈতিক অস্তিত্বের সংকটে পড়বেন, তেমনই এরা শুধু রাজনৈতিক সংকট নয়, সামগ্রিকভাবে ভয়ঙ্কর সংকটে পড়বে।
কোন খেলা হবে
তবে খেলা যে এখানে জমজমাটি হবে তার একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতানোর জন্য তৃণমূল যেমন সর্বশক্তি নিয়ে এখানে নেমে পড়েছে, তেমনি শুভেন্দুর পেছনে রয়েছে তাঁর বিরাট কর্মীগোষ্ঠী। যারা এতদিন তৃণমূলের হয়েই এখানে ভর্তি করানোর কাজ করে এসেছে। শুভেন্দুর নেতৃত্বে। তাদের কর্মকুশলতার সঙ্গে রয়েছে বিজেপির রসদ। চারদিক থেকে বিজেপি এখানে নানাভাবে রসদ জুগিয়ে চলেছে।