যেখানে ভ্যাকসিন অপচয় হচ্ছে, সেখানে কি সরকারের সকলের জন্য টিকাকরণ চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে?
‘একটি আদর্শ পরিস্থিতিতে, সমস্ত প্রাপ্তবয়স্করাই টিকা নিতে চান, কিন্তু এটা বুঝতে হবে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ডোজ রয়েছে। যদি ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে টিকাকরণ করাতে হয়, তবে প্রায় ৯০ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে, প্রত্যেকের জন্য ২বারের ডোজ ধরলে যার জন্য প্রয়োজন ২০০ কোটি ডোজ। এটা সম্ভব নয় এবং তাই আমাদের টিকাকরণ করতে হবে পর্যায়ক্রমে এবং দু'টি নীতি মাথায় রেখে। প্রথমত, আমাদের লেই সব ব্যক্তিদের টিকাকরণ আগে করতে হবে যাঁদের করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে, দ্বিতীয়ত যাঁরা ফ্রন্টলাইন কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী বা অন্যান্যরা যাঁরা কোভিড-১৯ লড়াইয়ে যুক্ত রয়েছেন। কারণ আমরা এই বাহিনীকে হারাতেচাই না এবং এঁদেরকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। এটা হয়ে যাওয়ার পর, আমরা সাধারণের জন্য টিকাকরণ শুরু করতে পারি, কিন্তু তার জন্য আগে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডোজের প্রয়োজন রয়েছে আর তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকাকরণ করা প্রয়োজন। অগ্রাধিকার গ্রুপগুলিকে যত দ্রুত সম্ভব বেশি করে টিকাকরণের মাধ্যমে সম্পন্ন করাই হল প্রধান চ্যালেঞ্জ। কোনও ভ্যাকসিন ডোজ যাতে অপচয় না হয় এবং এটা এমনভাবে করতে হবে যাতে কেউ টেক-স্যাভি যদি না হয় ও টিকা দেওয়ার জায়গায় পৌঁছতে না পারেন তবে তিনি যেন বাদ না পড়ে যান এমনভাবে বন্দোবস্ত করতে হবে।'
৫০ ঊর্ধ্ব জনসংখ্যা কি? তাঁদের সময় কখন আসবে?
‘আমরা একবার যখন টিপিং পয়েন্টে পৌঁছে যাব তখন আমরা বলতে পারব যে অধিকাংশ বয়স্ক, যাঁদের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে, তাঁদের টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৪৫-৫৯ বছরের মধ্যে যাঁদের উচ্চ-ঝুঁকি রয়েছে এবং কো-মর্বিটিস আছে, তাঁরাও টিকাকরণ গ্রহণ করে নিয়েছেন। এরপর আমি নিশ্চিত যে পর্যাপ্ত ডোজ থাকলে সরকার এই পদক্ষেপ করবে। আমি খুবই আশাবাদী এটা হতে খুব বেশি দেরি হবে না, দ্রুত সম্পন্ন হবে। প্রাথমিক নির্দেশনা অনুসারে, ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে এবং ৫০ বছরের নীচে একাধিক রোগ রয়েছে তাঁদের টিকাকরণ করানো হবে।'
উচ্চ পর্যায়ে ভ্যাকসিন ডোজ অপচয়ের ব্যাখা কি? ৬.৫ শতাংশের বিশাল সংখ্যায় সব ডোজ অপচয় হচ্ছে কেন?
‘আমার মনে হয় রাজ্যগুলিকে এ বিষয়ে কৌশল প্রয়োগ করতে হবে তাতে ভ্যাকসিন ডোজ অপচয় বন্ধ হবে। আমাদের এটা বোঝা দরকার যে ভ্যাকসিন ২০ ডোজের শিশিতে আসে, তাই ক'টা শিশি খোলা দরকার তার জন্য কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। দিনের শেষে আপনি কতজনকে টিকাকরণ করাবেন সেই অনুযায়ী শিশি খোলা দরকার, কিন্তু দেখলেন গোটা দিনে মাত্র ২ জন টিকাকরণ করিয়েছেন। তাই আপনি যদি ২ জনকে টিকাকরণ করান, তাহলে বাকি আটটি ডোজ নষ্ট হল। তাই প্রত্যেক পর্যায়ে কৌশল প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি, যাতে কতগুলি শিশি খোলা হচ্ছে এবং কতজন এসে টিকাকরণ করাচ্ছেন তার মধ্যে যাতে ভারসাম্য বজায় থাকে। মনে রাখতে হবে, বৃহৎ সংখ্যার একটা মানুষ সরাসরি টিকাকরণ কেন্দ্রে আসছেন, তাই আপনি জানেন না যে এরকম কতজন মানুষ টিকা নিতে আসছেন। তাই এক্ষেত্রে একটু ঝুঁকি নিতেই হবে, কারণ একজন যখন টিকাকরণ কেন্দ্রে সরাসরি টিকা নিতে আসছেন আপনাকে তাঁর জন্য শিশি খুলতেই হবে। তারপরে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তাঁকে টিকা দেওয়া উচিত কিনা। বর্তমানে, যারা আসছেন তাদের সবাইকে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
দেশে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ হওয়ার কারণ কি? এটা কি নতুন ভাইরাসের জন্য হচ্ছে এবং এটা কি প্রকৃত স্ট্রেনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী?
