সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : ফাল্গুন সংক্রান্তিতে গ্ৰামের কচি-কাঁচারা মাতল ঘেঁটু পুজোতে। দলবদ্ধভাবে ঘেঁটুর পালকি সাজিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে “ঘেঁটু-গান” শুনিয়ে চাল আলু পয়সা আদায় করল তারা। তারপর ওই অর্থেই হল তাদের মহানন্দের বনভোজন।
আকন্দ ঘেঁটু ও ধুতরো শিবঠাকুরের পরম প্রিয় ফুল। পুরাণ-অনুসারে এই ঘেঁটু বা ঘন্টাকর্ণ’র সঙ্গে শিবের কী সম্পর্ক কেমন? জানা যাচ্ছে, ঘন্টাকর্ণ ছিল শিবভক্ত এক পিশাচ বা রাক্ষস। কিন্তু সে এতটাই বিষ্ণুবিদ্বেষী ছিল যে বিষ্ণুর নাম যাতে তার কানে না ঢোকে, সেজন্য সে দুকানে দুটো ভারি ঘন্টা বেঁধে রাখতো। তাই তার এই অদ্ভুত নাম। পিশাচজন্ম থেকে মুক্তি পাবার জন্য সে মহাদেবের কাছে কাকুতি-মিনতি করলে, মহাদেব তাকে উল্টে নারায়ণের স্তব-স্তুতি করতেই পরামর্শ দিলেন। শিবের পরামর্শ মাথা পেতে নিলো ঘণ্টাকর্ণ। বহুদিন পরে নারায়ণ, কৈলাশে মহাদেবের সঙ্গে দেখা করতে আসার পথে, বদ্রীকাশ্রমে তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আরাধনারত ঘণ্টাকর্ণকে দেখতে পান। তৃপ্ত, সন্তুষ্ট নারায়ণ ঘণ্টাকর্ণকে পিশাচ-দশা থেকে মুক্তি দেন। ফাল্গুন-সংক্রান্তিতে সেই ঘেঁটু বা ঘণ্টাকর্ণেরই পুজো হয়।
ঘেঁটুর আলাদা গান হয়, যেমন ‘ঘেঁটু ঘেঁটু কতদূর যায়। কুড়কুড়ি পেরিয়ে কলকাতা যায়। কলকাতাতে কবকোবানি,সদাই বুড়ির ঝনঝনানি।’ আবার ‘যায় ঘেঁটু যায় গৃহস্থের বাড়ি, ঘেঁটুকে দাও গো পয়সা কড়ি। ও ঘেঁটু তোর ক বেটা? সাত বেটা সতীনে। ফুল তুলতে গেলিনে? ফুলের নামে একি পাই, হাবড়ি ঝুবড়ি আদা পাই। আদা দিয়ে মাল্লাম টান, শিগগিরি দাও গো ঘেঁটুর দান’। ওই দান দিয়েই হবে বনভোজন।
আবার বিজ্ঞান অনুযায়ী, ঘেঁটু, ঘণ্টাকর্ণ, ভাট, পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশের এক অতি পরিচিত ভেষজ গুল্ম। হিন্দিতে নাম ভাঁট, টিনাভার্মি। সাঁওতালিতে – খারবারি। বৈজ্ঞানিক নাম, ক্লেরোডেনড্রাম ভিসোকাম ভেন্ট। রাস্তার ধারে বা জঙ্গলের কিনারায় ৪-৫ ফুট উচ্চতার এই গুল্মজাতীয় ঝোপাকৃতি গাছটি জন্মায়। পাতা ৪-৮ ইঞ্চি লম্বা হৃৎপিন্ডাকার, ডগার দিক ক্রমশঃ সরু। শীতের শেষদিকে ফুল ফোটে। পূষ্পদন্ড ৮-১২ ইঞ্চি লম্বা ও বহু শাখায় বিভক্ত। বৃতি লাল, ফুলের পাপড়ি ঈষৎ লাল আভাযুক্ত সাদা। ফল সামান্য চ্যাপ্টা গোলাকৃতি, পাকলে ঘোর কালো। ফুল ফোটা অবস্থায় সুগন্ধে ম ম করে চারিদিকের বাতাস, দেখতেও অত্যন্ত নয়নাভিরাম। পাতা মূল ফুলসহ সমগ্ৰ উদ্ভিদই অসামান্য ভেষজ গুণসম্পন্ন।
সংক্ষেপে এটি রক্তশোধক, বলকারক, হজমশক্তি বৃদ্ধিকারক, কৃমি ও চর্মরোগনাশক, রজঃরোধক, কম্পজ্বর, সর্দি কাশি, গেঁটেবাত, গলরোগ ও টিউমারে কার্যকরি। সযত্নে সংরক্ষণ তথা রক্ষা করার প্রয়োজনে এহেন ‘অমূল্য আগাছা’ ঘেঁটু বা অন্যান্য ঔষধি গাছ গ্ৰাম্যজীবনে লৌকিকভবেও প্রবলভবে উপস্থিত।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.