প্রসেনজিৎ চৌধুরী: বছরটাই এমন যে তখন পরাধীন ভারতে জোরদার মুক্তির লড়াই চলছিল, আর দূরে হিন্দুকুশ পর্বতমালার নিচে, পাথুরে জমির প্রান্ত ধরে স্বাধীন হাওয়া লুটোপুটি খাচ্ছে। ১৯১৯ বছরটা এমনই। এই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন হয়েছিল আফগানিস্তান।

ভাবুন তো, তখনকার ভারতের অবস্থা! ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল কী ভীষণ কাণ্ডটা ঘটেছিল পাঞ্জাবে! রক্তাক্ত হয়েছিল জালিয়ানওয়ালাবাগ৷ নিরস্ত্র জমায়েতের উপর জেনারেল ও’ডায়ারের নির্দেশে পুলিশের গুলিতে শ’য়ে শ’য়ে মানুষের মৃত্যু হয়৷ প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন৷ তখন আফগানিস্তান স্বাধীন দেশ।

সেই দেশে গিয়ে আঙুর, কিসমিশ আর খোবানি খোশবাইয়ে মত্ত আব্দুর রহমানের শ্বেতশুভ্র বন্ধুত্বের কথা হৃদয় সৈয়দ মুজতবা আলি বাঙালির হৃদয়ে মাখনের মতো লেপে দিয়েছেন। আজ যখন আপনি আফগানভূমির স্বাধীনতার খবরে চোখ বোলাচ্ছেন, তখনও হিন্দুকুশের তুষার মোড়া শিখর থেকে আসা হাওয়া লুটোচ্ছে ওই দেশে। অবশ্যই সন্ত্রাসবাদের ভয়াল রূপে , প্রতিবাদের অল্প আওয়াজে মিশে থাকছে এই বাতাস।

সৈয়দা সাহেব কামাল কে মনে আছে? থাকবে না স্বাভাবিক। সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়? এবার মনে পড়ছে? কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউয়ের দুটি নাম। বিয়ে করে আফগানিস্তানে শ্বশুরবাড়ির চৌকাঠ ডিঙিয়ে খুন হওয়ার আগে তিনিই সর্বশেষ ভারতীয় যাঁর কলমে ধরা আছে তালিবান শাসনের ভয়ঙ্কর মুহূর্তগুলো।

জঙ্গি হামলা ও ভয়াবহ কিছু না ঘটলে তেমন কোনও আলোচনা হয় না আফগানিস্তানকে ঘিরে৷ ফলে সে দেশের স্বাধীনতা দিবস যে খুব একটা দাগ কাটবে না, তা বলাই বাহুল্য৷ অথচ ভারতের স্বাধীনতার ২৮ বছর আগেই মুক্তির স্বাদ পায় আফগানভূমি৷

যুদ্ধ করেই স্বাধীন হয় আফগানিস্তান। একটা নয়, তিনটি যুদ্ধ হয় আফগানি ও ব্রিটিশদের। অবিভক্ত ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমানা (তৎকালীন উত্তর পশ্চিম সীমান্ত এলাকা) ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে পাহাড়ে, গভীর গিরিখাতে লড়ছে আফগান রাজা আমানুল্লা খানের সেনাবাহিনি৷

প্রথম ও দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে ব্রিটিশদের পিছু হটতে হয়েছিল৷ তাই তৃতীয় লড়াইয়ে অনেক বেশি সতর্ক ব্রিটিশ সেনা৷ ১৯১৯ সালের ৩ মে আফগান বাহিনি খাইবার পাশ অতিক্রম করে৷ ঝটিকা আক্রমণে বুগ শহর (বর্তমানে পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের অন্তর্গত) দখল করে নেয়৷ অবস্থানগত কারণে শহরটি ব্রিটিশদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ সর্বোপরি আফগানিস্তানের উত্তরের প্রতিবেশি সোভিয়েত ইউনিয়নও ছিল আরও ভয়ের কারণ৷

তিরিশ দিনের মরণ বাঁচন এই লড়াইয়ে এবার পিছু হটে যায় আফগান সেনা৷ দ্রুত রসদ সরবরাহ ও সামরিক সরঞ্জামের অভাবেই হেরে গিয়েছিলেন আফগান রাজা আমানুল্লা খান৷ ১৯১৯ সালের তৃতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধের (Third Anglo-Afghan War) পর সন্ধি চুক্তি অনুষ্ঠিত হয়৷ তারই জেরে সেই বছর ১৯ অগস্ট ব্রিটিশ সরকার আফগানিস্তানকে স্বাধীন দেশ বলে মেনে নেয়৷

সন্ধির পরে আমানুল্লাকে আফগান রাজা বলে মেনে নেয় ব্রিটিশরা৷ এর ফলে তিনি পারিবারিক ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে তখতে আরও শক্তিশালী হয়ে বসেন৷ যুদ্ধের পর আফগানিস্তান ও ব্রিটিশ-ভারতের মধ্যে সীমান্ত রেখা ডুরান্ড লাইন বাস্তবায়িত হয়৷ এই রেখাই বর্তমানে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত নির্ধারণ করছে৷

আফগানিস্তান যখন স্বাধীন হয় তখন ভারতের স্বাধীনতার লড়াই দুটি খাতে বইছিল৷ একটি অহিংস গণআন্দোলন৷ অন্যটি সশস্ত্র পথে মুক্তি৷ দ্বিতীয় পথটি যাঁরা বেছে নিয়েছিলেন, সেই অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত বিপ্লবীদের অনেকেই গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন৷ তাঁদেরই সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের এক দুরন্ত পর্ব, প্রবাসে বিপ্লব প্রচেষ্টা৷

ভারতের মাটিতে সশস্ত্র বিপ্লব পরিচালনা করার কেন্দ্র হয়ে গিয়েছিল আফগানিস্তানের মাটি৷ পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অনেকে সেই দেশে চলে যান৷

ভারতের থেকে প্রায় তিন দশকের পুরানো আফগানিস্তানের স্বাধীনতা৷ অনেক পরে এই দেশ সোভিয়েত সেনার কবলে পড়ে৷ যাকে পুরানো ইঙ্গ-রুশ রেষারেষি এবং পরবর্তীকালের মার্কিন-সোভিয়েত রেষারেষির পরিণতি বললেও অত্যুক্তি হয় না৷ আর সেই লাল ফৌজকে রুখতে সিআইএ, আরব শেখশাহি এবং চিনের মদতে জন্ম নেয় গোঁড়া ইসলামি মৌলবাদ৷ যার পরিণতি আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনার পিছু হটা৷ কিন্তু সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের সুখশান্তিও খতম হওয়া৷ এরপরই শুরু হয় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ ও তার পর তালিবান জমানা৷ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার মাটিতে আত্মঘাতী বিমান হামলার পর আমেরিকা-ন্যাটোর যৌথবাহিনী এবং রুশ মদতে নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের সামরিক অভিযানে তালিবান সরকারের পতন ঘটে

রক্তাক্ত আফগানিস্তান৷ আল-কায়েদা জঙ্গিদের পরবর্তীতে তালিবান ও ইসলামিক স্টেটের লাগাতার হামলায় অস্থির কাবুল থেকে হেরাট৷ মৃত্যু হচ্ছে বহু নিরীহ মানুষের৷ সেই নাশকতার আবহেই স্বাধীনতা দিবস পালন করছে আফগানিস্তান৷

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

জীবে প্রেম কি আদৌ থাকছে? কথা বলবেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ অর্ক সরকার I।