সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : কার ব্রিগেড বড়, কার ব্রিগেডে লোক হয়নি তা নিয়ে বিস্তর তরজা। কোনও কোনও রাজনৈতিক দলকে আবার মাঠ ভরতি দেখাতে ছবির রঙ বদল করতে দেখা গিয়েছে এমনকি পুরনো কোনও এক সভার ভিড় অংশের ছবি সোশ্যাল মাধ্যমে শেয়ার করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু সেদিন কোনও দল দেখেনি মানুষ, কোনও রঙ বোঝেনি, সামনে কোনও নির্বাচনে নিজের দলকে জেতার তাগিদ ছিল না। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ‘জয় বাংলা’ ডাক শুনতে ছুটে এসেছিলেন ব্রিগেডের মাঠে। উপচে পড়েছিল ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড।
১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডন থেকে দিল্লীতে যাত্রাবিরতি করে ঢাকা ফেরেন সেদিনই। প্রাথমিকভাবে কথা ছিল দিল্লী থেকে ঢাকা আসার পথে কলকাতায় আরেকবার যাত্রা বিরতি করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবেন বঙ্গবন্ধু। কলকাতার দমদম বিমান বন্দরসহ অন্যান্য প্রটোকলও প্রস্তত রাখাই ছিল। কিন্তু সে বার আসা হয়নি। দেশে ফিরে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভার গ্রহন করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বিদেশ সফর করেন পশ্চিমবঙ্গে। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। লোক সমাগমের দিক থেকে সে জনসমুদ্রের আয়তনের রেকর্ড আজ পর্যন্ত অক্ষুন্ন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী গরদের শাড়ি পড়ে তাঁর ভাষণের অনেকখানিই বাংলায় করেছিলেন সেদিন
সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার বাংলা তিতুমীরের বাংলা, আমার বাংলা সূর্য সেনের বাংলা, আমার বাংলা সুভাষ বসুর বাংলা, আমার বাংলা সোহরাওয়ার্দীর বাংলা। এ বাংলার মাটি পলি দিয়ে গড়া, বড় নরম মাটি। বর্ষায় মাটি বড় নরম হয়ে যায়। কিন্তু চৈত্রের কাঠফাটা রোদে মাটি এমন কঠিন শিলায় পরিণত হয়, তখন তা দিয়ে যেকোনও ষড়যন্ত্র আর যেকোনও ষড়যন্ত্রকারীর মাথা ভাঙা যায়। আমার দেশের মানুষও এই মাটির মতো। তারা শান্ত, তারা শান্তিপ্রিয়, কিন্তু প্রয়োজনের মুহূর্তে তারা কঠিন।’
ভাষণ দেওয়ার সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরদিন অটুট থাকবে।’ বিশ্বের কোনও শক্তি পারবে না এই বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে।’ জনসমুদ্রে গগনবিদারী করতালির মাঝে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট করতে সাম্রাজ্যবাদের খেলা চলতে দেওয়া হবে না। লাখো জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বিশ্বের কোনও শক্তি এ স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে পারবে না। বিশ্বের ইতিহাসে আমাদের মতো এত বড় মূল্য দিয়ে আর কেউ স্বাধীনতা অর্জন করেনি। বহু কষ্টে অর্জিত এই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের শেষ মানুষটিও প্রাণপণ সংগ্রাম করবে।’
ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব দিনের পর দিন উত্তরোত্তর জোরদার হবে। বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত সরকার যে নীতি গ্রহণ করেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের কর্মপন্থার ন্যায্যতা যথেষ্টভাবে তা প্রমাণ করে।’ ইন্দিরা গান্ধী আরও বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাকে এবার অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সংগ্রাম করতে হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনে বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করলেও বাংলাদেশ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সক্ষম হবে। ভারতও প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে দিন কাটিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও দুর্দিন আসলে আমরা তার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।’
কলকাতা ও হাওড়ার ১০টি পার্কে একইসঙ্গে লাখ লাখ জনতা সেদিন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনেন। প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় এসব পার্কে লাউড স্পিকার লাগানো হয়। রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে লোক এসেছে সেদিন বঙ্গবন্ধুকে একবারতি দেখবেন বলে। জনসভা শেষ হওয়ার পরেও প্যারেড গ্রাউন্ডের দিকে মানুষের ঢল থামেনি।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.