ভারতীয় দলে তাঁরই দুই শিষ্য, টি ২০ ওপেনিংয়ে বিরাট-হিট জুটিকেই চান দীনেশ লাড

ভারতীয় দলে ফের বাড়ছে মুম্বইকরদের দাপট। প্রথম একাদশে জায়গা করে নিচ্ছেন মুম্বইয়ের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। তাঁদের মধ্যে আপাতত একজনের জায়গা পাকা। আরেকজন নিজের জায়গা মজবুত করতে বলের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও ভালো করছেন। নিজের দুই শিষ্যকে ভারতের প্রথম একাদশে দেখে গর্বিত, অত্যন্ত ভালো এক অনুভূতি হচ্ছে দীনেশ লাডের। ভারত-ইংল্যান্ড একদিনের আন্তর্জাতিক শুরুর আগে মুম্বই থেকে তিনি কথা বললেন ওয়ান ইন্ডিয়া বেঙ্গলির সঙ্গে।

রোহিতের কোচ

দীনেশ লাড। মুম্বইয়ের বরিভালির স্বামী বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কোচ। তাঁকে সকলে এতদিন রোহিত শর্মার কোচ বলেই ডাকেন। তবে এখন সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে শার্দূল ঠাকুরের নাম। দীনেশ লাডের পুত্র সিদ্ধেশ মুম্বইয়ের হয়ে এ বছরও সৈয়দ মুস্তাক আলি টি ২০-তে খেলেছেন। তবে বিজয় হাজারে ট্রফির দল থেকে বাদ পড়েন। ভারতীয় দলে অভিষেক না হলেও ভারত এ বা বোর্ড সভাপতি একাদশের হয়ে খেলেছেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও কলকাতা নাইট রাইডার্সেও ছিলেন। তবে এবার দল পাননি সিদ্ধেশ। এখনও ভবিষ্যতের রোহিত, শার্দূল গড়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দুপুরের চড়া রোদে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেও ক্লান্তিহীন। বরং রোহিত, শার্দূলদের সন্তানের মতো বড় করা ক্রিকেটগুরু তাঁদের সাফল্যে গর্বিত।

ক্রিকেটে ফোকাস

রোহিত তখন বছর ১১-র। বরিভালিতে স্থানীয় টুর্নামেন্টে তাঁর অফ স্পিন নজর কাড়ে দীনেশ লাডের। নিয়ে আসেন তাঁর স্কুলের ক্রিকেট আকাদেমিতে। নীচে নেমে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের দক্ষতা দেখে তাঁকে ওপরের দিকে ব্যাট করানো শুরু করেন। আজ সেই রোহিত তিন ফরম্যাটেই ভারতের ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ। টি ২০ আন্তর্জাতিকে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী। ছোটোবেলায় নিজের এলাকায় একটি বিলাসবহুল গাড়ি দেখে রোহিত বলেছিলেন, আমি এই গাড়ি কিনতে চাই। দীনেশ লাড উচ্চাকাঙ্ক্ষী রোহিতকে বলেছিলেন, গাড়ি-বাড়ি সব পরে হবে। আগে ক্রিকেটে ফোকাস থাকো। পরিবারের আর্থিক সঙ্কট থাকায় স্বামী বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল বিনামূল্যে রোহিতকে পড়াশোনার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ক্রিকেটে প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছিল। আজ সেই রোহিতের গ্যারাজে বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। রোহিতও পৌঁছে গিয়েছেন সাফল্যের শিখরে।

