সামান্য চোট বিরাটের, তবে তেতে আছেন আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে

আমেদাবাদের মোতেরায় নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডকে আট রানে হারিয়ে সিরিজ ২-২ করেছে বিরাট কোহলির ভারত। তবে প্রশ্নের মুখে ফের আম্পায়ারিং। সূর্যকুমারের বিতর্কিত আউটের পর সফট সিগন্যাল কল নিয়ে সরব হলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। সফট সিগন্যাল হলো কোনও লো বা ক্লোজ ক্যাচের ক্ষেত্রে সংশয় থাকলে আগে মাঠে আম্পায়ারদের একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তারপর তা তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে পাঠানোই নিয়ম। তৃতীয় আম্পায়ার যদি সেই সিদ্ধান্ত ভুল বলে কোনও প্রমাণ পান রিপ্লে দেখে তাহলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। নয়তো সূর্যকুমারের মতো ক্ষেত্রে যেখানে তৃতীয় আম্পায়ার রিপ্লে দেখেও বুঝতে পারেননি আউট কিনা, সেটা মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের কাছে পাঠানো হয়। সূর্যর ক্ষেত্রে সফট সিগন্যাল বা মাঠের আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত ছিল আউট, তাই সূর্য আউট হন। যদিও হর্ষ ভোগলের দাবি, রিপ্লেতে থ্রি ডি ইভেন্টতে টু ডি হিসেবে দেখা হয়। ফলে আম্পায়াররা দেখেন বলের নীচে আঙুল ছিল কিনা। যদিও তা বোঝা যায় না অনেক সময়। তাই এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে থ্রি ডি ক্যামেরা প্রয়োজন।

সরব বিরাট

বিরাট কোহলি বলেন, টেস্ট সিরিজের সময়ও একটি ক্যাচ অজিঙ্ক রাহানে তালুবন্দি করেছিলেন। তবে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না বল মাটি ছুঁয়েছিল কিনা। আমি রাহানের পাশেই ছিলাম। ৫০-৫০ অবস্থা বুঝে তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। ফিল্ডার যখন নিজেই বুঝতে পারেন না পরিষ্কারভাবে ক্যাচ ধরেছেন কিনা, তখন স্কোয়ার লেগে দাঁড়ানো আম্পায়ারের পক্ষে তা বোঝা অসম্ভব। এক্ষেত্রে সফট সিগন্যাল খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। আমি বুঝতে পারি না কেন আম্পায়ারদের জন্য আমি জানি না বা আমি বুঝতে পারিনি গোছের কোনও কল থাকবে না? বিষয়টা আম্পায়ারস কলের মতো। এই ধরনের সিদ্ধান্ত ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে এমন বড় ম্যাচে। আজ সফট সিগন্যাল কল আমাদের বিপক্ষে গেল, কাল অন্য কারও বিপক্ষে যেতে পারে। এই ধরনের সিদ্ধান্তে আরও স্বচ্ছতা এলে খেলার পক্ষেই মঙ্গল। উত্তেজক ম্যাচের কথা ভেবে ভাবনায় স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন।

সূর্যর প্রশংসায় বিরাট

ম্যাচের সেরা সূর্যকুমার যাদব। তাঁকে তিনে পাঠানোর জন্য অধিনায়ক বিরাট কোহলির প্রশংসা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূর্যর প্রশংসা করে বিরাট বলেন, প্রথম ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে সূর্য অসাধারণ খেলেছেন। ঈশান কিষাণের মতোই। আইপিএলে খেলার সুবাদে তাঁরা ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে সক্ষম। এই সিরিজের পর বিশ্বকাপের আগে আমাদের এখনও অবধি কোনও টি ২০ ম্যাচ নেই। তাই তাঁরা যাতে আত্মবিশ্বাসী থাকতে পারে সেটা নিশ্চিত করতেই চাইছি। প্রথম ব্যাট করতে গিয়ে তিনে নামা সহজ নয়। তবু আমরা সূর্যর ব্যাটিং দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। তাঁর কর্তৃত্ব নিয়ে এমন ব্যাটিংয়ের সুবাদেই শ্রেয়স, পন্থ, হার্দিকের হাত খুলে খেলা সহজ হয়ে গিয়েছে।

