সুমন ভট্টাচার্য: রবিবারের ব্রিগেডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘সোনার বাংলা’ গড়তে কী কী বলবেন। তিনি কি আবারও বিজেপির শাসনে ‘ডবল ইঞ্জিন’ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেবেন? কিন্তু তা হলে তো ত্রিপুরার উদাহরণ টেনে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল এবং বামেরাও বিজেপিকে বিঁধবে। আর যদি তিনি পশ্চিমবঙ্গকে শিল্পে বা কর্মসংস্থানে উন্নত করার কথা বলেন, তাহলে গত ছ’বছরে বিজেপি সরকারের ‘পারফরম্যান্স’ আবার আতস কাচের তলায় এসে পড়বে।
২০২১-এর এই বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেহেতু বিজেপির প্রধান তুরুপের তাস, এবং তিনি একাই নির্বাচনী বৈতরণী পার করে দিতে পারেন বলে গেরুয়া শিবির বিশ্বাস করে, তাই রবিবারের ব্রিগেডের দিকে সকলে তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর ‘সোনার বাংলা’-র প্রতিশ্রুতিতে কী এমন আছে, যা আম-বাঙালিকে মুগ্ধ করবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী হিসেবে পারফরম্যান্সের সঙ্গে যদি মোদী সরকারের আমলে রেলকে ধরা হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গবাসী হতাশ-ই হবেন। এমনকি এই সপ্তাহেই ভারতীয় রেল একলাফে প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দামও তিনগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘুরপথে রেলের টিকিটের ভাড়াও অনেক গুণ বাড়ানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, যেখানে বিরোধীরা ক্রমাগত নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে গরিবদের ‘শত্রু’ এবং আম্বানী-আদানীদের ‘বন্ধু’ বলে দেগে চলেছেন, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মতো সংবেদনশীল রাজ্যে নরেন্দ্র মোদী কী বলবেন?
শনিবার বিকেলে ব্রিগেডে অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে এমন কিছু টের পাওয়া গেল না, যা গেরুয়া শিবিরের ব্রিগেডকে আলাদা তাৎপর্য দিচ্ছে বলে মনে করা যায়। সমস্যা হচ্ছে বিজেপির এখনও পর্যন্ত কৌশলে এবং প্রচারে বৈভবের যতটা ছোঁয়া আছে, রাজনৈতিক বিচক্ষণতার তেমন কোনও ইঙ্গিত নেই। শুক্রবার বিকেলে তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণার পরেই ঘাসফুল শিবিরের বিক্ষুব্ধদের যেভাবে পদ্ম-শিবির হাত বাড়িয়ে সাদরে নিয়ে নিচ্ছে, তাতে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক—বিজেপি আর কোথায় ‘পার্টি উইথ অ্যা ডিফারেন্স’। বরং অনেকে প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করেছেন, এটা আসলে তৃণমূলেরই একটা ‘বি-টিম’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে! এবং বিজেপি যদি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলেরই দল-বদলুদের একটা পার্টি হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে অমিতাভ বচ্চনকে ছেড়ে লোকে দ্বিতীয় পছন্দ মিঠুন চক্রবর্তীর দিকে ঝুঁকবে কেন? অর্থাৎ যে তৃণমূলকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তার বদলে তৃণমূলের দলবদলুদের নিয়ে তৈরি পদ্মশিবির কী কারণে ভোটারদের মন জয় করতে পারবে?
যেহেতু এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসমুদ্র হিমাচলের এখনও জনপ্রিয় নেতা, এবং তিনি একাই অনেক নির্বাচনের ভাগ্য বদলে দিতে পারেন, তাই পশ্চিমবঙ্গের এই দল-বদলুদের একাদশকে তিনি কীভাবে মোহনবাগানের সেই ইস্টইয়র্ক হারানো দলে পরিণত করবে, কোন যাদুমন্ত্রে তিনি নিজের দলকে ‘চ্যাম্পিয়ন’ করবেন, তা একমাত্র নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীই জানেন। কিন্তু শনিবার রাত পর্যন্ত বিজেপির কাছে নরেন্দ্র মোদী আর একঝাঁক দল-বদলু ছাড়া ব্রিগেড ময়দানে দেখানোর মতো কিছু নেই। এমনকি যে মিঠুন চক্রবর্তীকে তারকা আকর্ষণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, তিনিও তো এই সেদিন পর্যন্ত তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন, এবং সারদা থেকে টাকা নেওয়ার দায়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জেরার মুখে পড়েছিলেন।
তাহলে যে ব্রিগেডকে কেন্দ্র করে গেরুয়া শিবিরের এত পরিকল্পনা, এবং যেখান থেকে রাজ্যে ‘আসল পরিবর্তন’ নিয়ে আসার দাবি করা হবে বলে সোচ্চার ঘোষণা, সেখান থেকে কি হতে পারে? নরেন্দ্র মোদী কি ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ হওয়ার পথে এগিয়ে পশ্চিমবাংলাতেও মেরুকরণের রাজনীতিকেই আকড়ে ধরবেন? তিনি কি সংখ্যালঘুদের নিশানা করে শুধু হিন্দু ভোট ইভিএমে টানবার চেষ্টায় কোনও তরুপের তাস খেলবেন? কিন্তু তাহলে আবার এই মার্চের শেষে যখন তিনি বাংলাদেশ যাবেন, তখন তিনি কীভাবে নিজেকে মুসলিম প্রধান একটি দেশের, ভুল বললাম নিকটতম প্রতিবেশী দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলবেন। রবিবারের ব্রিগেড তাই নরেন্দ্র মোদীর কাছে অনেকগুলো জিনিস ‘ব্যালেন্স’ করার খেলা। সেই ব্যালেন্স রেখেই তিনি কীভাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের রাজ্যকে নিজের ঝুলিতে টানার চেষ্টা করেন, সেই দিকে তাকিয়ে আছে সকলে।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে যেহেতু বিজেপির প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বী দল তৃণমূল কংগ্রেস, এবং সেই দলের নেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহু সফর ব্রিগেডের সাফল্যের দাবিদার, তাই নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেড নিয়ে রবিবার বিকেল থেকেই তুল্যমূল্য আলোচনা শুরু হয়ে যাবে। একঝাঁক দল-বদলুকে আগেই ঝাণ্ডা ধরিয়েছে গেরুয়া শিবির, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা বেরোনোর পর এককালের মমতার ছায়াসঙ্গী সোনালী গুহ ঝুঁকে গেছেন পদ্মের দিকে। কিন্তু তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক যেহেতু একান্ত ভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজস্ব, তাঁর ছায়াসঙ্গীরাও সেই ভোটব্যাঙ্ক ঘোরাতে পারেন না, তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির হয়ে কোন নতুন রণকৌশলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাপে ফেলে দিতে পারেন নরেন্দ্র মোদী, সেই দিকেই তাকিয়ে থাকবে সকলে।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.