শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত: শনিবার, ২৭ মার্চ রাজ্যে ২০২১-এর প্রথম দফায় ৩০টি বিধানসভায় নির্বাচন। রাজ্যে এবার ৮ দফায় নির্বাচন ঘোষণা করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। আগামী ২ মে জানা যাবে রাজ্যে কে এগিয়ে আর কে পিছিয়ে। তবে নির্বাচন শুরুর আগেই রাজ্যে যে ভাবে দল বদল শুরু হয়েছে তার জেরে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা যে বেশ কিছুটা বেড়ে গিয়েছে সেটা চর্মচক্ষেই দেখা যাচ্ছে। আগে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা ছিল ৭ জন। দিলীপ ঘোষ লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর খড়্গপুর সদর আসন থেকে তিনি ইস্তফা দেন । উপ নির্বাচনে এই আসনটিতে জয়ী হয় তৃণমূল। তাই বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা কমে দাঁড়াত ৬ জনে। এই মুহূর্তে কিন্তু রাজ্য বিধানসভায় বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৬ জন । এর নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূল ও অন্যান্য দল ছেড়ে একাধিক বিধায়কের বিজেপিতে যোগ দেওয়া।
একটু পিছন দিকে তাকানো যাক। ২০১৬-য় রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মাত্র ৩ জন বিধায়ক জয়ী হয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিল খড়্গপুর সদর আসন থেকে জিতে বিধায়ক হওয়া রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মাদারিহাট থেকে জিতেছিলেন মনোজ টিগ্গা। মালদার বৈষ্ণবনগর থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন স্বাধীন সরকার।
কিন্তু ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনের সময় রাজ্যে যে উপনির্বাচন হয়, তাতে বিজেপি আরও ৪টি বিধানসভার আসন পায় । এই চারটি আসন হলো দার্জিলিং, কৃষ্ণগঞ্জ, ভাটপাড়া ও হবিবপুর। এর ফলে বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ জনে । কিন্তু ওই নির্বাচনেই মেদিনীপুর আসন থেকে সাংসদ হন দিলীপ ঘোষ । ফলে তিনি খড়্গপুর সদর আসন থেকে বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন। ফলে তৃণমূল ওই আসনে জয়ী হলে বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা সাকুল্যে দাঁড়ায় ৬ জনে ।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন যখন শুরু হতে আর একদিন বাকি, তখন হিসেবে বলছে বর্তমানে রাজ্য বিধানসভায় বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা ৩৬ জনে । সৌজন্যে অবশ্যই দল বদলের রাজনীতি।
আমরা যদি সংখ্যার হিসেবে দেখি তাহলে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এসেছেন ২৪ জন বিধায়ক। কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট থেকে ৩ জন করে মোট ৬জন বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। আর তার ফলে ২০১৫-তে ৩জন জন বিধায়ক নিয়ে রাজ্য বিধানসভায় খাতা খুলে আজ বিজেপি স্রেফ দলবদলের রাজনীতিতে বিধায়ক সংখ্যা বাড়িয়ে ৩৬ জনে তুলে নিয়েছে।
সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে যে সব বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন:-
কোচবিহার উত্তরের মিহির গোস্বামী, কালচিনির উইলসন চম্প্রামারি, নাগরাকাটার শুক্র মুণ্ডা, তপন-এর বাচ্চু হাঁসদা, তেহট্টর গৌরীশঙ্কর দত্ত, বনগাঁ উত্তরের বিশ্বজিৎ দাস, বীজপুরের শুভরাংশু রায়, নোয়াপাড়ার সুনীল সিংহ, ব্যারাকপুরের শীলভদ্র দত্ত, রাজারহাট-নিউটাউনে সব্যসাচী দত্ত , বসিরহাট দক্ষিণের দীপেন্দু বিশ্বাস, ডায়মন্ড হারবারের দীপক হালদার, সাতগাছিয়ার সোনালি গুহ, বালির বৈশালী ডালমিয়া, শিবপুরের জোট লাহিড়ী, সাঁকরাইলের শীতল সর্দার, উত্তরপাড়ার প্রবীর ঘোষাল, সিঙ্গুরের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, কাঁথির বনশ্রী মাইতি, মন্তেশ্বরের সৈকত পাঁজা, কালনার বিশ্বজিৎ কুন্ডু , পাণ্ডবেশ্বরের জিতেন তেওয়ারি, লাভপুরের মইনুল ইসলাম, বেহালা পশ্চিমের শোভন চট্টোপাধ্যায়।
কংগ্রেস ছেড়ে যে সব বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন :-
বাগদার দুলাল বর, শান্তিপুরের অরিন্দম ভট্টাচার্য, পুরুলিয়ার সুদীপ মুখোপাধ্যায় ।
বামফ্রন্ট ছেড়ে যে সব বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন :-
গাজোলের দীপালি বিশ্বাস, তমলুকের অশোক ডিন্ডা , হলদিয়ার তাপসী মণ্ডল।
তৃণমূল থেকে যে সব বিধায়ক ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে এসেছেন:-
নন্দীগ্রামের শুভেন্দু অধিকারী ,ডোমজুড়ের রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
বামফ্রন্ট থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়ে মারা গেছেন হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্র নাথ রায়।
২০১১- সালে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সালেই কংগ্রেসের দুই বিধায়ক ইংরেজবাজারের কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী এবং রেজিনগরের হুমায়ুন কবীর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। বিরোধীদের অভিযোগ, দলবদলের যে খেলা তৃণমূল রাজ্য রাজনীতিতে শুরু করেছিল আজ সেই খেলা খেলেই বিজেপি তৃণমূলকে ভেঙে নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে নিয়েছে। গত তিন বছর ধরে শুধু তৃণমূল থেকেই বিজেপি-তে গিয়েছেন ২৪ জন বিধায়ক। কংগ্রেস-বামফ্রন্ট শিবির থেকে তৃণমূলে যে বিধায়করা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের সিংহভাগ যদিও পদত্যাগ করেননি। ওই অবস্থাতেই নিজেদের মেয়াদ কাটাচ্ছেন। এই নিয়ে বামেরা বিধানসভার স্পিকারকে চিঠি দিয়েও কোনও সহায়তা পাননি বলে তাদের অভিযোগ। বামেরা বলছে, রাজ্যে দল বদলের যে খেলা তৃণমূল শুরু করেছিল আজ সেই দল বদলের খেলায় তৃণমূলকে ছাপিয়ে যাচ্ছে বিজেপি, তাই বিপাকে পড়েছে তৃণমূল। একেই বলে গুরুমারা বিদ্যা।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.