বোলারদের প্রশংসা

পাওয়ারপ্লে থেকেই ইংল্যান্ডকে যেভাবে চাপে রাখা সম্ভব হয়েছিল তাতে খুশি ভারত অধিনায়ক। শার্দূল ঠাকুরের পাশাপাশি বাকি বোলারদেরও প্রশংসা করে বিরাট বলেন, আমি এই ইয়ংস্টারদের ফ্যান। হার্দিক আজ চার ওভার বল করা আমাদের স্বস্তি দিয়েছে। সেটা না হলে আজ অসুবিধা হতো। নতুন বলে বল করার পাশাপাশি ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগে টানা বল করতে পারেন হার্দিক। জেসন রয় বা সাম কারানদের তাই চাপে রাখতে পেরেছেন হার্দিক। শেষের দিকে তাঁর ভূমিকাও ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বিরাটের চোট

ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের ১৫ ওভারের শেষে মাঠ ছাড়েন বিরাট। তখন থেকে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব সামলান রোহিত শর্মা। আইপিএলের সফলতম অধিনায়ক স্নায়ুযুদ্ধে সঠিক সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছেন আজও। মাঠ ছাড়া প্রসঙ্গে বিরাট বলেন, দৌড়ে গিয়ে বল ছুড়তে গিয়ে পায়ে সামান্য চোট লাগে। একদিন বাদেই ফের ম্যাচ। তাই এই চোটকে আর বাড়তে দিইনি। পরের ম্যাচে খেলতে অসুবিধা হবে না।

শার্দূল, সূর্যর বাজিমাত

ব্যাট হাতে চার বলে গুরুত্বপূর্ণ ১০ রান। ১৭তম ওভারে বল করতে এসে পরপর বেন স্টোকস ও ইয়ন মর্গ্যানকে ফেরানো। শেষ ওভারে স্নায়ুযুদ্ধ জয় করে আরও একটি উইকেট নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করা। ডেথ ওভারে আরও একজন বিশেষজ্ঞ বোলার পেয়ে গেল ভারত। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডেথ ওভারে বোলিং উপভোগ করছেন শার্দূল ঠাকুর। তিনি বলেন, শিশিরে ভেজা বলে শেষ ওভার করা সহজ ছিল না। তবে নিশ্চিত ছিলাম কয়েকটা ডট বলেই কাজ হাসিল করা যাবে। সেটা হওয়ায় ভালো লাগছে। আরেক মুম্বইকার তথা ম্যাচের সেরা সূর্যকুমার যাদব বলেন, এই ম্যাচে আমার ব্যাটিং দলের জয়ে কাজে লাগায় ভালো লাগছে। টিম ম্য়ানেজমেন্ট আর বিরাট কোহলি বলেছিলেন, আইপিএলে যেমন খেলি খোলা মনে সেভাবেই খেলতে। বাড়তি কিছু না করে স্বাভাবিক খেলাতেই মনোনিবেশ করেছিলাম।

ইংল্যান্ড তবুও আত্মবিশ্বাসী

২০২০ সাল থেকে এই ম্যাচ অবধি রান তাড়া করে ১১টি টি ২০ ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে হারল বিশ্বের এক নম্বর দল ইংল্যান্ড। হার যথাক্রমে ১, ৫ ও ৮ রানে। এই ম্যাচের অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে কাজে লাগবে ভেবেই সন্তুষ্ট ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যান। তিনি মনে করেন, বেয়ারস্টো ও স্টোকসের মতো আর একটা বা দুটো পার্টনারশিপ হলে হারতে হতো না। ১৬ ও ১৭ ওভারে ৭-৮ বলের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারানোই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয় বলে দাবি মর্গ্যানের। তবে তিনি আত্মবিশ্বাসী, শনিবার সিরিজের শেষ ম্যাচ জেতার ব্যাপারে। এই ম্যাচটি ফাইনাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। মর্গ্যান বলেন, দেশের বাইরে জেতা নানা কারণে সব সময় কঠিন। তবে শেষ ম্যাচটা জিততে পারলে ভালোই হবে।

More INDIA VS ENGLAND 2021 News