সেরা বাজি সৌরভ
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর মুখ নেই বিজেপির। বিজেপির তরফে বলা হয়েছে, সঠিক সময়েই সব কিছু পরিষ্কার হবে। উত্তরপ্রদেশেও নির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল যোগী আদিত্যনাথকে। অন্য রাজ্যে আরও এমন উদাহরণ আছে। তৃণমূল পাল্টা কটাক্ষ ছুঁড়ে বলছে, বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে আদি ও নব্যদের কোন্দল চরমে উঠল বলে। অনেকেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতির পালা চললেও বিজেপির একাংশ মনে করছে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় হতে পারেন নির্বিকল্প।
মাঠের মানুষ
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান নিয়ে জল্পনা চলছে কয়েক বছর ধরেই। সৌরভের ঘনিষ্ঠ মহলের সূত্রের খবর, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে গুজরাটের সেফ সিট থেকে সৌরভকে জিতিয়ে এনে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর পদে বসাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদী। সকলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলা সৌরভ সবিনয়ে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, আমি খেলার জগতের মানুষ। খেলার মাঠেই থাকতে চাই। সৌরভকে পেতে সক্রিয় হয়েছিল তৃণমূলও। কিন্তু তা হয়নি। সৌরভ বারেবারেই তাঁর রাজনীতিতে যোগদান নিয়ে বলে থাকেন, এটা অনেকটা দুর্গাপুজোর মতো। প্রতি বছরই নাম উঠে আসে, আবার মিলিয়েও যায়। রাজনীতিতে আসার কোনও পরিকল্পনাই নেই। পরে কী হবে দেখা যাবে। এমনকী সৌরভের বাড়িতে গিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ তথা শিলিগুড়ির প্রশাসক এবং রাজ্যের প্রাক্তন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য পরামর্শ দিয়েছিলেন, রাজনীতিতে আসার দরকার নেই। তবু জল্পনা থেমে নেই। এমনকী সৌরভ মুখ্যমন্ত্রী হোন এটা কত শতাংশ মানুষ চান তা নিয়ে সমীক্ষাও চলেছে।
ভোটের আগে জল্পনায় ইন্ধন
বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার আগে অমিত শাহের সঙ্গে সৌরভের বৈঠক তাঁর রাজনীতিতে যোগদান নিয়ে জল্পনা জোরালো করে। রাজ্য সরকারের জমি ফিরিয়ে দেওয়া বা রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাত সেই জল্পনায় ইন্ধন দেয়। চলতি বছরের গোড়ায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে বিজেপির দিকে অনেকে আঙুল তুলে অভিযোগ করেন, বিজেপিতে যোগদান করানোর জন্য সৌরভকে এতটাই চাপ দেওয়া হচ্ছে যে তার ফলেই এই ঘটনা। সৌরভের অসুস্থতার খবর নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ। কলকাতার বাইরে নিয়ে গিয়ে বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কলকাতায় পাঠিয়ে চিকিৎসার প্রস্তাব দেওয়া হয়। হাসপাতালে অন্য দলের নেতাদের পাশাপাশি তাঁকে দেখতে যান বিজেপি নেতারাও। এখনও অবধি সৌরভের শেষ টুইট নিয়েও চর্চা চলছে। যেখানে তিনি লেখেন, মোতেরায় গোলাপি বলে টেস্টে হাজির থাকতে পারছেন না। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের নেতৃত্বে নতুনভাবে গড়ে ওঠা মোতেরা স্টেডিয়ামে কোনও আসন ফাঁকা থাকবে না বলেই তাঁর আশা। উল্লেখ্য, ১ লক্ষ ১০ হাজার দর্শকাসনবিশিষ্ট মোতেরার নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ৫০ শতাংশ দর্শককে খেলা দেখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর বিজেপির ব্রিগেড সমাবেশের আগে সৌরভকে নিয়ে ফের জল্পনা শুরু হয়েছে।
মুখ খুললেন সৌরভ
তৃণমূলে মনোজ তিওয়ারি বা বিজেপিতে অশোক দিন্দার যোগদান নিমেষে ম্লান করে দিতে পারেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বিজেপির একাংশ চাইছে সৌরভকে বিজেপিতে যোগদান করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে। জনপ্রিয়তার নিরিখে বাংলার সেরা আইকন সৌরভের ধারেকাছে এখন কেউ নেই। ফলে মোদীর উপস্থিতিতে সৌরভকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ানোর সেরা মঞ্চ ব্রিগেডের চেয়ে বড় কিছু হতেই পারে না। বিজেপি শিবির আশায় থাকলেও এই জল্পনা নিয়ে মুখ খুলেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি কি ব্রিগেডের মঞ্চে উপস্থিত থাকছেন, এই প্রশ্ন ওয়ান ইন্ডিয়ার তরফে এদিন সরাসরি করা হয়েছিল সৌরভকে। তিনি জল্পনা উড়িয়ে জানিয়েছেন, 'না, না'। অর্থাৎ তিনি ব্রিগেডে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন না বলেই ওয়ান ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন সৌরভ।