বাংলা বিজয়ে মহা সমারোহে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁর এখন পাখির চোখ পশ্চিমবঙ্গ। ছলে বলে কৌশলে যেভাবেই হোক এ রাজ্য জয় করতে হবে তাঁকে। নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দেশ চুলোয় যাক, পশ্চিমবঙ্গ তাঁর চাই। তার জন্য সমস্ত শক্তি নিয়ে নেমেছেন তিনি। বিশ্বস্ত সেনাপতি অমিত শাহকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন। তিনিও বীর বিক্রমে ছুটে বেড়াচ্ছেন। নরেন্দ্র মোদি এ রাজ্যে ঘুরে গিয়েছেন বার দুয়েক। আবার আসবেন। ১৪ দিনে ১৯টা সভায় ভাষণ দেবেন। জনমনোরঞ্জনের চেষ্টা করবেন। তাতেও যে চিঁড়ে ভিজবে তা মনে হয় না। দুদিন আগেই বলেছি, এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শাসনকালের ১০ বছরে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা বিরাট প্রাপক গোষ্ঠী গড়ে তুলেছেন। বেনিফিশিয়ারি গ্রুপ। যারা সরকারের কাছে মুফতে অনেক কিছু পেয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে বিশাল সংখ্যায় আছে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত এবং নিম্নবর্গের মানুষ। সেটাই এখন মমতার ভোট ব্যাংক। এই ভোটব্যাংকে থাবা বসাতে হলে বিজেপিকে সাধারণ মানুষকে এমন কিছু পাইয়ে দিতে হবে যা মমতার দেওয়া সুযোগ-সুবিধার থেকে বেশি মনে হবে। শোনা যাচ্ছে, বিজেপি নাকি অনেককেই নগদ টাকা পয়সা দিচ্ছে। স্থান কাল পাত্র বুঝে। সত্যি মিথ্যা জানি না, শুনেছি। যদি সত্যিও হয় তাহলেও এটা গোপন ডিল। ওপন নয়। তা দিয়ে হয়তো কিছু ভোট কেনা যাবে, কিন্তু রাজ্যজয় সম্ভব বলে আমি মনে করি না। ওপন না হলে ফলাও করে প্রচার করা যাবে না। আর ফলাও করে প্রচার করার মত বিজেপির হাতে যা কিছু আছে তাতে ভবি ভোলবার নয়। বিজেপির একমাত্র শক্তি কেন্দ্রে তাদের সরকার। ওদের কথা, এ রাজ্যকে সোনার বাংলা তৈরি করতে হলে ডবল ইঞ্জিন সরকার দরকার। কিন্তু ডবল ইঞ্জিন সরকার রাজ্যগুলোর অবস্থা যে কী তাও এখানকার মানুষ জানে। আগেও বারবার বলেছি, আবারও বলছি, প্রতিশ্রুতি নয়, প্রাপ্তি চাই। ভোটের ম্যানিফেস্টো প্রকাশ করে সেই বিরাট ভোটব্যাংককে সলিড করে নিতে আরও কয়েক কদম এগিয়ে গেলেন মমতা।
*প্রতিটি পরিবারের অন্দরমহলে ঘাঁটি গেড়েছেন মমতা*
আমাদের খবরের কাগজে একটা চালু কথা ছিল। যে কাগজ যত বেশি ঘর ধরতে পারবে, সেই কাগজের জোর ততবেশি। অর্থাৎ জনপ্রিয়তা বেশি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রথম থেকেই ঘর ধরার ব্যাপারে বেশি উদ্যোগী। তিনি জানেন অন্দরমহলে ঢুকতে পারলে তাঁকে ঠেকাবে কে? এমনিতেই সমস্ত ব্যাপারে তিনি কন্যাদের এগিয়ে রাখেন। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী এইসব তো আছেই, গত বেশ কিছুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, গৃহকর্ত্রীই কার্যত হেড অফ দ্য ফ্যামিলি। নিখরচায় চিকিৎসার জন্য যে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, সেই কার্ডে কিন্তু বাড়ির মূলত বধূমাতা সর্বেসর্বা। তার তত্ত্বাবধানেই সবকিছু। এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে সব পরিবারের গৃহকর্ত্রীর জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাসে ৫০০ টাকা করে তাদের ভাতা দেওয়া হবে। ম্যানিফেস্টোতে আরও একটি বিষয়ও রাখা হয়েছে যার প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপকভাবে পড়বে। স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড। বার্ষিক ৪ শতাংশ সুদে ১০ লক্ষ টাকার লোন নেওয়ার সুযোগ। উচ্চশিক্ষার জন্য এখন অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেয়। নিতে বাধ্য হয়। তবে তার হ্যাপা অনেক। পেতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে অনেক খরচও হয়ে যায়। সরকার গ্যারান্টার হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই ঋণের ব্যবস্থা করবে। নবীন ভোটারদের কাছে এ এক বিরাট প্রাপ্তির সুযোগ। তাদের অধিকাংশই চাইবে এই সরকারই যেন ক্ষমতায় থাকে। বাংলার বাড়ি প্রকল্পে দেওয়া হবে আরও পাঁচ লক্ষ স্বল্পমূল্যের আবাসন। বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে যাবে রেশন। এমন আরও অনেক বিষয় ম্যানিফেস্টোয় আছে, যার মধ্যে প্রচুর প্রাপ্তির হাতছানি।
*বিজেপি কি মমতাকে ছেড়ে দিচ্ছে*
কয়েকদিন বাদেই ভোট শুরু। আপাতভাবে দেখে মনে হচ্ছে বিজেপি তৃণমূলকে ছেড়ে দিচ্ছে। বঙ্গ বিজয়ে কোমর কষে নামতে পারছে না তারা। খুব অগোছালো ভাব। ঘরের ঝামেলা, বাইরের ঝামেলা সামলাতে হিমশিম। মমতার বিরুদ্ধে লড়তে হলে তীব্র জেহাদী শক্তি দরকার। তা তো চোখে পড়ছেই না। নাকি বিজেপি তলে তলে এমন খেলা খেলছে যার আঁচ কেউ পাচ্ছে না। আমি তো পাইনি। আমার তো এসব দেখে মনে হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস এবারও দু'শোর বেশি সিট পেয়ে যাবে। তারপরও যদি দেখা যায় বিজেপি মারাত্মক ভালো রেজাল্ট করেছে, তাহলে বুঝতে হবে নরেন্দ্র মোদি তলে তলে এমন খেলা খেলেছেন যা বোঝা শিবেরও অসাধ্যি।