মমতাকে ভোট বৈতরণী কি পার করাতে পারবে ‘দুর্গাবাহিনী’! নজর মহিলা ভোটারে

দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এবার বিজেপির কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে চলেছেন। তাঁর ১০ বছরের শাসনামলে তিনি যেমন জনমুখী নানা পরিকল্পনা নিয়েছেন, তেমনই তাঁর দলের নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও প্রখরও। এই অবস্থায় মমতার উদ্ধারকর্তা কি হবে তাঁর দুর্গাবাহিনী, তা নিয়েই শুরু হয়েছে আলোচনা।

মহিলাদের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণে আশার আলো মমতার

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও বিগত ১০ বছরে রাজ্যে সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী ইত্যাদির মতো অনেকগুলি নারীকেন্দ্রিক কল্যাণমূলক পরিকল্পনা নিয়েছেন। গত বছর বিহার বিধানসভা নির্বাচন তিনটি পর্যায়ের সর্বশেষ দু'টিতে মহিলাদের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ দেখা গিয়েছিল। এবার বাংলাতেও কি সেই প্রবণতাই ভরসা দেবে মমতাকে।

মহিলাদের অংশগ্রহণের ইতিহাসে লুকিয়ে যে আভাস

নীতীশ কুমার সরকার নারীকেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি প্রকল্প চালু করেছিলেন। তার ফলে মহিলা ভোটাররা এগিয়ে এসেছিলেন নীতীশ কুমারের সমর্থনে। তাঁকে কার্যত রক্ষা করেছিলেন, ভোট বৈতরণী পার করে দিয়েছিলেন ২০২০-তে। তাহলে দিদি কি একই সুবিধা পাবেন? পশ্চিমবঙ্গে বিগত কয়েকটি নির্বাচনে মহিলাদের অংশগ্রহণের ইতিহাস সেই আভাসই কিন্তু দিচ্ছে।

গত তিন দশকে রাজ্যজুড়ে নারীদের ভোটদান বেড়েছে

গত তিন দশকে রাজ্যজুড়ে নারীদের ভোটদান ক্রমাগত বাড়ছে। ১৯৮০-এর দশক থেকেই মহিলা ভোটারদের ভোটদানের প্রবণতা ব্যাপক বেড়েছে। তামিলনাড়ু, বাংলায় ১৯৮০-র দশকের শুরুতে মহিলাদের অংশগ্রহণ ৭০ শতাংশ ছাড়িয়েছিল। তবে, বিহার-উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যগুলিতে ১৯৯০-এর দশক থেকে মহিলা ভোট বেড়েছে, কিন্তু এখনও মহিলা ভোটাররা দুই-তৃতীয়াংশে পৌঁছয়নি।

বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের বিগত দশ বছরের প্রবণতা

আমরা যদি বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের বিগত দশ বছরের প্রবণতাগুলি পর্যালোচনা করি তবে এটি স্পষ্টভাবেই দৃশ্যমান যে, উভয় রাজ্যেই মহিলাদের ভোটগ্রহণ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিহার এখনও বাংলার থেকে অনেক পিছনে। গত দশকে, বিহারে মহিলাদের ভোটগ্রহণ ছিল ৫৮ শতাংশ এবং পশ্চিমবঙ্গে ছিল ৮৪ শতাংশ।

মহিলাদের ভোটদান পুরুষদেরও ছাড়িয়ে গেছে

বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের পুরুষ ও মহিলাদের টার্নআউটকে তুলনায় দেখা যাচ্ছে, বিহারই প্রথম রাজ্য, যেখানে মহিলাদের ভোটদান পুরুষদেরও ছাড়িয়ে গেছে। বিহারের ২০১০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মহিলাদের ভোটদান পুরুষদের ভোটদানের চেয়ে তিন শতাংশ বেশি ছিল। সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হ'ল রাজ্যের বিগত বিধানসভা ভোটের তুলনায় মহিলাদের অংশগ্রহণ ১০ শতাংশ বেড়েছে।

মহিলাদের সমর্থন পেতে পারেন যে কারণে

২০১১ সালে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল বামফ্রন্টকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে, তখন মহিলাদের অংশগ্রহণ পুরুষদের ছাড়িয়ে যায়। এমনকি ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। এখন দেখার ২০২১-এ সেই ধারা বজায় থাকে কি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের মহিলাদের সমর্থন পেতে পারেন নারীকেন্দ্রিক কল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে।

মাত্র তিনটি রাজ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মহিলা ভোটার

তৃণমূল এবার ৫০ জন মহিলা প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছে, যা মোট আসনের ছয় ভাগের এক ভাগ। যে কোনও বিধানসভা নির্বাচনে কোনও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে বিশেষত একটি বৃহৎ রাজ্যে এই সংখ্যাটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। পশ্চিমবঙ্গের মহিলা ভোটাররা মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক ৪৯ শতাংশ। তামিলনাড়ু, কেরল এবং অন্ধ্রপ্রদেশে মাত্র তিনটি রাজ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মহিলা ভোটার রয়েছেন।

একুশেও কি মমতাকে অধিকমাত্রায় সমর্থন করবেন মহিলারা

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মহিলা ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল ৮২ শতাংশ।পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের ক্ষেত্রে মহিলাদের নির্বাচনী অংশগ্রহণ বেশি থাকার পরেও প্রশ্ন উঠেছে যে মহিলারা বিগত সময়ের মতো মমতাকে অধিকমাত্রায় সমর্থন করবেন কি না। বিহারে এনডিএর মতো বাংলায় তৃণমূল সরকার কি সমর্থন পাবে?

অভিষেকের সভা শেষ হতেই পুরুলিয়ায় তুলকালাম, ভন্ডুল বিজেপির রথযাত্রা, তুমুল অশান্তি দুই শিবিরে

More MAMATA BANERJEE News