খারাপ শট নয়

খারাপ সময় সব ক্রিকেটারের জীবনেই আসে। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের আগে রোহিত শর্মাকে দীনেশ লাডের টিপস ছিল, খারাপ শট খেলো না। উইকেটে থিতু হও। তারপর শট খেলো। রোহিত তা মেনেই ক্রমাগত সফল হয়েছেন। দীনেশ লাড বললেন, আমি নিশ্চিত, একবার টিকে গেলে রোহিতকে আউট করা কঠিন। তাই খারাপ শট খেলতে বারণ করেছিলাম। প্রথমদিকে বল দেখে থিতু হওয়ার পরামর্শ দিই। দেখবেন রোহিত যে শটগুলি মারে তা ক্লিন হিট। আউটের ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে। এখন রোহিত সফল। তাই এখন যখন রোহিতের সঙ্গে কথা হয় তখন নানা বিষয়ে কথা হলেও সেখানে ক্রিকেট থাকে না। রোহিতের খেলা যখন ঠিক আছে তখন আর ক্রিকেট নিয়ে কেন আলোচনা হবে?

রোহিতের ক্যাপ্টেন্সি

বেশ কিছু বছর পর ভারতীয় দলে মুম্বইয়ের ক্রিকেটাররা এখন প্রথম একাদশে বেশি জায়গা করে নেওয়ার কারণ হিসেবে দীনেশ লাড বলছেন, বরাবরই মুম্বইয়ের ক্রিকেটারদের টেম্পারামেন্ট বাকিদের চেয়ে বেশি। তাই আগে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ক্রিকেটাররা সুযোগ পেয়েছেন, সফল হয়েছেন। এখনও হচ্ছেন। তবে মুম্বইয়ের ক্রিকেটাররা শুধু ভালো খেলছেন না, টেম্পারামেন্টের কারণে নিজেদের জায়গা শক্ত করতে পারছেন। রোহিত শর্মা চতুর্থ টি ২০-তে বিরাট কোহলি চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ার পর চাপের মুখে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মরণ-বাঁচন লড়াইয়ের স্নায়ুযুদ্ধে হারলে ভারতকে সেই ম্যাচে সিরিজ খোয়াতে হতো। লাড বললেন, স্কুল ক্রিকেট থেকেই দেখছি রোহিতের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার দারুণ গুণ রয়েছে। সব সময় জিততে চায়। কোনও দায়িত্ব দিলে তা পালন করতে সেরাটা দেবে। অনেক সময় কম রানে চার-পাঁচ উইকেট পড়ে গেলেও অধিনায়ক স্কুল ক্রিকেটেও বহু ম্যাচ জিতিয়েছে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে সবচেয়ে বেশি পাঁচবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করিয়েছে, এতে বেড়েছে আত্মবিশ্বাস। কার কাছ থেকে কীভাবে সেরাটা বের করে আনতে হয় সেটা জানে রোহিত। আবার বলছি, সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় বলে অসুবিধা হয় না। আমিও অবাক নই।

বিরাটকেই চাই

রোহিত শর্মার সঙ্গে বিরাট কোহলির টি ২০-তে ওপেন করা উচিত কিনা তা নিয়ে চর্চা চলছে। প্রথমবারেই বিরাট হিট দুজনের জুটি। বিরাট নিজে চান রোহিতের সঙ্গে বিশ্বকাপে ওপেন করতে। রোহিতও উপভোগ করছেন। যদিও বিশ্বকাপের আগেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিরাট ও রোহিত দুজনেই। গতকাল বিরাটও বলেছেন, শেষ টি ২০ ম্যাচে আমাদের ওপেন করা একটা কৌশলী পদক্ষেপ ছিল। সূর্যকুমার যাদবের মতো কাউকে যদি খেলানো যায় তাহলে আমি ওপেন করব। দীনেশ লাডও বিরাটের সঙ্গে একমত। তাঁর মতে, টি ২০-তে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় প্রথম দুজন ওপেন করলে ভারতের লাভ হবে। বাকিরাও চাপমুক্ত থেকে খোলা মনে খেলতে পারবে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে দল সিরিজ জিতেছে সেই দলই অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে সফল হবে বলে নিশ্চিত দীনেশ লাড।

More INDIA VS ENGLAND 2021 News