বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সিরিজ জিতেও তীব্র অসন্তোষ বিরাট কোহলির

দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার ২০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ স্মরণীয় হয়ে রইল বিরাট কোহলির কাছে। টেস্ট, টি ২০ সিরিজের পর এই ম্যাচ জিতে একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজেও ইংল্যান্ডকে পরাস্ত করল ভারত। ৫০ ওভারের ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সিরিজ জিতেও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করলেন বিরাট কোহলি। ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও ম্যান অব দ্য সিরিজ বাছাই একেবারেই নাপসন্দ ভারত অধিনায়কের। তাঁর সাফ কথা, এই ম্যাচের সেরার পুরস্কার দেওয়া উচিত ছিল শার্দুল ঠাকুরকে। ভুবনেশ্বর কুমারই তাঁর চোখে সিরিজ-সেরা।

পুরস্কারে শার্দুলকে টেক্কা কারানের

সিরিজ নির্ণায়ক ম্যাচে আটে নেমে ২১ বলে ঝোড়ো ৩০ রান করার পর বল হাতে ৬৭ রানের বিনিময়ে চার উইকেট তুলে নেন শার্দুল ঠাকুর। ডেভিড মালান, জস বাটলার, লিয়াম লিভিংস্টোন ও আদিল রশিদ 'লর্ড শার্দুল'-এর শিকার। তিনি ৪৭তম ওভারে বল করতে এসে ১৮ রান খরচ করায় অবশ্য ইংল্যান্ড জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেছিল। একটি সহজ ক্যাচ ফেললেও বেশ কিছু ভালো ফিল্ডিংয়ের নিদর্শনও রাখেন শার্দুল। অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের হয়ে বোলিং ওপেন করে ৫ ওভারে ৪৩ রান দিয়ে ঋষভ পন্থের উইকেটটি তুলে নেন স্যাম কারান। পরে ব্যাট হাতে কার্যত তিনি একাই ইংল্যান্ডকে অবিশ্বাস্য জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেন। ৯৫ রানের মধ্যে জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, বেন স্টোকস ও জস বাটলারের উইকেট হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। ৩৩০ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে সাত উইকেট পড়ে গিয়েছিল ২০০ রানে। সেখান থেকে ইংল্যান্ড ৯ উইকেটে ৩২২ রানে পৌঁছায়। ৮৩ বলে ৯৫ রান করে অপরাজিত থাকলেও দলকে জেতাতে পারেননি কারান। তবুও তাঁকেই ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার দেওয়া হয়।

সিরিজ সেরা বেয়ারস্টো

ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার দেওয়া হয় জনি বেয়ারস্টোকে। একটি ম্যাচ জেতানো শতরান-সহ তিন ম্যাচে ২১৯ রান করায়। অন্যদিকে, সিরিজ সেরার দাবিদার হওয়ার দৌড়ে ছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। সিরিজে ছটি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ইকনমি ৪.৬৫, গড় ২২.৫০। এদিনও দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে শুরুতেই ধাক্কা দেন ভুবি। পরে মঈন আলির উইকেটটিও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তুলে নেন। তবু ভুবনেশ্বর কুমারকে টেক্কা দিয়ে সিরিজ সেরার পুরস্কার পান বেয়ারস্টো।

বিরাট অসন্তোষ

এই দুই পুরস্কার বাছাই যে সঠিক হয়নি তা সাফ জানিয়ে দিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সময় বলেন, শার্দুলকে ম্যাচের সেরা ও ভুবিকে সিরিজ সেরার পুরস্কার দেওয়া হলো না, এটা আমাকে অবাক করেছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তাঁরা ভালো বোলিং করেছেন। মাঝের ওভারগুলি ও পাওয়ারপ্লেতে তাঁরাই দুই দলের মধ্যে ফারাক গড়ে দিয়েছেন। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও ক্রুণাল পাণ্ডিয়ার প্রশংসাও শোনা গিয়েছে ভারত অধিনায়কের গলায়।

জয় নিয়ে

এদিনের জয় নিয়ে বিরাট বলেন, দুটি সেরা দল যখন খেলে তখন এমন উত্তেজক, দারুণ ম্যাচই প্রত্যাশিত। স্যাম কারান ভালো খেলেছেন। তবে নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট ফেলে আমরা বিপক্ষের উপর চাপ তৈরি করতে পেরেছি। শেষ কয়েকটি ওভারে দলের মাইন্ডসেটে একটু সমস্যা হলেও হার্দিক ও নাট্টু (টি নটরাজন) অনবদ্য বোলিং করেছেন শেষ দুই ওভারে। আমাদের দলের ব্যাটিং গভীরতাতেও আমি সন্তুষ্ট। বিশেষ করে ডেথ ওভারে আমরা ভালো ব্যাট করছি। প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের মধ্যে কেউ শতরান পেলে আমরা ৩৭০-৩৮০ রান তুলতেই পারি। প্রতিটি সিরিজ জয় সত্যিই মধুর। স্যাম কারানের ক্যাচ ফেলার খেসারৎ দিতে হতে পারতো ভারতকে। কারান, বেন স্টোকস-সহ চারটি সহজ ক্যাচ ফেলেছে ভারত। এ প্রসঙ্গে বিরাট বলেন, যে ক্যাচ ফেলে সে-ই সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়। প্রত্যেকে মাঠে নিজের সেরাটাই দিতে চায়। ক্যাচ পড়াটা খেলারই অঙ্গ। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ক্যাচ ফেলে না। ক্যাচ ফেলা সত্ত্বেও আমরা যে জিততে পেরেছি সেটা ভেবে ভালো লাগছে। দলের সকলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এ ম্যাচে অসাধারণ ছিল।

মিশন আইপিএল

বিশ্বের সেরা দলের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতে আত্মবিশ্বাসী বিরাট এখন তাকিয়ে আইপিএলের দিকে। তিনি বলেন, বিশ্বের সেরা দলের বিরুদ্ধে জিতেছি বলে এটা মধুর জয়। আমরা এখন আইপিএলের দিকে তাকিয়ে। এই মরশুমটা আমাদের দারুণ কাটল। যেভাবে সিরিজ শেষ করলাম তা তৃপ্তিদায়ক। ফের আইপিএল থেকে বায়ো বাবলে কাটাতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিরাট বলেন, আবারও বলছি দীর্ঘ সময় জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকা কঠিন। তাই ক্রীড়াসূচি তৈরির সময় ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলাও প্রয়োজন। সব সময় প্রত্যেকের মনের জোর সমান থাকে না।

More INDIAN CRICKET TEAM News