সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : হাওড়ায় শুরু হয়েছে ভীম পুজো। কারণ আজ ভৈম-একাদশী। এদিন সমগ্র দক্ষিণবঙ্গেই ভীমের পুজো হয়। বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন নামে। অন্যতম হাওড়ার গ্রামীণ অঞ্চল। অন্যতম পুরনো ভীম পুজো হয় শ্যামপুরের রাধাপুরে। ভৈমী একাদশী উপলক্ষে সেখানে শুরু হয়েছে মহাভারত মহাকাব্যের দ্বিতীয় পাণ্ডব মহাবীর ভীমের ১২৬ বছরের প্রাচীন পুজো। বিভিন্ন আসবাবপত্রের দোকান খোলা হয়েছে এবং মেলাও বসেছে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যারা পুজো এবং মেলা দেখতে আসবেন তাঁরা যেন সবাই মাস্ক পরে আসেন, কারন করোনা পরিস্থিতি।

দক্ষিণবঙ্গে মাঘ মাসের শুক্লা একাদশীতে পালিত হয় ভীম- একাদশী বা ভৈম-একাদশী। এনিয়ে রয়েছে অনেক লোককথা তা একবার দেখে নেওয়া যায়৷ হিন্দুঘরের বিধবা হওয়ায় মাতা কুন্তীকে স্নান করে একাদশীর উপবাস করেন । এদিকে মাঘমাসে প্রচন্ড ঠান্ডায় পুকুরের জলও খুব ঠাণ্ডা হয়ে যায় ত দিয়ে স্নান সারা খুবই কষ্টকর। তবুও সাতপাঁচ ভেবেও ঐ ঠান্ডা জলে তাঁকে নামতে হ’ল । ও ভাবে স্নান সেরে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে মা কুন্তীকে আসতে দেখে খুবই রাগ হল পুত্র ভীমের । রাগের চোটে লাঙ্গল থেকে ফাল খুলে নিয়ে আগুণে কশকশে করে গরম করে “জয় কৃষ্ণ” বলে সেই লাঙ্গলের ফালকে পুকুরের ঠান্ডা জলে ডুবিয়ে দিলেন । তারফলে আস্তে আস্তে শীত গেল পালিয়ে ৷এরফলে কুন্তীও খুব আরাম বোধ করলেন এবং তা দেখে খুশি বলেন কৃষ্ণভক্ত ভীম।

এদিকে এমন ঘটনার মুশকিলে পড়ে জলের দেবতা বরুণদেব শ্রীকৃষ্ণের কাছে দৌড়ে গেলেন পুকুরের জলের তাপ জুড়ানোর আর্জি নিয়ে। তখন কৃষ্ণই বরুণদেবকে বোঝালেন এই জ্বালা জুড়োতে মাঘমাসের শুক্লা একাদশীতে ভীমকে এই ব্রত পালন করাতে বললেন। আর এই একাদশীর ব্রত ভীম ঠিকমতো পালন করায়, তাপদগ্ধ বরুণদেবের গাত্রজ্বালা উপশম হল।

এদিকে আবার মহাভারতের ভীম নাকি দক্ষিণবঙ্গে বেশ কিছুদিন ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। পথশ্রমে ক্লান্ত কুন্তী বিশ্রাম নিতে বসেছিলেন এক গহন অরণ্যে।সেখানেই উপজাতি পরিবারের রাক্ষস হিড়িম্ব আর তার বোন হিড়িম্ব থাকত৷ সেখানে পঞ্চপান্ডব সহ মাতা কুন্তীকে সংহার করতে উদ্যত হয়েছিল হিড়িম্ব৷ আর ভীমের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধও হয় এবং সে যুদ্ধে হিড়িম্বকে পরাস্ত করে ভীম৷ এদিকে মৃত হিড়িম্বর দেহ রেখে আসতে গিয়ে হিড়িম্বা রাক্ষসীর সঙ্গে প্রেম হয় ভীমের এবং তারা গান্ধর্ব মতে তাকে বিয়েও করেন।স্থানীয় মানুষরা বিশ্বাস করেন প্রাচীনকালে “মেদ” উপজাতির বাসভূমি ছিল মেদিনীপুর ৷ আর ভীমের কাহিনীর সাক্ষ্য বহন করছে খড়গেশ্বর ও তার অনতিদূরেই হিড়িম্বেশ্বরী কালীর মন্দির ৷ ফলে ভীমের পুজো করার জন্যই ঐ অঞ্চলের গ্রামবাসীরা ভীম-একাদশী ব্রত পালন করতে দেখা যায়।

এই প্রচলিত গল্পের মধ্য দিয়ে একদিকে বাংলার লোকসংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে ভীমপুজোর বিপুল আয়োজন আর আড়ম্বর দেখা যায়। বিরাট উচু ভীমসেনের এই মূর্তিকে ভিত্তি করে মেলাও বসে । কোথাও তিনি ভীমসেন, কোথাও বা খেত্তী ভীম, হালুয়া ভীম আবার কোথাও হুলা ভীম কিম্বা চাষী ভীম । এই মধ্যমপান্ডবই স্থান-কাল-পাত্রভেদে যুবশক্তির বহিঃপ্রকাশ। গোটা দক্ষিণবাংলার কৃষিপুজোর কারণ তিনি তো পবনপুত্র হওয়ায় তাঁকে তুষ্ট করে বায়ু আর বৃষ্টির হাত থেকে বাংলার মাটিকে রক্ষা করা হবে। সবুজে সবুজ হয়ে উঠবে আবাদীজমি এই আশায় গাঁয়ের লোকের বিশ্বাস।

আবার দক্ষিণবঙ্গ কৃষি প্রধান ছাড়াও এখানে রয়েছে বন্দর নগরী তমলুক ৷ একসময় তাম্রলিপ্ত বন্দরে বহু জাহাজ ভিড়ত। চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙার মত অনেক ব্যবসায়ীর পণ্যবোঝাই জাহাজ এসে ভিড়ত হলদিয়া বন্দরে । আবার রফতানিও হত ভারতীয় সামগ্রী। নির্বিঘ্নে সমুদ্র পথে জাহাজ চলাচল করার জন্য পবনপুত্র ভীমকে পুজো করার একটা চল ছিল। জাহাজ যাত্রা যাতে শেষযাত্রা না হয় এবং জলদস্যুর আক্রমণের মুখে পড়লেও যাতে লড়াই করে জিততে পারে তারজন্য মহাবীর ভীমের পুজো পাঠা চলত জাহাজগুলিতেও । এজন্যই দক্ষিণবঙ্গের পবনপুত্রের ওপর ব্যবসায়ীদের এত ভক্তি ।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

জীবে প্রেম কি আদৌ থাকছে? কথা বলবেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ অর্ক সরকার I।