ব্রিগেডের সভা দেখে উজ্জীবিত হয়ে ভোটাররা ফিরে এলে 'অ্যাডভান্টেজ' বাম-কংগ্রেস জোটের

এবার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তাদের জিতিয়ে আনার ডাক দিতে ব্রিগেডে সমাবেশ করল বামফ্রন্ট। একা নয়, কংগ্রেস এবং সদ্য গঠিত নতুন দল আইএসএফ-কে সঙ্গে নিয়ে। মহাজোটের সভা। মঞ্চে ছিলেন ভিন রাজ্য থেকে আসা কয়েকজন নেতাও। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছিলেন, এবার ব্রিগেডে নাকি রেকর্ড হবে। দশ লক্ষ লোকের সমাবেশ হবে। জানতেন সেটা সম্ভব নয়, তাও বলেছিলেন। বলতে হয় তাই। সিপিএমের জমানায় ডাক দিলে যেভাবে লোক আসত এখন কি সিপিএমের সেই প্রভাব আছে! নেই। তাও এই দুরাশা করতে পারেন এমন নির্বোধ ওরা নন। তবু বলেছিলেন। তবে বাস্তবিক এই সমাবেশে যত মানুষের সমাগম হবে বলে ওরা ভাবতে পেরেছিলেন, তুলনায় বরং তার চেয়ে কিছু বেশি হয়েছে।

কংগ্রেস-বাম সমঝোতা

এ রাজ্যে ২০১১ সালে ক্ষমতা থেকে চলে যাবার পর যে ক'টা নির্বাচন হয়েছে প্রায় সব ক'টাতেই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে হয়েছে বামফ্রন্টকে । ১৯৭৭ সালে প্রবল প্রতিপক্ষ ছিল কংগ্রেস এবং সিপিএমের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট। সেই দুটি দলের এখন এমন অবস্থা একক ভাবে থার্ড ফোর্স হওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। জোট বেঁধে থার্ড ফোর্স হতে হবে। তাও যে পাওয়ারফুল থার্ড হবে তা নয় পুওর থার্ড। লড়াই হবে মূলত তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির। যে বিজেপি ২০১৬ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পেয়েছিল মাত্র তিনটি আসন। ২০১১ সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ১৮৪টা আসন পেয়েছিল। ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা ২৭টা বেড়ে দাঁড়ায় ২১১। পরে অন্যান্য দল থেকে আরও কিছু বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেয়। ২০১১ সালে বামফ্রন্ট পেয়েছিল ৪০টি আসন, কংগ্রেস ৪২টি। ২০১৬ সালে বামফ্রন্টের আসন সংখ্যা এক লাফে ১৪টা কমে গিয়ে হয় ২৪ এবং কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ২টি বেড়ে হয় ৪৪। সেই কংগ্রেস এবং সিপিএম এবারে জোট বেঁধে তৃতীয় শক্তি হওয়ার কথা ভাবছে। যদিও মুখে বলছে তারাই ক্ষমতায় আসবে।

বাম ভোট রামে গিয়েছে

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ২০-২২ শতাংশ ভোট হারিয়েছিল বামফ্রন্ট। প্রায় ততটাই ভোট বেশি পেয়েছিল বিজেপি। অংকের হিসেবে ধরতে গেলে সিপিএম-এর বিক্ষুব্ধ ভোট বিজেপির দিকেই পড়েছিল। অল্প কিছু বিক্ষুব্ধ যদিও বা তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে থাকে তবে তা আহামরি এমন কিছু নয়। মূলত সিপিএমের ভোটেই বলীয়ান হয়ে বিজেপি লোকসভায় ১৮টি আসন তুলে নিতে পেরেছিল। তারপর থেকেই তাদের বাড়বাড়ন্ত। সদ্য প্রকাশিত একটি ভোট সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস লোকসভায় তাদের প্রাপ্ত ভোট ধরে রাখতে পারছে এবং বিজেপিও লোকসভা ভোটে যত শতাংশ ভোট পেয়েছিল প্রায় ততটা ভোটই ধরে রাখতে পারছে। সমীক্ষা যা বলেছে তাতে তৃণমূল পাচ্ছে ৪৩ শতাংশ ভোট আর বিজেপি ৩৮ শতাংশ।

কী হতে পারে এবারের ভোটে

অন্যদিকে কংগ্রেস এবং সিপিএমের জোট সাকুল্যে ১৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে। যদিও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে এ পর্যন্ত সবকটি ভোট সমীক্ষাতেই দেখা গিয়েছে তার বেশিরভাগই মেলেনি। আসলে এখন সাধারণ ভোটাররাও খুব সচেতন হয়ে গিয়েছে। তাদের কাছে জানতে চাইলেই তারা কি সিদ্ধান্ত নেবে তা মুখ ফুটে বলে দেবে এমনটা নয়। ফলে সমীক্ষাগুলো খুব একটা মেলেনি। তবুও যদি ধরে নেওয়া হয় এই সমীক্ষাগুলোর ফলাফল মোটামুটি মিলবে তাহলে সিপিএম কংগ্রেস আইএসএফ জোট মিলিতভাবে ১৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে। এদিনের ব্রিগেড সভা দেখে উজ্জীবিত হয়ে লোকসভা নির্বাচনে যে সমস্ত সিপিএম সমর্থক বিজেপিকে ভোট দিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে তারা কিছুটা কিছুটা ফিরে এলে এই শতাংশের হার হয়তো সামান্য কিছু বাড়তে পারে। এবং অনেক আশা নিয়ে আব্বাস সিদ্দিকির নতুন দল আইএসএফকে নিজেদের জোটে নিয়েছে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস। তারা যদি মুসলিম ভোটে কিছুটা ভাঙন ধরাতে পারে তাহলে এই শতাংশের হার আরও একটু বাড়বে। তবে সব মিলিয়ে তা কুড়ি-বাইশ শতাংশের বেশি হবে বলে মনে হয় না। এবং সিপিএমের ভোট যতটা বাড়বে বিজেপির ভোট ততটাই কমে যেতে পারে।

অনুমান মিলেছে অতীতে

এটা ওয়ান ইন্ডিয়ায় আমার প্রথম লেখা। যাঁরা আমার লেখা আগে পড়েছেন তাঁরা জানেন, কিন্তু যাঁরা পড়েননি তাঁদের একটু জানিয়ে রাখা ভালো আমি কোনও ভোট বিশেষজ্ঞ নই। আমার কোনও ভোট সমীক্ষা দলও নেই। সাধারণত সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে, তাদের মনোভাব বুঝে কমেন্ট লিখে থাকি। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করি না। ফলে আমার লেখায় জনমতের মুডই প্রতিফলিত হয়। কখনও কখনও তা একতরফা বলে মনে হয়। কিন্তু দেখা গিয়েছে এ পর্যন্ত আমি যা লিখেছি কখনই তার খুব বেশি তফাত হয়নি। এবারও যদি আমি ঠিকঠাক মতো সাধারণ মানুষের মনোভাব ধরতে পারি তাহলে আমার লেখার সঙ্গে পরিস্থিতির খুব একটা তফাত হবে বলে মনে হয় না।

More WEST BENGAL ASSEMBLY ELECTION 2021 News