কুলদীপকে সুযোগ না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ কোচ, রুটদের সতর্ক করলেন প্রাক্তন অধিনায়ক

চেন্নাই টেস্ট শুরুর আগে থেকেই ভারতের স্পিন কম্বিনেশন নিয়ে চর্চা চলছিল। ভারত হারার পর তা আরও বেড়েছে। সুনীল গাভাসকরের মতো প্রাক্তনরা যেখানে মনে করেন, কুলদীপ যাদবকে নেওয়া হলে ভারতের আক্রমণে আরও বৈচিত্র্য আসতে পারে, সেখানে এমন ভাবনার সঙ্গে সহমত পোষণ করেননি ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তাঁর দাবি, সঠিক বোলিং কম্বিনেশন নিয়েই চেন্নাই টেস্টে খেলেছে ভারত। দ্বিতীয় টেস্টে কী হবে? প্রথম একাদশে কি থাকবেন চায়নাম্যান রিস্ট স্পিনার কুলদীপ? এই প্রশ্ন যখন জোরালো হচ্ছে তখন ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে একহাত নিলেন কুলদীপের কোচ কপিল পাণ্ডে। অন্যদিকে, দ্বিতীয় টেস্টের আগে রুটদের সতর্ক করেছেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেন। সবমিলিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি টেস্টের জন্য মানসিক প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে দুই দলই।

১৪টি টেস্টে দলে থেকেও বাইরে কুলদীপ

২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি। সিডনিতে ঘরের মাঠে ১৯৮৮ সালের পর ফলো অনের মুখে পড়তে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে, কুলদীপের ঘূর্ণির কারণেই। ভারতের প্রথম ইনিংসের রানের ৩২২ রান দূরে অজিদের থামিয়ে দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন কুলদীপ যাদব। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে দলের সঙ্গে থাকলেও তারপর ১৪টি টেস্টে সুযোগ দেওয়া হয়নি কুলদীপকে। তার মধ্যে ঘরের মাটিতে তিনটি সিরিজ রয়েছে। তাঁর রিস্ট স্পিন ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলতে পারে বলে মনে করেন গাভাসকর। কারণ, কুলদীপের মতো চায়নাম্যান বোলার দু-দিকেই বল ঘোরাতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা যখন স্পিনারদের ব্যাকফুটে গিয়ে ভালো খেলছেন তখন কার্যকরী হতে পারেন কুলদীপ। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শেষে অজিঙ্ক রাহানে, ভরত অরুণরা বলেছিলেন, কুলদীপকে দেশের মাটিতে খেলানো হবে। কিন্তু প্রথম টেস্টে হয়নি। তারপরই তাঁকে খেলানোর দাবি জোরালো হয়েছে। স্লো উইকেটে কুলদীপ কার্যকরী হবেন কিনা তা নিয়ে সঞ্জয় মঞ্জরেকরের মতো কয়েকজন সংশয়ে।

কী বলছেন কুলদীপের কোচ?

কুলদীপকে ১৭ বছর ধরে কোচিং করানো কপিল পাণ্ডে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের উপর যারপরনাই ক্ষুব্ধ। তিনি কুলদীপকে বাইরে বসিয়ে রাখার কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, অন্য দেশের হয়ে খেললে কুলদীপের এতদিনে ৫০টি টেস্টে ২০০ উইকেট পাওয়া যেত। ৬টি টেস্টে ২৪ উইকেট রয়েছে। ওঁকে সাধারণ ক্রিকেটারের মতো ভাবা হচ্ছে ভাবা হচ্ছে ভারতীয় দলে, ওঁর ক্ষমতা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে না, গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না পরিসংখ্যানকেও। একটা ম্যাচ একটু খারাপ খেললেই ওঁকে সাইডলাইনে পাঠানো হচ্ছে। অথচ ব্যর্থতার পরও অনেকে সুযোগ পেয়েই যাচ্ছেন। দলের সঙ্গে টানা রয়েছেন, অনুশীলন করছেন, অথচ এক রাতের মধ্যেই দলে নিয়ে শাহবাজ নাদিমকে খেলানো হল। বিরাট যা-ই বলুন এটা টেস্ট ক্রিকেট, রাতারাতি এমন সিদ্ধান্ত হতে পারে না। আমি তো বলব, নাদিমের কোচ খুব খুশি কারণ কিছু না করেই সুযোগ পেলেন তাঁর ছাত্র। আর টানা বোলিং অনুশীলন করেও ফের বসিয়ে রাখা হল কুলদীপকে। যেন ঘর কি মুরগি ডাল বরাবর। কুলদীপের কোচ মনে করেন, যে কোনও দলেই কুলদীপ অটোমেটিক চয়েস। আক্রমণে বৈচিত্র্য আনতে পারেন। ঘরোয়া ক্রিকেটেও কোনও ম্যাচে চার উইকেটের কম পাননি। তাঁর খামতিগুলি মেরামতের জন্য কুলদীপকে লকডাউনেও জোর অনুশীলন করিয়েছেন কোচ। বলে গতি বাড়িয়েছেন কুলদীপ। অতিরিক্ত রান যাতে না খরচ হয় সে ব্যাপারেও জোর দিয়েছেন। কপিল পাণ্ডে জানান, যাঁদের খেলানো হচ্ছে তাঁদের কেউ উইকেট থেকে সুবিধা আদায় করতে পারবেন না। অথচ কুলদীপের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও তা কাজে লাগানো হচ্ছে না!

