স্কুলজীবনের যে সিদ্ধান্ত এক লহমায় বদলে দেয় শার্দূল ঠাকুরের কেরিয়ার

রোহিত শর্মার সঙ্গে শার্দূল ঠাকুরের কেরিয়ারেরও মিল রয়েছে। মুম্বইয়ের কোচ দীনেশ লাডের জহুরির চোখে পড়াতেই অন্য খাতে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যায় দুজনের কেরিয়ার। ভারতীয় দলের সহ অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে অধিনায়ক হিসেবে দেশকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। অন্যদিকে দারুণ ছন্দে থাকা শার্দূল ঠাকুরও অলরাউন্ডার হিসেবে নিজের জায়গা জাতীয় দলে পাকা করছেন। স্কুলজীবনে লাডের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বদলে দিয়েছে তাঁর ক্রিকেট-জীবন।

দীনেশের নজরে

শার্দূল ঠাকুরের বয়স তখন ১৫। ক্লাস টেনের ছাত্র। জন্ম মহারাষ্ট্রের পালঘরে। স্কুল ক্রিকেটের এক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল দীনেশ লাডের স্বামী বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। সেই দলের বিরুদ্ধেই শার্দূল ৭৮ রান করার পাশাপাশি ৫ উইকেট নেন। মাঠে ছিলেন শার্দূলের বাবা-মা। দীনেশ লাড তাঁদের পরামর্শ দেন ছেলেকে মুম্বইয়ে পাঠাতে এবং বরিভালির স্বামী বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনালে স্কুলে ভর্তি করার জন্য।

টার্নিং পয়েন্ট

ক্রিকেট প্রতিভার বিকাশের কথা ভেবে লাড এই পরামর্শ দিলেও দ্বিধায় পড়েন শার্দূলের বাবা-মা। কারণ, মুম্বই যাতায়াতেই নষ্ট হবে ৬ ঘণ্টা। তার উপর শার্দূলের তখন ক্লাস টেন। প্রথমে তাঁরা তাই রাজি হননি। বাড়ি ফিরে শার্দূলের কথা স্ত্রীকে জানান লাড। তাঁর ইচ্ছা ছিল শার্দূলকে বাড়িতে রেখে পড়ানো ও ক্রিকেট শেখানোর। দীনেশ লাড ওয়ান ইন্ডিয়া বেঙ্গলিকে জানালেন, আমার স্ত্রী শুনেই বলল বাড়ি তোমার। তোমার যখন ইচ্ছা তখন শার্দূল আমাদের বাড়িতেই থাকুক। সঙ্গে সঙ্গে শার্দূলের বাবা-মাকে ফোন করে জানান দীনেশ। তাঁরা আশ্বস্ত হন। এক বছর দীনেশদের বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা ও ক্রিকেটের পাঠ নেন শার্দূল। লাড এই সময়োপযোগী পদক্ষেপ না করলে হয়তো প্রতিভাবান শার্দূল হারিয়ে যেতেন। এক দুরন্ত অলরাউন্ডার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতো ভারতীয় ক্রিকেট।

শট বাছাইয়ে জোর

দীনেশ লাড বলেন, শার্দূল প্রথমদিকে নেমেই ঝোড়ো ব্যাটিং করতে চাইত। আমি শার্দূলকে বলি, বল বুঝে শট খেলো। তোমার মধ্যে ভালো অলরাউন্ডার হওয়ার গুণ রয়েছে। তাই উইকেটে থিতু হয়ে তারপর বড় শট খেললেই বড় রানও পাবে। সেই টিপস কাজে লাগিয়েই বাজিমাত করেছেন শার্দূল।

ছন্দে শার্দূল

ব্রিসবেন টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ভারত। সেই টেস্টে প্রথম ইনিংসে আটে নেমে মূল্যবান ৬৭ রান করেছিলেন, দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন সাত উইকেট। এরপর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি ২০ সিরিজেও ৮ উইকেট নেন। ডু অর ডাই চতুর্থ ম্যাচে ভারত জেতে ৮ রানে। আটে নেমে ৪ বলে ১০ রান করার পাশাপাশি ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন। শেষ টি ২০ ম্যাচেও শার্দূলের ঝুলিতে তিন উইকেট। শামি, বুমরাহদের অনুপস্থিতিতে নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরে দলে থাকার অন্যতম দাবিদার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। আজকের একদিনের দলেও রয়েছেন শার্দূল। বিজয় হাজারে ট্রফিতে মুম্বইয়ের হয়ে হিমাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে তিনি ৯২ রান করেছিলেন। চার ম্যাচে নেন সাত উইকেট। সেরা বোলিং রাজস্থানের বিরুদ্ধে ৫০ রানে ৪ উইকেট।

পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের টি ২০ সিরিজ জয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে শার্দূলের। ধারাবাহিকতা ধরে রাখলে টি ২০ বিশ্বকাপেও অলরাউন্ডার হিসেবে শার্দূলকে নিয়মিত দেখা যেতে পারে প্রথম একাদশে। দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে তাঁর দক্ষতা ভারতীয় দলকে সমৃদ্ধ করছে। শার্দূল যে ছন্দে রয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট দীনেশ লাড। তবে রোহিতের মতোই শার্দূলকে খুব বেশি পরামর্শ দেন না তিনি। দীনেশ লাডের কথায়, শার্দূল যে ছন্দে রয়েছে তাতে খুব বেশি পরামর্শ দিতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কেন না, খুব ভালো বোলিং করছে শার্দূল। একটা কথাই শার্দূলকে বলি, ফোকাস ঠিক রাখো। শুরুর দিকে টেম্পারামেন্টে সমস্যা ছিল। তবে সেই খামতিও পুষিয়ে ফেলেছে শার্দূল।

More INDIA VS ENGLAND 2021 News