'জননেতা' নন, তবু কেন দীনেশ ত্রিবেদীর বিদায় মাথাব্যথার কারণ হতে পারে তৃণমূলের জন্য?

তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকে তিনি আছেন দলের সাথে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রূপে আসীন হওয়ার আগে তাঁর ছেড়ে আসা রেলমন্ত্রীর পদে ত্রিবেদীকেই স্থলাভিষিক্ত করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে রেলের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে মমতার সঙ্গে মতবিরোধ হলে তিনি একপ্রকার বাধ্য হয়েই ইস্তফা দেন রেলমন্ত্রীর পদ থেকে। তাঁর জায়গায় রেলমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন মুকুল রায়। এহেন দীনেশ ত্রিবেদীর বিদায়তে কতটা অস্বস্তিতে পড়বে তৃণমূল কংগ্রেস।

রাজ্যসভাতেই দলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন দীনেশ

রাজ্যসভায় বাজেট অধিবেশন চলাকালীন দলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। জানান, 'রাজ্যে হিংসার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু, এখানে কিছু বলতে পারছি না।' অধিবেশন কক্ষের মধ্যে সাংসদ পদে ইস্তফা দেন দীনেশ ত্রিবেদী। এরপর তৃণমূলও সঙ্গেও নিজের যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করেন। বর্ষীয়ান নেতা বলেন, 'দলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে তারা আমায় এখানে পাঠিয়েছে। রাজ্যে যে হিংসা চলছে তাতে কিছু করতে পারছি না। তাই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমার অন্তরাত্মা বলছে, যদি এখানে বসে থেকে কিছু না করতে পারি তাহলে আমার পদত্যাগ করাই ভালো। আমি পশ্চিমবঙ্গবাসীর হয়ে কাজ করে যাব।'

বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা

এরপর থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল তাঁর বিজেপিতে যোগদান নিয়ে। রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় থেকে শুরু করে ব্যারাকপুরের বিজেপি নেতা অর্জুন সিং, প্রত্যেকেই তাঁকে দলে স্বাগত জানিয়েছেন। এবার সেই জল্পনা আরও অনেকটা উসকে দিলেন দীনেশ ত্রিবেদী।

তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে এক অশনিসংকেত

এই ঘটনা কি হতে চলছে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে এক ভয়ানক অশনিসংকেত। যদিও ত্রিবেদীর পদত্যাগের পর দলের পক্ষে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বা সৌগত রায়ের মতো নেতারা তোপ দাগতে শুরু করেছেন, কিন্তু রাজনৈতিক মহলের ধারণা যে ত্রিবেদীকে শালীনতার সীমা ছাড়ানো আক্রমণ আরও ক্ষতি করবে তৃণমূলের।

এবার কোন যুক্তি দেবে দল?

মুকুল রায় বা শুভেন্দু আধিকারীর দল ছাড়ার পর তৃণমূল নেতাদের যুক্তি ছিল যে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত এই নেতারা বিজেপিতে যোগ দিলেন সিবিআই বা ইডির হাত থেকে বাঁচতে। এরপর যখন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রবীর ঘোষাল যখন ছাড়লেন তখন তৃণমূল নেতাদের অর্থনীতিক দুর্নীতির হাত থেকে বাঁচার তত্বটি আর কাজে এল না, কারণ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ঘোষাল দুজনেরই ব্যক্তিগত ছবি পরিষ্কার এবং দুজনেই ভদ্র এবং বিনয়ী বলে পরিচিত। তখন রাজীবের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য ছিল যে ভোটের ঠিক আগে মন্ত্রিত্ব ত্যাগের মধ্যে কোনও মহানুভবতা নেই। এমনকী রাজীব বা ঘোষালের নাম না করে তৃণমূলের কেউ কেউ বলেন যে এবারের নির্বাচনে টিকিট পাবে না বুঝে গিয়েই অনেকে দল ছাড়ছেন।

সব যুক্তিই ভোঁতা হয়ে যায় ত্রিবেদীর ক্ষেত্রে

কিন্তু এই সব যুক্তিই ভোঁতা হয়ে যায় ত্রিবেদীর ক্ষেত্রে। পরিছন্ন কালিমাহীন ভাবমূর্তি। ভদ্র এবং মার্জিত কথাবার্তা। একসময়ে তৃণমূল কংগ্রেসে কতিপয় শিক্ষিত এবং সুভদ্র বক্তা। পেয়েছেন সেরা সাংসদের সম্মানও। তাঁর চেয়ে বড় কথা যে রাজ্যসভাতে তাঁর মেয়াদকাল একবছরও পূর্ণ হয়নি। তাই টার্ম শেষ হয়ে আসছে বলেই পদত্যাগ- এই যুক্তিও টিকবে না ত্রিবেদীর বিরুদ্ধে। তাই তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের শুক্রবারে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটাই গোলগোল।

'নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ আমার অনেক দিনের পুরানো বন্ধু'

এদিকে আকস্মিক দলত্যাগের পর থেকেই বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা চলছিল। এবার সেই জল্পনা আরও উসকে দিলেন সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে আসা দীনেশ ত্রিবেদী। জানিয়ে দিলেন, 'নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ আমার অনেক দিনের পুরানো বন্ধু।' বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য আলাদা করে কোনও আমন্ত্রণের দরকার নেই বলেই মনে করছেন তিনি। তদোপরি, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার মধ্যে কোনও ভুল দেখতে পাচ্ছেন না দীনেশ ত্রিবেদী।

More TMC News