‘দেশে দ্বিতীয় ওয়েভ হওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে একটি কারণ অবশ্যই ভাইরাসের প্রকৃতি বদলেছে এবং তা আরও বেশি কার্যকর হয়ে উঠেছে। কিন্তু যদি ভাইরাসের প্রকৃতি বদলে গিয়ে থাকে এবং তা আরও বেশি সংক্রমক হয়ে ওঠে ও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটা ছড়াবে তখনই যখন আমরা সেটা ছড়াতে দেব। আমরা যদি কোভিড-১৯-এর যথাযথ বিধি অনুসরণ না করি তবে যে কোনও বিকল্প বা মিউট্যান্ট ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমরা দেখতে পাচ্ছি সাধারণ মানুষ মাস্ক পরছেন না, কোনও শারীরিক দুরত্ব মানছেন না, পার্টি করছেন, মাস্ক না পড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সামিল হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও ভাইরাসের বিকল্প সত্যি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে কারণ সুপার স্প্রেডং ইভেন্ট চলছে সর্বত্র এবং বিভিন্ন রাজ্যে তাই কোনা সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। মানুষ এখন কোভিড-যথাযথ আচরণ বিধি ভুলে গিয়েছে কিন্তু ভাইরাস গায়েব হয়ে যায়নি।'
সামনেই হোলি উৎসব, এটা কি সম্ভাব্য সুপার স্প্রেডার ইভেন্ট?
এটা সত্যিকারের আতঙ্ক। মানুষকে এই সময়টা বুঝতে হবে, হোলি উৎসব খুব সীমিতভাবে পালন হওয়া দরকার এবং অনেক নিষেধাজ্ঞা মেনে। আমরা বড় কোনও শোভাযাত্রা বা জন সমাগম করতে পারি না, হোলি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, কারণ এটি সুপার স্প্রেডিং ইভেন্ট। অতএব, আমি মনে করি যে জীবন রক্ষা, জীবন বাঁচানো এবং মানুষকে অসুস্থ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে আরও বৃহত্তর কল্যাণের দিকে তাকিয়ে আমাদের একটি সীমাবদ্ধ হোলি পালন করা উচিত।
দ্বিতীয় ওয়েভ প্রথম ওয়েভের চেয়ে ১.৩২ বেশি সাংঘাতিক। এর অর্থ এক ‘সংক্রমিত ব্যক্তি আরও বেশিজনকে সংক্রমণ করছে। এটা বলা কি ঠিক যে দ্বিতীয় ওয়েভ বেশি ভয়ঙ্কর?
‘দ্বিতীয় ওয়েভ আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে কিন্তু এটা সম্পূর্ণ আমাদের হাতে এই দ্বিতীয় ওয়েভটি নিয়ন্ত্রণ করা। আমাদের খুব আগ্রাসীভাবে দু'টো কি তিনটে বিষয় অনুসরণ করতে হবে। প্রথমত, যে সকল ব্যক্তি চিকাকরণের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছেন, তাঁরা এগিয়ে এসে নিজেদের টিকা যত দ্রুত সম্ভব করিয়ে নিন, যাতে আমরা পরবর্তী তালিকায় যেতে পারি। এটা খুব ভুল কাজ হবে যদি আমরা বয়স্কদের অগ্রাধিকার না দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে আগে টিকাকরণ করাই, কারণ বয়স্কদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। সুতরাং নাগরিকের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারের উভয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আগ্রাসী টিকা নীতি গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয়ত, আমাদের ফিরে যেতে হবে কোভিড-১৯ যথাযথ আচরণ বিধিতে এবং সাধারণ মানুষ যাতে কড়া করোনা বিধি মানে তা নিশ্চিত করতে হবে, তবেই সংক্রমণের চেইন ভাঙবে।
তৃতীয়ত, আমাদের ৬ মাস আগের জায়গায় ফিরে যেতে হবে। সংক্রমণ আটকাতে কড়াভাবে জোর দিতে হবে নজরদারি, মাইক্রো কনটেইনমেন্ট জোন, টেস্টিং, সনাক্তকণ, আইসোলেশনের ওপর। ভ্যাকসিন চলে আসার কারণে মানুষের মধ্যে উদাসীনতা তৈরি হয়েছে করোনা বিধি মানার ওপর এবং মানুষ মনে করছেন কোভিড-১৯ চলে গিয়েছে এবং আমরা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি। এটা এখন সত্যি নয়।'
করোনা ভ্যাকসিনের প্রভাব কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে? প্রত্যেক বছরই কি ভ্যাকসিন নিতে হবে?
‘এটা খুবই কঠিন প্রশ্ন কারণ আমরা এটা নিয়ে দীর্ঘ পর্যালোচনা করিনি যে টিকাকরণের পর কতদিন পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেহে থাকবে। এটা এক ভ্যাকসিনের টিকা থেকে অন্য ভ্যাকসিনের টিকার প্রভাব পৃথক হবে। তবে মডেল তথ্য থেকে জানা গিয়েছে যে আট মাস থেকে এক বছর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরে থাকবে। কিন্তু আমাদের এটা স্পষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন যে এটি দু'টি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত, ভ্যাকসিন আমাদের কতটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিচ্ছে এবং দ্বিতীয়ত, আপনি যে ভ্যাকসিন পেয়েছেন তার দ্বারা উৎপাদিত অ্যান্টিবডিগুলির ক্ষেত্রে ভাইরাস কতটা পরিবর্তিত হয়। তাই এটা অনুমান করা বেশ কঠিন।