সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু কবিতার অনুপ্রেরণা ছিলেন তিনি। ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে তাঁর ক্ষুরধার ভাবনা চিন্তা স্পষ্ট হয়েছে বহুবার। তাঁর মুখের আদলেই তৈরি হয়েছে এই পরিবারের সরস্বতী প্রতিমা। তিনি কাদম্বরী দেবী।
হাওড়া সালকিয়ার দাস পরিবারের পুজো আট বছরে পড়ল। সেখানেই এমন প্রতিমার দেখা মিলছে। শুধু প্রতিমা নয়, বাড়ির মধ্যেই তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। তাতেও ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের ছোঁয়া। পরিবারের এমন প্রতিমা মন্ডপের মূল ভাবনা তমাল দাসের। তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমার ভালোবাসা। আমার অনুপ্রেরণা। তাঁর অনুপ্রেরণা ছিলেন নতুন বউঠান কাদম্বরী দেবী। বিশ্বকবির অনুপ্রেরণা যিনি তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করেই এই প্রতিমা ও মণ্ডপ। ঠাকুরবাড়ির উপাসনা গৃহের আবহ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’
কিন্তু ঠাকুরবাড়ির উপাসনা গৃহ তো পৌত্তলিক প্রথার বিরোধী ছিল। ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত ছিলেন তারা। উপাসনা গৃহে কোনওভাবেই পৌত্তলিক প্রথার ছাপ ছিল না। তমাল দাস বলেন , ‘আমিও পৌত্তলিক প্রথার বিরুদ্ধে, কিন্তু আমার ভাবনাটা ফুটিয়ে তোলার মাধ্যম হিসেবে সরস্বতী পুজোকে বেছে নিয়েছি। শিল্পটা ফুটিয়ে তোলাই উদ্দেশ্য। তবে আমি এটাও মনে করি সবকিছুর মধ্যেই ঈশ্বর রয়েছেন। যে যেভাবে ভাবে সেটা তার মনের উপর নির্ভর করছে’
ইতিহাস বলছে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর নিজের স্ত্রীয়ের মুখের আদলে বানিয়েছিলেন দুর্গার মূর্তি। সেই ইতিহাসও কি এখানে ফুটিয়ে তোলা হল এখানে? তমাল জানিয়েছেন, ‘এই ইতিহাস আমার জানা ছিল না। এভাবে যদি ইতিহাস ফিরে আসে তাহলে সত্যিই ভালো ঘটনা’
অনবদ্য এই মূর্তি তৈরি করেছেন শিল্পী সুব্রত মৃধা। পুরো বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে তাঁকে সাহায্য করেছেন দেবাঞ্জন, পলাশ, রত্নদ্বীপ, অর্পণ, সুমন, সুদর্শনরা।
কলকাতায় কাদম্বরী দেবীর জন্ম। পৈতৃক নাম মাতঙ্গিনী। তিনি ছিলেন ঠাকুরবাড়ির বাজার সরকার শ্যাম গাঙ্গুলির তৃতীয় কন্যা। মাত্র নয় বছর বয়সে ১৯ বছর বয়সী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে কাদম্বরীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শিক্ষার বন্দোবস্ত করেছিলেন। তার পিতামহ জগন্মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন একজন গুণী সংগীত শিল্পী। তার থেকেই কাদম্বরী এবং রবীন্দ্রনাথ বাল্যকালে গান শিখেছিলেন।
সমবয়সী হওয়ার সুবাদে কাদম্বরীর সাথে রবীন্দ্রনাথের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং তিনি রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন গল্প, কবিতা, নাটক আর গান রচনায় উৎসাহ যুগিয়েছেন তার সৃষ্টিশীল মতামত প্রদানের মাধ্যমে। রবীন্দ্রনাথ এবং কাদম্বরী ছিলেন খুবই ভালো বন্ধু এবং সহপাঠী। এই কারণে দুজনের সম্পর্ক নিয়ে সেই সময়ে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন বিতর্ক এখনও বিদ্যমান রয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিবাহের (১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর) চার মাস পরে ১৯ এপ্রিল, ১৮৮৪ সালে কাদম্বরী দেবী আফিম খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, এবং তার দুই দিন পর এপ্রিল ২১ তারিখে মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান। কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন এবং তার স্মৃতি নিয়ে মৃত্যুর দীর্ঘদিন পরেও একাধিক কবিতা, গান ও গল্প রচনা করেছেন।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.