পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কি তৃণমূলের ‘বি টিম’ হয়ে যাচ্ছে? একের পর এক ঘটনা এবং তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাঁরা যোগ দিচ্ছেন, তাঁদের নিয়ে গুঞ্জন আপাতত এই রকম জল্পনাকেই উস্কে দিচ্ছে। বিজেপির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে পুরানো কর্মীদের ক্ষোভ এবং দলের মধ্যে ‘আদর্শের বিচ্যুতি’ নিয়ে চাপানউতোরের কথা।

শনিবার উত্তর ২৪ পরগণায় বিজেপিতে সদ্য যোগ দেওয়া বাবু মাস্টারের উপরে হামলার অভিযোগ আরও একবার সামনে এনে দিয়েছে গেরুয়া শিবিরের ভিতরের পরিস্থিতিটা ঠিক কি রকম। এই কিছুদিন আগে অব্ধি বাবু মাস্টার ছিলেন তৃণমূলের নেতা, তাঁর বিরুদ্ধে অত্যাচার এবং সন্ত্রাসের অভিযোগ করতেন বিজেপির কর্মীরাই। সেই বাবু মাস্টার ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুলে যাওয়ার পরেই আক্রান্ত, তাঁকে দেখতে ছুটে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্যস্তরের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু আরএসএস-এর কর্মীরাই প্রশ্ন তুলছেন, গেরুয়া ঝান্ডা হাতে নিলেই কি বাবু মাস্টারের মতো রাজনৈতিক চরিত্ররা আদর্শ চরিত্রের হয়ে যাচ্ছেন?

বস্তুত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এই সংকটে বিজেপি এখন যথেষ্ঠই অস্বস্তিতে। নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগণা কিংবা হুগলিতে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন এমন অনেকে, স্থানীয়স্তরে যাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভেই গেরুয়া শিবিরের দিকে জনসমর্থন বাড়ছিল। যেমন ধরা যাক শান্তিপুরের ‘দলবদলু’ বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য কিংবা রানাঘাটের পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়।

আরএসএস তো বটেই বিজেপির পুরানো কর্মীরাও দলের ভিতরে প্রশ্ন তুলছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করার জন্যই এতদিন তাঁরা বিজেপিকে দল হিসাবে বেছেছিলেন, তাঁরাই যদি গেরুয়া শিবিরে চলে আসেন, তাহলে তাঁরা আর পদ্মফুলকে ভরসা করবেন কি করে? কিন্তু রানাঘাটের পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ই হোক কিংবা শান্তিপুরের অরিন্দম ভট্টাচার্য, এঁদের যেভাবে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে গেরুয়া ঝান্ডা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে এই ‘দলবদলুদের’ গুরুত্ব দিচ্ছেন তাও পরিষ্কার।

আরএসএস এবং বিজেপির পুরানো কর্মীরা সকলেই মনে করাচ্ছেন তৃণমূল থেকে এই যে সব নেতারা বিজেপিতে আসছেন, গত লোকসভা নির্বাচনেই সেই সব এলাকায় পদ্মফুল লিড পেয়ে গিয়েছিল। তাই এই সব ‘দলবদলু’দের না নিলেও বিজেপির জনসমর্থনের বা সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির কিছু রকমফের হবে না।

সেটা হুগলির বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল বা নদীয়ার ‘দলবদলু’ তৃণমূল নেতাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বরং তৃণমূলের এই নেতাদের গেরুয়া শিবিরে না এসে উপায় ছিল না, কারণ, ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে জিততে গেলে সেটাই সেরা রাস্তা বলে এরা মনে করছেন। পুরানো বিজেপি নেতাদের সেইজন্যই প্রশ্ন, যাঁদের দলে নিলে আখেরে কোনও লাভ নেই, তাঁদের গেরুয়া ঝান্ডা ধরিয়ে দলের ভাবমূর্তি কতটা ভালো হচ্ছে?

বীরভূমের বিতর্কিত বিধায়ক মণিরুল ইসলামকে যখন দলে নেওয়া হয়েছিল, তখন আরএসএস-এর তরফ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল। এমন কি পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস-এর মুখপত্র ‘স্বস্তিকা’ মণিরুল ইসলামকে নিয়ে প্রচ্ছদ কাহিনী করে বেনোজলদের ঢোকালে কি রাজনৈতিক বিপদ হতে পারে, সেই নিয়ে সতর্কও করে দিয়েছিল। এরপরেও বিভিন্ন সময়ে আরএসএস নিজেদের নীতি এবং আদর্শের কথা বিজেপিকে মনে করিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি যেভাবে সবাইকে দলে নিচ্ছে, তাতে আরএসএস-এর সতর্কবানী কতটা রক্ষিত হচ্ছে, তা বলা মুসকিল। করোনা কালেও গুজরাটে আরএসএস-এর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই বিষয়ে ‘সতর্কতা’ নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও তো নদীয়াতে পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় বা উত্তর ২৪ পরগণায় বাবু মাস্টারের মতো নেতাদের গেরুয়া ঝান্ডা ধরানো বন্ধ হয়নি।

আরএসএস-এর বড় অংশই দলের ভিতরে এই নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছে। তারা অভিযোগ করছেন ২০২১-এর নির্বাচন জিততে মরিয়া হয়ে গিয়ে বিজেপি এতদিনের নীতি, আদর্শ সব কিছুকে বিসর্জন দিলে আখেরে দলের লাভ হবে তো?

আরএসএস-এর একটি অংশ ইতিমধ্যেই মনে করতে শুরু করেছে, সাম্প্রতিক দল বদলের হিড়িক আসলে তৃণমূলের শক্তিবৃদ্ধি করছে। যে অঞ্চলে যে নেতাদের নিয়ে ঘাসফুলের অস্বস্তি ছিল, তাঁরা পদ্মফুলে চলে যাওয়াতে রাজ্যের শাসকদল আবার হারানো জমি ফিরে পাচ্ছেন। এই ঘটনা বর্ধমান হোক, কিংবা উত্তর ২৪ পরগণা সব জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

Work from Home এর বাস্তব ছবি নিয়ে আলোচনায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ দেব।