সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতাও বিপদ, সংযুক্ত মোর্চা গঠনে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন বামেদের, মন্তব্য সূর্যকান্তর

সংযুক্ত মোর্চাকে (united alliance) কেবল নির্বাচনী সংগ্রামের মধ্যে সীমিত করে না রেখে মানুষের জীবন-জীবিকা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের ওপরে আক্রমণের মোকাবিলায় সুদূরপ্রসারী হাতিয়ার করতে চাইছেন বামপন্থী নেতৃবৃন্দ। এমনটাই মন্তব্য করেছেন সিপিএম (cpim) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র (suryakanta mishra)। তিনি বলেছেন, ব্রিগেডের ভিড় দেখে সব হিসেব গণ্ডগোল হয়ে গিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির।

ধেয়ে আসছে বৃষ্টি, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার রিপোর্ট একনজরে

তৃণমূল ও বিজেপির হিসেবে গণ্ডগোল

রাজ্যের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তারা নানারকমের অপপ্রচার শুরু করেছে তৃণমূল ও বিজেপি। ব্রিগেডে সাধারণ মানুষের ভিড়ের কারণেই এই পরিস্থিতি, দলীয় মুখপত্র গণশক্তিতে এমনটাই মন্তব্য করেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। ভোটে জেতার জন্য বামপন্থীরা হাত মিলিয়েছে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে, এমন কথাও প্রচার করা হচ্ছে সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁর দাবি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলির থেকে ভিন্ন। ওদের ঘোষণাপত্রে আদিবাসী, তফসিলি জাতি, অন্যান্য অনগ্রসর অংশ, সংখ্যালঘু এবং বর্ণহিন্দু সহ সবার কথা রয়েছে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সুফি ঐতিহ্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধনের কথা বলেছে তারা। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ তো ধর্মাচরণের বিরোধিতা নয়, যে যার বিশ্বাস মতো ধর্মাচরণের অধিকার সংবিধান দিয়েছে, তাকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, মন্তব্য করেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র।

বামপন্থীরা আদর্শ বিচ্যুত হয়নি

বামপন্থীরা তাঁদের আদর্শের থেকে বিচ্যুত হয়েছে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র দাবি করেছেন, বামপন্থীরা এরাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করছে সংযুক্ত মোর্চা গঠনের মাধ্যমে। কেন্দ্রে বিজেপি এবং রাজ্যে তৃণমূল সরকার গঠিত হওয়ার পরে বাংলায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের বিপদের মোকাবিলা করে মানুষের ঐক্যগঠনের ঐতিহাসিক কর্তব্য পালনের তাগিদের কথা বলেছেন তিনি।

সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতাও বিপদ

সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, যখনই সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িকতার বিপদ বাড়ে তখনই সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতার বিপদকেও ডেকে আনে। বর্তমানে দেশের সংখ্যালঘুরা যে বিপদের মধ্যে রয়েছেন স্বাধীনতার পরে কখনো এমন অবস্থা হয়নি। বামপন্থীরা দুই মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধেই অবিরাম সংগ্রামে ছিল এবং আছে। মন্তব্য করেছেন তিনি। সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে যে কোনও দেশেই সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িকতা বেশি বিপজ্জনক। যেমন ভারতে হিন্দুত্ববাদী এবং বাংলাদেশে ইসলামিক সাম্প্রদায়িক শক্তি। কিন্তু এই দু'য়ের মধ্যে যোগসূত্রও থাকে, যেমন স্বাধীনতার আগে মুসলিম লিগ এবং হিন্দু মহাসভার মধ্যে ছিল। তারা একসঙ্গে বাংলা সহ কিছু প্রদেশে মন্ত্রীসভাও চালিয়েছিল, একসঙ্গে দেশভাগও চেয়েছিল। এখন আবার এই দুই সাম্প্রদায়িক শক্তির মেরুকরণের বিপদ দেখা যাচ্ছে, এই মেরুকরণ না হলে বিহারের নির্বাচনে আরও অনেক ভালো ফলাফল হতে পারত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে যদি এমন মেরুকরণ সফল হয় তাহলে সবাইকে প্রাকস্বাধীনতা যুগের দেশভাগ ও দাঙ্গার পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে হবে। অন্ধকার ফিরে আসবে। তাই আমরা বিজেপি এবং তৃণমূল বিরোধী সব ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির ব্যাপকতম ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে বামেরা।

গণ আন্দোলনের মাধ্যমে ধাক্কা

পঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন বিজেপিকে ধাক্কা দিতে সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র। সাম্প্রতিককালে শ্রমিক কৃষকদের ওপরে ক্রমবর্ধমান আক্রমণের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধ দেখিয়ে দিচ্ছে শ্রেণি ও সামাজিক শক্তিগুলোকে সংহত করা সম্ভব। সংযুক্ত কিষান মোর্চার আন্দোলন, ঐক্যবদ্ধ ধর্মঘট আন্দোলন, এসবের ফলে বিজেপি ধাক্কা খেয়েছে। বিহারের নির্বাচনে কিংবা বিভিন্ন রাজ্যের পঞ্চায়েত পুরসভার নির্বাচনী ফলাফলই তার প্রমাণ।

পশ্চিমবঙ্গে শ্রেণি ও সামাজিক শক্তিগুলোর এই ঐক্যগঠনের প্রয়াস হিসাবেই সংযুক্ত মোর্চার উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেছেন, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে মোদী সরকার তৈরি হওয়ার পরে মানুষের জীবন-জীবিকা, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপরে আক্রমণ ক্রমশ বেড়েছে।

More CPIM News