সুমন ভট্টাচার্য: বোতসোয়ানা বলে আফ্রিকার একটা ছোট্ট দেশে ২০১৮তে কি তোলপাড় হয়েছিল, তা হয়তো আমাদের অনেকেরই জানা নেই। সে দেশের মূল বিরোধী দল বোতসোয়ানা কংগ্রেস পার্টি অভিযোগ করেছিল যে সেদেশের শাসক দল, বোতসোয়ানা ডেমোক্রাটিক পার্টি ইভিএম-এ কারসাজি করে নির্বাচন জিতেছে।

লিখলেন– সুমন ভট্টাচার্য

শুধু অভিযোগেই ক্ষান্ত থাকেনি আফ্রিকার এই দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলটি, সেদেশে আদালতে মামলাও করেছিল। আমাদের জেনে রাখা ভালো বোতসোয়ানায় যে ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে এত তোলপাড় হয়েছিল, সেগুলি ভারত থেকেই গিয়েছিল। অর্থাৎ ভারতবর্ষ থেকে রফতানি করা ইভিএম নিয়ে বোতসোয়ানায় তোলপাড় হয়েছিল।

আমাদের আরও জেনে রাখা ভালো, এই মুহূর্তে পৃথিবীর মাত্র ৩১টি দেশে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তার মধ্যেও মাত্র চারটি দেশ তাদের সব নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে। ১১টি দেশ দেশের কোনও কোনও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে। এবং এটা আরও পরিস্কার করে বলে রাখা ভালো, ইউরোপের অধিকাংশ দেশ নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেও শেষ পর্যন্ত এই ভোট যন্ত্রটিকে ব্যবহার করে না।

যেমন জার্মানি ২০০৫ এ ইভিএম নিয়ে ‘ট্রায়াল রান’ দিলেও ২০০৯তে সেদেশের আদালত তা বাতিল করে দেয়। আয়ারল্যান্ড ইভিএম বাতিল করে ২০১০ সালে। নেদারল্যান্ড ২০০৭ সালে। নেদারল্যান্ডে তো একটি আলাদা প্রচার অভিযানই চলে ‘ইউ ডোন্ট ট্রাস্ট ভোটিং কম্পিউটার’, যারা এই ভোটযন্ত্র ব্যবহারে কি কি নিরাপত্তাজনিত ত্রুটি আছে, তা সবাইকে সরেজমিনে দেখিয়ে দিত। মূলত ওই ক্যাম্পেনের প্রভাবেই নেদারল্যান্ডের পার্লামেন্ট একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করে এবং তারপরে সেদেশে ভোটিং মেশিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

ভারতবর্ষেও ইভিএম নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই নিয়ে তুমুল প্রতিবাদ জানিয়েছে। কখনও কংগ্রেস, কখনও বিজেপিও। আজ যে বিজেপি ইভিএম-এর ব্যবস্থা এবং এটি কত নিখুঁত ভাবে ভোট পরিচালনা করে, সেই বিষয়ে কথা বলে, সেই বিজেপিই ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ইভিএম বাতিল করে ব্যালটে ফিরে যাওয়ার জন্য রীতিমত প্রচারাভিযান চালিয়েছিল।

খোদ লালকৃষ্ণ আদবানী সেই প্রচারাভিযানে সামনের সারিতে ছিলেন এবং দক্ষিণ ভারতে গেরুয়া শিবিরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাও সেই সময় ইভিএমে কিভাবে কারচুপি হতে পারে তা নিয়ে আলাদা করে বই লিখেছিলেন। তবে ইভিএম নিয়ে সবচেয়ে বেশি যদি কোনও দল মুখ খুলে থাকে বা বার বার দরবার করে থাকে তা হলে সেটা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তাঁর দল লাগাতার ভাবে ইভিএমের বিরুদ্ধে সরব থেকেছে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও সত্যি ২০১৫ এবং ২০২০তে দিল্লির যে দুটি বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টি বা আপ সবাইকে দুরমুশ করে নির্বাচন জিতেছে, সেই দুটি ভোটই কিন্তু ইভিএমের মাধ্যমে হয়েছিল।

২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই দেশের ১৪টি প্রধান রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের কাছে বার বার দাবি জানাতে থাকে ইভিএম বাতিল করে ব্যালটে ফিরে যাওয়ার জন্য। এই দলগুলির মধ্যে আপ ছাড়াও বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দল, উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি, মহারাষ্ট্রের শারদ পাওয়ারের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি এবং দক্ষিণের ডিএমকে-ও সামিল ছিল। নির্বাচন কমিশন কিন্তু কারও বক্তব্যকেই কোনও গুরুত্ব না দিয়ে এখনও অবধি ইভিএমের স্বপক্ষেই সওয়াল করে গেছে এবং পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমেই হতে চলেছে।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

করোনা পরিস্থিতির জন্য থিয়েটার জগতের অবস্থা কঠিন। আগামীর জন্য পরিকল্পনাটাই বা কী? জানাবেন মাসুম রেজা ও তূর্ণা দাশ।