অস্তিত্বে টান পড়বে মোদীর
২০১৪ সালে মোদীকে সামনে রেখেই লোকসভার নির্বাচনে নেমেছিল বিজেপি। ক্ষমতায় আসার পর অনেক জনবিরোধী নীতি নিয়েছে তাঁর সরকার। প্রচুর আর্থিক দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। তারপরও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসে মোদী বুঝেছেন ছল বল কৌশলই আসলে ক্ষমতায় থাকার মূল মন্ত্র। পরের কয়েকটি বিধানসভা নির্বাচন বা উপ নির্বাচনে সেই মন্ত্র প্রয়োগ করে খুব একটা সাফল্য পাননি। বরং বলা যায় তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তা নিয়ে তাঁর আক্ষেপ হয়তো রয়েছে, কিন্তু তাতে তাঁর অস্তিত্বে টান পড়েনি। কিন্তু সেই মন্ত্র বাংলায় প্রয়োগ করে তিনি যদি ব্যর্থ হন তাহলে সত্যি সত্যিই তার অস্তিত্বে টান পড়বে। অথরিটি খর্ব হয়ে যাবে। যে কারণে তিনি যত রকম ভাবে সম্ভব, তত রকমভাবেই তাঁর মন্ত্র প্রয়োগের চেষ্টা করেছেন। এখানকার ভোটের ফলাফলের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হবে। ফলে বাংলার নির্বাচনের ধাক্কা নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহকে সরিয়ে দিতে পারে।
ছলে বলে কৌশলে বাংলা চাই
কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের ইত্তেফাক খবরের কাগজের পলিটিক্যাল করেসপন্ডেন্টের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। প্রবীণ মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন নিয়ে তাঁর বিপুল আগ্রহ। এখানে ভোট শুরু হওয়ার আগেই আসবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী এ মাসের শেষে বাংলাদেশ যাচ্ছেন ওই দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। তাই তার দিন কয়েক পরে তিনি আসবেন এখানকার ভোটের খবরাখবর করতে। ২৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন। এদিনই তিনি যাবেন সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী মন্দির এবং গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের গুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে। মন্দিরটি মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে তীর্থক্ষেত্র। উদ্দেশ্য এবার ভোটে মতুয়াদের যথাসম্ভব বিজেপির দিকে টেনে আনা। তিনি বলছিলেন, মোদী জানেন এরাজ্যে দেড় কোটি মতো মতুয়া ভোট আছে। ৬০-৬৫টি আসনে মতুয়ারা বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। বড়মা বেঁচে থাকতে বেশিরভাগ মতুয়ার আনুগত্য ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। বা বলা ভালো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি। তারপর তাদের একটা অংশকে নিজেদের কব্জায় আনতে পেরেছিল বিজেপি। শান্তনু ঠাকুর সাংসদ হয়েছেন। মোদীর ওড়াকান্দি হরিচাঁদ মন্দিরে যাওয়ার উদ্দেশ্য, যে মতুয়ারা বিজেপির প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছে তারা যেন ছিটকে না যায় এবং বাকি অংশ যেন বিজেপির ভাঁজে চলে আসে। বাংলা বিজয়ে এইরকম আরও কিছু কৌশল নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তার মধ্যে একটি বিক্ষুব্ধ তৃণমূলীদের ডেকে এনে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে আনা। সে কৌশল বুমেরাং হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। ফুঁসে উঠেছে আদি বিজেপিরা। ক্ষোভ বিক্ষোভ আগুন ভাঙচুর। তারপরও মোদী আস্থার সঙ্গে বলছেন, এবার বাংলায় আমরা। কিসের জোরে।
এবার বাংলায় আমরা
চারদিকে ক্ষোভ-বিক্ষোভে বঙ্গ বিজেপির বেসামাল অবস্থা। তা এমন চরমে গিয়ে পৌঁছেছে যে এখানে ভোট করাতে আসা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকেই তাতে নাকাল হয়েছেন। তারকাখচিত প্রচার সভাগুলো মানুষ টানতে পারছে না। পরিস্থিতি দেখে অনেক সভা বাতিল করতে হচ্ছে। তাতেও বিজেপি জনতার ক্ষোভ বাড়ছে। দলবদলু যাঁদের ওপরে আস্থা রেখেছিলেন, তাঁরাও সেভাবে ভরসা দিতে পারছেন না। তারপরও নরেন্দ্র মোদী টুইট করে বলছেন, এবার বাংলায় আমরা। এর ভিত্তি কী? কিসের জোরে তিনি এত জোর দিয়ে এই কথাটা বলতে পারছেন। এটা কি পরিস্থিতি দেখে হতোদ্যম দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য ভোকাল টনিক? নাকি সত্যিই কোনও কৌশল কার্যকর করার গ্যারান্টি পেয়ে গিয়েছেন তিনি।