বাংলা জয়ে মমতার প্রার্থী তালিকায় বেশ কিছু চমক থাকছে, সন্দেহ নেই

শোনা গিয়েছিল সোমবারই তৃণমূল প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দেবে। তা হল না। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা হয়তো আগামী বুধবার ঘোষণা করা হবে। প্রথম দফার ভোটের প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর প্রচারের জন্য হাতে সময় মিলবে সপ্তাহ তিনেক। যদিও তাদের প্রার্থী তালিকা মোটামুটিভাবে ঠিকই হয়ে রয়েছে। শেষ মুহূর্তে হয়তো সামান্য কিছু রদবদল হবে। এবারে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় অনেক নতুন মুখ দেখা যাবে। বিশেষ করে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কিছু অরাজনৈতিক ব্যক্তি এবারও প্রার্থী হবেন।

ফেব্রুয়ারিতেই ভোটের দিন ঘোষণা

কয়েক দিন আগে পশ্চিমবঙ্গ ও অসম সফরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিছু সরকারি কার্ড ছিল সেই সঙ্গে ভোটের প্রচার। রথ দেখা আর কলা বেচা একসঙ্গে। সেদিন প্রধানমন্ত্রী অসমে বলে গিয়েছিলেন মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোটের ঘোষণা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন বলে কথা। তার কথায় হতে পারে মানে হবেই এরকমটাই ধরে নেওয়া হয় সব সময়। সেই হিসেবে মার্চ মাসের ৭ তারিখ নাগাদ ভোটের ঘোষণা হবে বলে সবাই ধরে নিয়েছিল। তাই নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। তার ফলেই কিনা জানি না, নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রী ফিরে যাওয়ার দিন কয়েকের মধ্যেই তড়িঘড়ি নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে দিয়েছে। দিন ঘোষণা হোক না হোক এ রাজ্যে ভোটের প্রচার তুঙ্গমাত্রায় চলে গিয়েছে। সব দলেরই। বিশেষ করে শাসকদল তৃণমূল এবং তাদের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। যদিও রবিবার ব্রিগেডে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের ডাকা জনসভায় ভালোই ভিড় হয়েছিল। সেই সভায় ভাইজান আব্বাস সিদ্দিকির দলের সমর্থকও এসে ছিল অনেক। গলার জোরে তারাই ছিল এগিয়ে। ভোটের ফলে এই সভার প্রভাব কতটা পড়বে তা অবশ্য ভবিষ্যতই বলবে। যদিও সদ্য প্রকাশিত এক ভোট সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বাম কংগ্রেস জোট সাকুল্যে ৩১ থেকে ৩৯টি আসন পেতে পারে। আগের নির্বাচনে এই দুই দল মিলে এরাজ্যে ৭০টা আসন পেয়েছিল।

প্রার্থী বাছাইয়ে তৎপরতা

যাই হোক এবারে কিন্তু প্রার্থী বাছাই নিয়ে হিমশিম অবস্থায় সব দলেরই। বিজেপির তো কোনও কোনও সিটের জন্য ৪০-৫০টা নামও জমা পড়েছে। তা থেকে একজনকে বাছতে হবে। কঠিন ব্যাপার। যাতে কেউ প্রার্থী হিসেবে নিজের লোক ঢুকিয়ে দিতে না পারে সেজন্য বিজেপির হাইকমান্ড রাজ্য কমিটির হাতে না রেখে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজটা নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে। তাদের লোকজন আসবে এবং এখানকার প্রার্থী বাছাই করে সীলমোহর দেবে। অবশ্যই এখানকার কারও না কারও সাহায্য নিয়ে। কারণ তারা এখানকার যারা প্রার্থী হবে তাদের কজনকে চেনে? কংগ্রেস আর বামফ্রন্টের তো আসন রফা করতেই দফায় দফায় বৈঠক করতে হয়েছে। ভাইজানকে বাগে আনতে প্রচুর সময় কেটে গিয়েছে।

তৃণমূল কৌশল নিয়ে এগিয়েছে

তৃণমূলের অবশ্য সে সমস্যা নেই। তাদের প্রার্থী মোটামুটি বাছা হয়ে গিয়েছে। কারণ তাদের নেত্রী একমেবাদ্বিতীয়ম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের। এবারে যে বেশ কিছু সিটিং এমএলএ আর দাঁড়াতে পারবেন না এটা অনেক আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছে। কারণ, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধেই বিস্তর অভিযোগ। প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাক সেই সব অভিযোগ মমতার হাতে তুলে দিয়েছে। আসন পাবে না বুঝতে পেরে অনেকেই বিজেপিতে ভিড়বার চেষ্টা করেছেন। কেউ কেউ পেরেছেন, অনেকেই পারেননি। যাঁরা পারেননি তাঁরা হাতে তেল মেখে শেষপর্যন্ত তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সব জায়গায় এবার স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কিছু অরাজনৈতিক লোকজনকে মমতা নিয়ে আসবেন বলে ঠিক করেছেন। এরকম উনি অবশ্য আগেও করেছেন। এভাবেই শতাব্দী রায়, তাপস পাল, সন্ধ্যা রায়, দেব, অর্পিতা ঘোষকে লোকসভায় নিয়ে গিয়েছেন। ব্রাত্য বসু, ইন্দ্রনীল সেনকে জিতিয়ে এনে মন্ত্রী করেছেন। আরো অনেকে রয়েছেন, যারা প্রত্যক্ষ রাজনীতির লোক নন। যেমন ধরা যাক, ২০১১ সালে উত্তরপাড়ায় প্রার্থী করেছিলেন বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী অনুপ ঘোষালকে। গত ভোটে সেই আসনে নিয়ে এলেন ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক প্রবীর ঘোষালকে। যদিও প্রবীর এবার ভোটের আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাছাড়া এবার অনেক জেতা প্রার্থীও তাঁদের নিজেদের আসনে আর দাঁড়াতে পারবেন না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করেছেন। প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাক মমতাকে জানিয়েছে, তাঁর সরকার সাধারণ মানুষের জন্য প্রচুর কাজ করেছে। মানুষ প্রচুর পেয়েছে। তবু কিছু কিছু এলাকায় বিধায়করা নানা বিষয়ে অভিযুক্ত হয়ে অপ্রিয় হয়ে পড়েছেন। সেই আসনে তাঁকে প্রার্থী করলে আসন খোয়াতে হতে পারে। ঘোষণা না হলেও এসব ব্যাপার তৃণমূলের প্রায় সকলেই কম বেশি জানেন। তাই মমতার প্রার্থী তালিকায় বেশ কিছু চমক থাকতে চলেছে।

More WEST BENGAL ASSEMBLY ELECTION 2021 News