কুলদীপ মানিয়ে নিয়েছেন

কুলদীপের সঙ্গে তাঁর কোচ নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। প্রথম একাদশে স্থান না পাওয়ার পর যখন মোটিভেট করতে যান তখন কুলদীপ তাঁকে বলেন, স্যর আমি এ সবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। কুলদীপ নিজে সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন। কপিল পাণ্ডে বলছেন সকলের সমান সুযোগ পাওয়া উচিত। শেষ টেস্টে পাঁচ উইকেট পাওয়া ক্রিকেটারকে কেন লাগাতার বাইরে বসে থাকতে হবে? সুযোগ না দিলে কুলদীপের ভুল ধরছেন কীভাবে? ওয়ান ডে-তেও পর্যাপ্ত সুযোগ মিলছে না, তবে সুযোগ পেলেই ভালো পারফর্ম করছেন কুলদীপ। কুলদীপকে রোহিত শর্মার কামব্যাক থেকে প্রেরণা নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন কোচ। বলেছেন, অনেক গ্রেট ক্রিকেটারকেই এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স কুলদীপকে রেখে দিয়েছে। তবে সেখানে তাঁকে পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয় না বলেই মনে করেন কপিল। তিনি বলেন, কোনও দলের যদি কাউকে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষমতা থাকে তবে প্লেয়ারদেরও এমন ক্ষমতা থাকা উচিত কোনও দল ছেড়ে যাওয়ার। অনেক সময় কুলদীপকে বেঞ্চে বসিয়ে অন্যদের খেলানো হয়। কুলদীপকে কেকেআর ছাড়লেও দল পেতে তাঁর অসুবিধা হবে না। তবে এ ব্যাপারে কুলদীপের কেকেআর ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলা উচিত।

ইংল্যান্ডকে সতর্ক করলেন নাসের

এদিকে, কুলদীপ খেলুন, কি না খেলুন, দ্বিতীয় টেস্টের আগে ইংল্যান্ডকে সতর্ক করেছেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেন। তাঁর কলামে নাসের লিখেছেন, ৩৬ রানে গুটিয়ে প্রথম টেস্টে হারার পরও অস্ট্রেলিয়ায় কামব্যাক করে ভারত সিরিজ জিতেছে। এখানেও ভারত কামব্যাকের চেষ্টা করবে। ইংল্যান্ড ভালো খেলছে। তবে টস হারলে তাদের কাজ কঠিন হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। ভারত সিরিজ ৪-০-তে জিতবে বলে অনেকেই ভেবেছিলেন বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় জেতা এবং বিরাট দলে আসায়। কিন্তু সব বিভাগেই টেক্কা দিয়েছে ইংল্যান্ড। এটা বজায় রাখতে হবে। জো রুটের প্রশংসা করে নাসের লিখেছেন, আমার মনে হয় কুকের ১৬১টি টেস্ট ম্যাচ খেলা বা ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড রুট ভেঙে দেবেন। বছর ৩০-এর রুটকে এখনই কুক, গুচ, পিটারসেনদের সঙ্গে একাসনে বসাতে তৈরি নাসের হুসেন।

আইপিএলে এবার বিরাটদের সঙ্গে থাকবেন ভারতীয় দলের এই প্রাক্তন

More INDIA VS ENGLAND 2021 News