সুয়েজ খাল থেকে সরল জাহাজ
বেশ কিছু রিপোর্টে জানা গিয়েছে যে, গত মঙ্গলবার বিশ্ব বাণিজ্যের ব্যস্ততম জলপথ সুয়েজ খালে আটকে পড়েছিল বিশাল পণ্যবাহী জাহাজ এভার গিভেন, তবে তা এখন পুনরায় আংশিকভাবে ভাসতে শুরু করে দিয়েছে। মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইটের স্যাটেলাইট ফুটেজে দেখা গিয়েছে যে জাহাজটি তীর থেকে একটু সরেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ আরও ২টি শক্তিশালী টাগবোট আনে, মোট ১৪টি টাগবোট জাহাজটিকে সরানোর কাজ করে চলেছে। জাহাজের ধনুকের নীচে প্রচুর পাছর থাকায় জাহাজটিকে মুক্ত করা কঠিন করে তুলেছিল। মাটি খননকারীরা এরপর ৯৫০,০০০ ঘন মিটার মাটি ৬০ ফিট গর্ত করে তোলে।
ট্রাফিক জ্যাম সুয়েজ খালে
এই বিশালাকার জাহাজ আটকে থাকার দরুণ ব্যাপক ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয় এবং কমপক্ষে ৩৬৯টি জাহাজ পরপর আটকে থাকে। বিশ্ব বাণিজ্যের ১৫ শতাংশ এই সুয়েজ খালের মাধ্যমেই হয়, যা গত ৬ দিন একেবারে অবরুদ্ধ হয়েছিল। কীভাবে এই এভার গিভার জাহাজটি সুয়েজ খালে আটকে গেল তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ঝোড়ো হাওয়া ও বালির ঝড়ের জন্য জাহাজটির দৃশ্যমানতায় প্রভাব পড়ে। যদিও ইজিপ্ট সরকারের মতে কোনও ব্যক্তির ভুলের জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। রবিবার রাত থেকে সোমবারের মধ্যে শ্রমিকরা ওই জাহাজ থেকে ১৮,৩০০ মাল বাইরে বের করে এনে জাহাজটিকে হাল্কা করে দেয়।
প্রভাব পড়ে বিশ্ব বাণিজ্যে
সুয়েজ খাল দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করে বিশ্ববাণিজ্যে। জাপানি মালিকানাধীন একটি বিশালাকৃতির জাহাজ প্রায় ২০ হাজার কন্টেইনার সহ এই খাল অতিক্রম করার সময় বালিতে আটকে যায়। আড়াআড়ি ভাবে জাহাজটি খালের তীরে আটকে পড়ায় খালের দু'দিকে সাগরে আটকে পড়ে আরও কয়েকশো জাহাজ। মিশর প্রশাসনের তরফে পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, ৪৫০টি মালবাহী জাহাজ, ১২০ মাইল লম্বা খালের দু'দিকে সাগরে আটকা পড়ে। ছোট জাহাজগুলি বাধ্য হয়েই অন্য রুটে ঘুরে যায়।
সুয়েজ খাল ও মিশর
সুয়েজ খালের ওপর মিশরের অর্থনীতিও অনেকটাই নির্ভরশীল। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির আগে মিশরের জিডিপির প্রায় দুই শতাংশ সুয়েজ খাল থেকে পাওয়া মাশুল থেকেই আসত। সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের প্রধান ওসামা রাবি বলেন, 'খাল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে এক কোটি ৫০ লক্ষ ডলার ক্ষতি হচ্ছে।' অন্যদিকে, লয়েডস লিস্টে প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে মাল ভর্তি একাধিক জাহাজ আটকে থাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯৬০ কোটি ডলারের ব্যবসা বন্ধ হয়ে রয়েছে। জার্মান বীমা কোম্পানি অ্যাল্যায়াঞ্জের হিসাব অনুযায়ী, সুয়েজ খাল বন্ধ হয়ে থাকায় এক সপ্তাহে বিশ্ব বাণিজ্যে ৬০০ কোটি ডলার থেকে ১০০০ কোটি ডলারের লোকসান হয়েছে। সুয়েজ খাল বন্ধ হয়ে পড়ায় শুধু যে মিশরের অর্থনীতি বা জাহাজ পরিবহন ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে তা নয়। বহু দেশে অভ্যন্তরীণ পরিবহন, সুপারমার্কেটের মত ব্যবসা বা পণ্য উৎপাদনকারী অসংখ্য প্রতিষ্ঠান লোকসানের মধ্যে পড়েছে।