দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পার্ভো
এই ভাইরাসটি অত্যন্ত সংক্রমক এবং মলের মাধ্যমে তা এক কুকুর থেকে অন্য কুকুরের মধ্যে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শহরের পশুরোগ চিকিৎকরা আশঙ্কা করছেন যে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সম্প্রতি পার্ভোভাইরাস বৃদ্ধি পেয়েছে, আর এই করোনা ভাইরাসের কারণেই কুকুরদের মালিকরা ঠিক সময়ে তাঁদের পোষ্যদের ভ্যাকসিন দিতে পারেননি। পশুরোগ চিকিৎসক ডাঃ সুভাষ সরকার, যাঁর কাছে গত ২ মাসে প্রচুর পার্ভোভাইরাসে আক্রান্ত কুকুর এসেছে, তিনি বলেন, ‘মহামারির কারণে, অনেক কুকুরের টিকাকরণ হয়নি। এ বছর সঠিক সময়ে টিকাকরণ না হওয়ার দরুণ পার্ভোভাইরাসের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। অন্য একটি সমস্যা ছিল টিকা দেওয়ার জন্য চিকিৎসক উপলব্ধ ছিলেন না।' তিনি বলেন, ‘পার্ভোভাইরাস কোনও নতুন রোগ নয় এবং এটা যখন কলকাতায় আসে তখন কোনও ভ্যাকসিন নেই এই রোগের।'
পার্ভোর বিরুদ্ধে সিরাম
রাস্তার কুকুরগুলিকে যেহেতু টিকা দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা সেভাবে নেই, তাই পার্ভোভাইরাস অনবরত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। যতদূর চিকিৎসা করা যায়, সেই অনুযায়ী একটি সিরাম রয়েছে যা পার্ভোভাইরাসে আক্রান্ত কুকুরদের চিকিৎসায় কিছুটা সহায়তা করতে পারে, তবে সেই সিরাম বেশ মূল্যবান।
পার্ভোভাইরাসের উপসর্গ
আর এক পশুচিকিৎসক ডাঃ গৌতম মুখার্জি জানিয়েছেন যে মরশুম বদলের সময় এই পার্ভোভাইরাস সাধারণত সংক্রমিত হয়। মুখার্জি বলেন, ‘যে সব কুকুরদের ভ্যাকসিন নেওয়া আছে তাদের পার্ভো কম আক্রান্ত করতে পারে। খাবার না খাওয়া, অতিরিক্ত বমি, ডায়রিয়া এ ধরনের উপসর্গ যদি দেখা দেয় কুকুরের মধ্যে তবে তাকে অবশ্যই স্যালাইন দিতে হবে। পার্ভো কেয়ার নামে একটি ওষুধ রয়েছে যা কুকুরদের বমি কমাতে সহায়তা করে তাও দিতে হবে।' মানবদেহে কলেরার যে সমস্ত উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন পেট খারাপ, রক্তাল্পতা, শরীরে জলের অভাব এবং অনেক কেসে হৃদযন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেয়, পার্ভো ভাইরাসেরও একই ধরনের উপসর্গ। ডাঃ মুখার্জি পরামর্শ দিয়েছেন যে ভ্যাকসিনের পর পোষ্যদের ২ সপ্তাহের জন্য বাড়ির ভেতরেই রেখে দেওয়া হোক।
কুকুর মালিকদের আগাম সতর্কতা
অন্যদিকে, কুকুরের মালিকরা সব ধরনের সতর্কতা মেনে চলছেন পার্ভোভাইরাসের জেরে। স্বপ্নিল ব্যানার্জি নামের এক কুকুরের মালিক বলেন, ‘আমার কুকুর মাফিনকে পার্ভোভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন দেওয়া করিয়েছি। লকডাউন হওয় সত্ত্বেও তার ভ্যাকসিন সময়মতো হয়েছে। এই ভাইরাসের জন্য রাজ্যে বহু কুকুরের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সতর্কতা মেনে চলছি।' পার্ভোভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্কে বেশ কিছু সময় ধরে কুকুরের মালিকরা তাঁদের পোষ্যদের নিয়ে হাঁটতে বের হচ্ছেন না। চিকিৎসকরা অবশ্য জানিয়েছেন যে এই রোগ শুধুমাত্র পোষ্য কুকুরদেরই হয়, তাদের থেকে মালিকের হওয়ার সম্ভাবনা নেই