তীব্র গতিতে করোনা কেস বাড়ছে মহারাষ্ট্র–মুম্বইতে, দেশের পরিস্থিতি ফের আগের কোভিড স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে

দেশে কোভিড–১৯–এর দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে মহারাষ্ট্র তথা মুম্বইয়ের পরিস্থিতি। এই বাণিজ্য নগরীতে দৈনিক সংক্রমণ ক্রমশঃ বেড়ে চলেছে এবং এখন তা খুবই জটিল অবস্থায় রয়েছে। মুম্বইয়ের মেয়র কিশোরী পেডনেকার এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে আজকে মানুষ যেভাবে ধারাবাহিকভাবে এবং সম্পূর্ণরূপে কোভিড নিয়মের প্রতি যে অবহেলা করছে তাতে লকডাউন বা কমপক্ষে নৈশ কার্ফু জারি করতে বাধ্য করছে।

মুম্বইয়ের করোনা পরিস্থিতি

বৃহস্পতিবার, গত ২৪ ঘণ্টায় মুম্বইতে ধরা পড়েছে ৫,৫০৫টি করোনা কেস। অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে একদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৩৫,৯৫২জন, যা ক্রমাগত এই রাজ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে রেখেছে। পেডনেকার জানিয়েছেন যে অধিকাংশ করোনা কেসের রিপোর্ট এসছে বহুতলগুলি থেকে এবং এখানকার বাসিন্দারা কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনের নিয়ম মানছেন না, যার ফলে কনটেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

সংক্রমণ বাড়ছে গোয়া–মধ্যপ্রদেশে

একমাস আগেই পর্যটকদের জন্য খোলা হয়েছে গোয়া, এখানেও খুব ধীরভাবে করোনা কেস বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুক্রবার গত ২৪ ঘণ্টায় গোয়াতে নতুন করে ১৮৯টি কেস সনাক্ত হয়েছে। গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত জানিয়েছেন যে পর্যটকদের কোভিড-১৯ নেগেটিভ রিপোর্ট আনা বাধ্যতামূলক নয় সংক্রান্ত কোনও প্রস্তাব রাখা হয়নি। সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস পর্যটনশিল্পকে এই পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। মধ্যপ্রদেশেও রেকর্ড দৈনিক করোনা কেস ধরা পড়েছে ১,৮৮৫টি এবং এখানে পজিটিভ কেসের হার ৬.‌৯ শতাংশ, যৈ আগামীদিনের সতর্কতা।

১০ লক্ষ কোভিড ডোজ

মুম্বইয়ের পুরনিগম জানিয়েছে যে ইতিমধ্যেই এই শহরে ১০ লক্ষ কোভিড ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়ার কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং দৈনিক এক লক্ষ করে টিকাকরণ করার লক্ষ্য রয়েছে। বিএমসি জানিয়েছে যে মঙ্গলবার ৪০,৪০০ জনের কোভিড টেস্ট করা হয়েছে এবং এর মধ্যে পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৫,৪৫৮ জনের, যা ১৩.‌৫ শতাংশ এবং ৮৩ শতাংশ কেসে করোনার কোনও উপসর্গ নেই। মঙ্গলবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। বিএমসি এও জানায় যে বুধবার ৪৭ হাজার করোনা টেস্টের মদ্যে ৫,৩৬৫ বা ১২ শতাংশের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে এবং ফের ৮৪ শতাংশের দেহে করোনার উপসর্গ ছিল না। এদিন ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মুম্বইতে বাড়ানো হল শয্যা সংখ্যা

