দীনেশের বিজেপি যোগের জল্পনা স্পষ্ট
তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন কিনা সেই বিষয়ে এখনও কিছু জানান দীনেশ ত্রিবেদী। তবে এদিন বিবেকানন্দের যে বাণী তুলে ধরেছেন দীনেশ তাতে স্পষ্ট তাঁর বিজেপি যোগ। বাণী বলছে, ‘জাগো ওঠো, চলতে থাকো, যতক্ষণ পর্যন্ত না গোলে পৌঁছচ্ছো।' গোল মানে কি বিজেপি? প্রশ্ন থাকছে। পাশাপাশি বরাদ্দ সময়ের শেষে দীনেশ ত্রিবেদী বক্তৃতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে!
রাজনৈতিকমহলের প্রশ্ন, কীভাবে তৃণমূলের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও বলতে শুরু করলেন দীনেশ ত্রিবেদী?
শুধু তাই নয়, আবির, সুখেন্দুশেখর যখন ভবনে উপস্থিত ছিলেন না, তখনই তাঁর ক্ষোভ উগরে দেন দীনেশ ত্রিবেদী। প্রশ্ন উঠছে, সমস্ত স্ট্রেটিজি সাজানোই ছিল আগে থেক। শুধু চাল দিলেন দীনেশ?
টুইটার থেকে সরল মমতার ছবি
রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ইস্তফা দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দীনেশ ত্রিবেদী সরিয়ে ফেললেন মমতার ছবি। তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলে দীর্ঘদিন ধরেই জ্বলজ্বল করছিল মমতার ছবি। কিন্তু ইস্তফা দেওয়ার পরেই প্রোফাইল-ব্যানার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও সরিয়ে ফেললেন দীনেশ। সেখানে দেখা গেল সেই বিবেকানন্দের ছবি। আর তাঁর ঠিক নিচেই উজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সাপোর্ট করা তাঁর টুইট। আর তাতে আরও স্পষ্ট দীনেশের বিজেপি যোগ।
উল্লেখ্য, বারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত যেদিন তৃণমূল ছাড়ার কথা বলেন সেদিন তাঁর পিছনে জ্বলজ্বল করছিল বিবেকানন্দের ছবি
রাজনীতি ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না
এখনই রাজনীতি ছাড়বেন না। আর তা ছাড়াই প্রশ্নই নেই। দীনেশের বিজেপি যোগের জল্পনা নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে এমনটাই জানিয়েছেন দীনেশ ত্রিবেদী। তবে তিনি জানিয়েছেন, এখনই যোগের প্রশ্ন নেই। তবে নিজের সঙ্গে এখন যোগ খুঁজবেন বলে এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন দীনেশ। তবে একই সঙ্গে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেছেন বর্ষীয়ান এই নেতা। তিনি জানিয়েছেন, আমি যে দলে ছিলাম, সেটা রাজনৈতিক নেতৃত্বের বদলে চলে গিয়েছিল বাণিজ্যিক সংস্থার হাতে। তেমন করে তো দল চলে না। যাদের রাজনীতি অআকখ জানা নেই, তাঁরা দল চালাবে কী করে?''
শাহ-মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন
তবে যতই তিনি এখনই বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন না বলে জানাক না কেন, সূত্রের খবর, খুব শিঘ্রই অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে পারেন দীনেশ ত্রিবেদী। এমনকি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গেও তাঁর কথা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে তাঁকে বিজেপিতে স্বাগত জানিয়েছেন দিলীপ ঘোষ এবং অর্জুন সিং। তাঁরা জানিয়েছেন, দীনেশের মতো ভালো মানুষ দলে আসলে সবসময় স্বাগত।
বুধবারই মোদীকে সমর্থন দীনেশের! ইস্তফার কারণ কি ডেরেকের সঙ্গে সংঘাত
দলীয় নেতৃত্বের উপরে তাঁর অসন্তোষ অনেক দিনের। ঘনিষ্ঠ মহলে সেটা চাপাও থাকত না। কিন্তু এ বার সেটা প্রকাশ্যে ফেটে পড়ল। একেবারে নাটকীয় ভাবে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে পদ থেকে ইস্তফা দিলেন দীনেশ ত্রিবেদী। একদিকে বাংলার আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতে তোপ দাগলেন অন্যদিকে দলের মধ্যেই কিছু করতে না পারার জন্যে দমবন্ধ হয়ে আসছে বলে মন্তব্য করলেন সদ্য তৃণমূলীত্যাগী রাজ্যসভার এই সাংসদ। তবে তাঁর সঙ্গে যে দলের দূরত্ব বাড়ছে গত কয়েকদিন ধরেই সেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। এমনকি সম্প্রতি ডেরেক ও ব্রায়েনের সঙ্গে একটা মতপার্থক্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবারই যে এভাবে গর্জে উঠবেন সে বিষয়ে কেউ আন্দাজই করতে পারেননি তৃণমূলের কোনও নেতৃত্বই। কিন্তু বৃহস্পতিবারই রাতেই একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বারাকপুরের প্রাক্তন এই সাংসদ
