কলকাতা ২৪x৭: কুকরি ঘুরছে শনশন। কাস্তে ঘুরছে বনবন। মাঝে দুলছে ঘাসফুল। কোথাও দুলছে হাত। ইতি উতি পদ্ম দোলার সম্ভাবনাও থাকছে। তবে দার্জিলিং জেলায় ভোটের ঘূর্ণিপাকে গুরুং দাজু আর অশোক দাজুর লড়াই মূল আলোচিত।

জেলার পার্বত্যাঞ্চল দার্জিলিং, কার্সিয়াং। আর নবগঠিত জেলা কালিম্পং জুড়ে গোর্খা রাজনীতির রমরমা। আপাতত তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে মিতালি পাতিয়ে প্রবল হুঙ্কার দিয়ে চলেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (গোজমুমো) নেতা বিমল গুরুং। তৃণমূলের সঙ্গ ছেড়ে গোজমুমো তামাং গোষ্ঠী নেমে পড়েছে বিজেপির সঙ্গে কোমর বেঁধে, এমনই আলোচনা।

দাজু অর্থাৎ বড়ভাই বা দাদা, নেপালি ভাষায় বহুল ব্যবহৃত এই শব্দ ভোটের হাওয়ায় দারুণ চলে। ভোট এসেছে, গোর্খা নেতা বিমল গুরুং, বিনয় তামাং ও সিপিআইএমের অশোক ভট্টাচার্যকে ঘিরে চা বলয়ের রাজনীতি সরগরম। আসরে রয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রী গৌতম দেব (যদিও তাঁর কেন্দ্র জলপাইগুড়ি জেলায়), কংগ্রেসের শংকর মালাকার। এনারা সবাই চা বলয়ের রাজনীতিতে ‘দাজু’। কী করবেন দাজুরা? তাঁদের রাজনৈতিক ক্যারিশ্মা নিয়ে বিস্তর আলোচনা তিস্তা-রঙ্গীতের তীরে তীরে।

জেলা দার্জিলিংয়ের সঙ্গে নেপাল ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত থাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র শিলিগুড়ি-উত্তরবঙ্গের রাজধানী তথা উত্তর পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার। ভারতের চা বাণিজ্যের রাজধানীও এই শহর।

উত্তরের মহানগর শিলিগুড়ি বামেদের দুর্গ। ২০১১ সালে এই কেন্দ্র থেকে পরাজিত হন বাম জমানার হেভিওয়েট নেতা ও তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। পরে তাঁর রাজনৈতিক কৌশলেই শিলিগুড়ি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাম শক্তি। রাজ্যে একমাত্র এই পুর নিগম বাম দখলে। অবশ্যই জোট রাজনীতির সূত্র মেনে সফল হন অশোকবাবু। তৃণমূল কংগ্রেস ‘লাখো চেষ্টা’ করেও অশোকবাবুকে আর আটকাতে পারেনি।

নির্বাচনের মুখে আলোচনা, দার্জিলিং পাহাড় থেকে গোজমুমো নেতারা অশোক দাজুর রাজত্ব ছারখার করতে মরিয়া হচ্ছেন। তবে জেলা সিপিআইএমের দাবি, এই চেষ্টা এবার সফল হবে না। গত কয়েক বছরে অশোক ভট্টাচার্য যেভাবে মাটি কামড়ে পুর পরিষেবা ও বিধায়কের ভূমিকা পালন করেছেন তার প্রতিফলন ইভিএমে পড়বেই।

অশোক ভট্টাচার্য যে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী তা স্বীকার করছে তৃণমূল কংগ্রেস। সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের হেভিওয়েট মন্ত্রী গৌতম দেব তাকিয়ে পাহাড়ি গুরুং শক্তির দিকে। তৃণমূলের ক্রমাগত ভাঙনের ধাক্কায় সিপিআইএম বেশি করেই সংঘবদ্ধ, বলছেন জেলা বাম নেতৃত্ব। জেলার রাজনীতিতে সমতলে বনবন করে কাস্তে ঘুরিয়ে চলেছেন অশোক ভট্টাচার্য।

শিলিগুড়ি ছাড়িয়ে পাহাড়ি অঞ্চলে ঢুকে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় গোর্খা রাজনীতির দাপট। জেলার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ জনপদ কার্সিয়াংয়ে শক্তি বিনয় তামাংয়ের। আপাতত তিনি বিজেপি ঘনিষ্ঠ। তাঁকে দিয়েই তৃণমূলের পাহাড়ি কাঁটা বিমল গুরুংকে উপড়ে দিতে মরিয়া বিজেপি।গত লোকসভা নির্বাচনে এই গুরুং শিবিরের দাপটেই বিজেপি পাহাড় দখল করে। উত্তপ্ত গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবল বিরোধী গুরুং। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলছে। গুরুং আত্মগোপনে-কখনও নেপাল ও কখনও সিকিমে থাকছিলেন। তাঁর হয়ে গলা ফাটাচ্ছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। গুরুং বিহীন পাহাড়ি রাজনীতিতে তৃণমূল নেত্রীর আশীর্বাদে জিটিএ প্রশাসক হন বিনয় তামাং। গোজমুমো গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দুই মেরু তৈরি হয়। একদিকে গুরুং অন্যদিকে তামাং।

বিধানসভা নির্বাচনে দার্জিলিং পাহাড়ি এলাকায় নিজেদের শক্তি রাখতে গুরুং শিবিরকেই বেছে নিয়েছে তৃণমূল। তার নামে থাকা মামলাগুলি রাজ্য সরকার পাঠিয়েছে ‘বিশ বাঁও জলে’। নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়েই ফের মমতাপন্থী গুরুং। বিপদ বুঝে মমতা ছেড়ে বিজেপির দিকে ঢলেছেন তামাং। দুই পাহাড়ি দাজুর গোর্খা শক্তির কুকরি ঘুরছে শনশন করে।

পার্শ্ববর্তী নবগঠিত কালিম্পং জেলাতেও সুস্পষ্ট গোর্খা রাজনীতি। এখানেও গুরুং-তামাং লড়াই। কালিম্পং ছাড়িয়ে ডুয়ার্সের বিধানসভাগুলিতে তার প্রভাব পড়ে বিস্তর। উত্তরের রাজনীতিতে চর্চা, ডুয়ার্সে বাড়তে থাকা বিজেপি কে আটকাতে বিমল গুরুংয়ের শক্তিই ভরসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

গোর্খা রাজনীতির বর্তমান নেতৃত্বের চরম আস্ফালনে পাহাড়ি এলাকা হচ্ছে আন্দোলিত। সমীকরণ এখানে স্পষ্ট। পাহাড়ের ঢাল থেকে সেই সমীকরণে লাগছে ঘোরপ্যাঁচ। লড়াই দমদার। মরিয়া দাজু’রা।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

করোনা পরিস্থিতির জন্য থিয়েটার জগতের অবস্থা কঠিন। আগামীর জন্য পরিকল্পনাটাই বা কী? জানাবেন মাসুম রেজা ও তূর্ণা দাশ।