সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : জন্মগত বিশেষ ভাবে সক্ষম। যদিও একে শুধু সক্ষম বলা যায় না। ডানহাত অকেজো। তাই নিয়েই ব্রিটিশের তাঁবেদারকে গুলি করে হত্যা। নির্দ্বিধায় প্রাণ দিয়েছিলেন ফাঁসি কাঠে। খুব একটা চেনেও না অগ্নিযুগের এই বিপ্লবীকে। তিনি চারুচন্দ্র বসু।
জন্ম ১৮৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খুলনা জেলার শোভনা গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই প্রতিবাদী। হাওড়ায় একটি ছাপাখানায় সাধারণ চাকরি করতেন। সঙ্গে চলত বিপ্লব। তাঁর ভয়ঙ্কর বিপ্লবের সামনে পড়ে গিয়েছিল আশু উকিল। বিপ্লবীর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সেরা ছিলেন এই উকিল। বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতেন বলে বলে। ব্রিটিশ প্রশাসনের আদরের পাত্র হয়ে উঠলেও অন্যদিকে তিনি বিপ্লবীদের মহাশত্রু। আলিপুর ও মুরারীপুকুর বোমা হামলাসহ বহু মামলায় ইংরেজ পক্ষের উকিল ছিলেন এই আশুতোষ বিশ্বাস। ভারতীয় হয়ে ইংরেজদের তাঁবেদারি! শিক্ষা দিয়েছিলেন বিশেষ ভাবে সক্ষম যুবক। একদম পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি এবং আশু উকিল খতম।
ঘটনা কেমন? ১৯০৯-এর ১০ ফেব্রুয়ারি। ডান হাতটাই সমস্যার, সেই হাতেই চারুচন্দ্র শক্ত করে বেঁধে নিয়েছিলেন ওয়েবলি মার্ক ফোর রিভলবর। গায়ে চাদর দিয়ে শীতের সকালে আশু উকিলের যমদূত হয়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি। সাব আরবান ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত প্রাঙ্গণে তখন আমজনতার ভিড় শুরু হয়ে গিয়েছে। সকাল গড়িয়ে বিকেল। শেষ পর্যন্ত দেখা পাওয়া যায় উকিলের। ছুটে যায় যুবক। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাম হাত দিয়ে ট্রিগার চাপলেন চারু। বুলেট ভেদ করল শরীর। আদালতেই সাঙ্গ আশু উকিলের ভবলীলা।
শোধ নিয়ে চারু প্রানপন ছুটেছিলেন। তবে কিছুদূর যাওয়ার পরেই তাঁকে ঘিরে ফেলে পুলিশ। ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার। লাভ হয়নি। তাঁর সহকর্মী এবং সংগঠন সম্পর্কে কোনও তথ্য পায়নি ইংরেজরা। দ্রুত সম্পন্ন হয়েছিল বিপ্লবীর বিচারপর্বও। ১৫ ফেব্রুয়ারী আলিপুর কোর্টের বিচারক এফআর রো চারুচন্দ্রকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। বিচারক জিজ্ঞাসা করেছিলেন ‘তোমার আর কিছু বলার আছে?’ নিরুত্তাপ যুবক বলেছিলেন , ‘না কিছুই আমি চাইনে। সেশন-টেশনের প্রয়োজন নেই। বিচার করে কালই আমাকে ফাঁসি দাও। এটা ভবিতব্য যে, আশু বাবু আমার গুলিতে নিহত হবেন এবং আমি ফাঁসি কাঠে প্রাণ দেব।’ ১৯০৯ সালের ১৯ মার্চ আজকের দিনে মাত্র ২০ বছর বয়সে ফাঁসি হয় চারুচন্দ্র বসুর।
চারুচন্দ্র বসুর বিবাহ হয়েছিল তেরো বৎসর বয়স্ক বালিকা কিরনবালার সঙ্গে। স্ত্রী’র সম্পর্কে আক্ষেপ করে চিঠিতে লিখেছিলেন, “আর কয়দিন পরে আমার অস্তিত্ব জগৎ হইতে লোপ পাইবে। তাহাতে আমি বিন্দুমাত্র দুঃখিত নই। কেবলমাত্র একটির জন্য দুঃখিত। একটি অভাগিনী তেরো বৎসর বয়স্কা বালিকাকে দীনহীন অবস্থায় এই সংসার সমুদ্রে ভাসাইলাম। কিন্তু আশান্বিত প্রানে আজ তাহাকে আপনাদের কাছে অর্পন করিলাম। তাহার প্রতি যেন আপনাদের দৃষ্টি থাকে।”
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.