মোদীকে সমর্থন দীনেশের
বুধবার রাতেই একটি টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোশ্যাল মিডিয়াতে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে প্রাইভেট সেক্টরগুলি যেভাবে কাজ করছে সেই বিষয়টী তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি লেখেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে প্রাইভেট সেক্টরগুলি যে ভূমিকা নিয়েছে তাঁর জন্যে ভারত গর্বিত। এমনকি যুব সম্প্রদায়ের কাজের জন্যেই বিশ্বের দরবারের ভারতের সম্মান বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে একটি টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী। সেটিকেই রিটুইট করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন জানান দীনেশ।
পালটা লেখেন, আমি বক্তব্যের সঙ্গে সহমৎ। যেভাবে দেশের যুব শক্তি নতুন চিন্তা ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসছে তাতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের বাবু বলে উল্লেখ করে যুব সম্প্রদায়কে তাঁদের কাজে উৎসাহ দেওয়া উচিত বলে মোদীর সমর্থনে মন্তব্য লেখেন দীনেশ। আর তাঁর এই টুইট ঘিরেই একটা জল্পনা তৈরি হয়। তবে যে তিনি বিজেপিতেই যোগ দেবেন সেই বিষয়ে প্রকাশ্যে এখনও পর্যন্ত কিছু বলেননি দীনেশ ত্রিবেদী।
‘ব্যক্তিত্বের সংঘাত'
দীনেশের এমন আচরণ নতুন নয়। গত কয়েকবছর আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই সাংসদ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, নিজেদের মধ্যে ‘ব্যক্তিত্বের সংঘাতে' পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের সোনার সুযোগ হারিয়েছে তৃণমূল। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গের হাল ফেরাতে হলে অবিলম্বে হিংসার সংস্কৃতি দূর করতে হবে। শিক্ষাঙ্গন থেকে দলীয় পতাকা সরাতে হবে। তাঁর ইঙ্গিত যে নিজের দলের কাজকর্মের দিকেই ছিল তা বুঝতে বেশি সময় লাগেনি কারোও। একই সঙ্গে মোদীর কাজের প্রসংসাও করেছিলেন দীনেশ। জল্পনা তৈরি হয়েছিল যে সম্ভবত বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন তিনি। কিন্তু দল ছাড়েননি।
নেত্রীর জনমোহিনী নীতিকে অগ্রাহ্য
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যাওয়ার অভ্যাস দীনেশ ত্রিবেদীর নতুন কিছু নেই! দীর্ঘ কয়েক বছর আগের ঘটনা! রেলমন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয় দীনেশ ত্রিবেদীকে। আর সেই সময় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমোহিনী নীতিকে অগ্রাহ্য করে রেলের ভাড়া বাড়িয়েছিলেন। খেসারত হিসাবে তাঁকে মন্ত্রকের দায়িত্ব হারাতে হয়। কিন্তু ঘনিষ্ঠ মহলে সর্বদাই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গিয়েছেন দীনেশ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় মমতার বিরুদ্ধে গিয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করার ডাকও দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনও দল ছাড়েননি দীনেশ। কিন্তু এবার কি হল?
ডেরেকের সঙ্গে সংঘাতই মুল কারণ, বলছে রাজনৈতিকমহল
একাধিকবার দীনেশকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। কিন্তু কোনওদিন দল ছাড়েননি। তবে সম্প্রতি ডেরেকের সঙ্গে একাধিক ইস্যুতে বিরোধ তৈরি হয়েছিল দীনেশ ত্রিবেদী। মনমালিন্য তৈরি হয়। আজ শুক্রবার বাজেটে বিতর্কে বলার ক্ষেত্রে তাঁর নাম ছিল না। এতেই ক্ষোভ আরও বাড়ে? এমন টাই খবর প্রকাশ্যে ছড়ায়। যদিও এই বিষয়ে কিছুই প্রকাশ্যে জানাননি দীনেশ। তবে সৌগত রায় দীনেশের ক্ষোভ থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে দল যে ছাড়বেন তা ভাবতেও তিনি পারেননি বলে দাবি সৌগতের । তবে ডেরেকের সঙ্গে সংঘাত কিনা সে বিষয়ে কিছু জানাননি সৌগত রায়। এমনকি এই বিষয়ে মুখ খোলেননি ডেরেক ও ব্রায়েনও।