বিএমসি মুম্বইতে বাড়তে থাকা করোনা ভাইরাসের বৃদ্ধির জেরে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১৩,৭৭৩টি থেকে ২১ হাজার করে দেবে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে। যার মধ্যে ৫,১৪০টি শয্যা ফাঁকা রাখা হবে। বিএমসির এক আধিকারিক জানিয়েছেন যে পরবর্তী ৬ থেকে ৮ সপ্তাহে করোনার প্রকোপের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য এই ২১ হাজার শয্যা যথেষ্ট। এরপর মুম্বই শহরের করোনা পরিস্থিতি কোনদিকে এগোচ্ছে তা দেখা যাবে। বিএমসি দৈনিক করোনা টেস্ট ৬০ হাজার করার লক্ষ্য নিয়েছে। তিনি জানান, চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ মার্চের মধ্যে ৫৬,২২০টি পজিটিভ কেস ও মৃত্যুর হার ০.৩ শতাংশ কম ছিল, শহরে এই সময়ের মধ্যে ২০০ জন মারা গিয়েছে বা প্রতিদিন ৪.‌৬ জন করে মারা যাচ্ছে। মৃত্যুর হার কম ও হাসপাতালে অতিরিক্ত শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির অর্থ হল বিএমসি সম্পূর্ণভাবে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাকার চেষ্টা করছে কিন্তু মুম্বইবাসীকেও বিএমসির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মেলাতে হবে এবং খুব কড়াভাবে কোভিড-১৯ নিয়ম পালন করতে হবে।

মহারাষ্ট্রে করোনার হাল খারাপ

বৃহস্পতিবার যেখানে মুম্বইতে দৈনিক করোনা ভাইরাসের কেস পাঁচ হাজারের ওপর অতিক্রম করেছে, সেখানে পিছিয়ে নেই গোটা মহারাষ্ট্র রাজ্যটিও। এদিন রাজ্যে দৈনিক করোনা ভাইরাস কেসের সংখ্যা ৩৫,৯৫২, যা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে দৈনিক সর্বোচ্চ সংক্রমণ। রাজ্যে এই নিয়ে মোট করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬,০০,৮৩৩। গত ৪ দিনে রাজ্যে এক লক্ষের বেশি কোভিড কেস ধরা পড়েছে। বৃহস্পতিবার একদিনে মৃত্যু হয়েছে ১১১টি, মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৩,৭৯৫ জনে। মুম্বইতে বৃহস্পতিবার দৈনিক করোনা কেস সনাক্ত হয়েছে ৫,৫০৫, যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর মধ্যে কল্যাণ ডোম্বিভালি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে ১,০২৭টি কেস রিপোর্ট হয়েছে, যা এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি।

পুনে ও প্রতিবেশি শহর পিম্প্ররি চিঞ্চওয়াডে যথাক্রমে ৩,৩৪০টি ও ১,৭৪৭টি নতুন কেস ধরা পড়েছে। অন্যদিকে পুনের অন্য জেলায় ১৩৪০টির বেশি করোনা কেস সনাক্ত হয়েছে। মারাঠওয়াড়া প্রদেশের ঔরঙ্গাবাদে নতুন করে ১৩৮০ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং নান্দেদ জেলায় ৯৫৮টি কেস সনাক্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, নাগপুর শহর ও নাগপুর জেলায় যথাক্রমে ২,৬৫৬ ও ১,০১৪টি কেস ধরা পড়েছে বলে সজানা গিয়েছে।

অন্যদিকে পুনেতে একদিনে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের, এরপর নাগপুরে ১৪ জন একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। হাসপাতাল থেকে ইতিমধ্যেই ছাড়া পেয়েছেন ২০,৪৪৪ জন রোগী, রাজ্যে সুস্থতার সংখ্যা ২২,৮৩,০৩৭। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সক্রিয় কেসের সংখ্যা ২,৬২,৬৮৫টি।

ভারতের করোনা পরিস্থিতি

ভারতেও নতুন করে দৈনিক করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৫৩,৪৭৬টি, যা এ বছরের মধ্যে সএকদিনে সর্বোচ্চ। দেশে মোট করোনা ভাইরাসের সংখ্যা দাঁড়িয়ে রয়েছে ১,১৭,৮৭,৫৩৪-এ। সক্রিয় করোনা কেসের সংখ্যা ১৫ দিনে বেড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৩,৯৫,১৯২-তে, যা মোট সংক্রমণের ৩.‌৩৫ শতাংশ। এরই মধ্যে আবার করোনায় সুস্থতার হার ৯৫.‌২৮ শতাংশ নেমে গিয়েছে। সংক্রমণের দৈনিক বৃদ্ধি ১৫৩ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেকর্ড করা হয়েছিল। করোনায় ২৫১ জনের মৃত্যু নিয়ে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১,৬০,৬৯২-তে।

ই-ভোটার কার্ড কীভাবে হাতে পাবেন, জানুন সহজ পদ্ধতি

More CORONAVIRUS News