ফাইনালের দৌড়ে তিন দল
আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে নিউজিল্যান্ড। কিউইদের প্রতিপক্ষ হওয়ার দৌড়ে রয়েছে তিনটি দল। চেন্নাই টেস্টে পরাজয়ের পরও ভারত কিন্তু ফাইনালের টিকিট পেতে পারে। সেক্ষেত্রে ভারতকে সিরিজ জিততে হবে ২-১ বা ৩-১ ব্যবধানে। ইংল্যান্ডও ফাইনালে যেতে পারে, তবে কাজটা খুব সহজ হবে না। কেন না, রুটদের চলতি সিরিজ জিততে হবে ৩-০, ৩-১ বা ৪-০ ব্যবধানে। ভারত যদি সিরিজ জেতে তবে অজিরা ফাইনালে ওঠার দৌড় থেকে ছিটকে যাবে। কিন্তু ইংল্যান্ড যদি ১-০ ও ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতে অথবা সিরিজ ১-১ বা ২-২ অমীমাংসিত অবস্থায় শেষ হয় তাহলে অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পৌঁছে যাবে। তবে চেন্নাই টেস্টের জয় পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে ইংল্যান্ডকে। রুটদের পয়েন্ট ৪৪২, নিউজিল্যান্ডের ৪২০, তৃতীয় স্থানে থাকা অজিদের পয়েন্ট ৩৩২ এবং ভারতের ৪৩০। যদিও শতকরা সাফল্যের নিরিখে কোহলিরা আছেন চার নম্বরে।
কোহলির শোচনীয় রেকর্ড
দেশের মাটিতে ১৪টি টেস্টে অপরাজেয় থাকার পর চেন্নাইয়ে হারল ভারত। চিপকে ২১ বছর ধরে অপরাজেয় থাকার ভারতীয় দলের রেকর্ডটিও এদিন ভেঙে গেল। বিরাট কোহলির অধিনায়কত্বে এই নিয়ে টানা চারটি টেস্ট হারল ভারত। এই প্রথম অধিনায়ক বিরাট টানা এতগুলি টেস্ট হারলেন। গত বছর নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়েলিংটন ও ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে পরাজয়ের সম্মুখীন হয় ভারত। এরপর গত ডিসেম্বরে অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিরাটের নেতৃত্বেই গোলাপি বলের টেস্ট হারে ভারত। তারপর ফের এই হার। গত ১০ বছরে এই নিয়ে চতুর্থবার দেশের মাটিতে টেস্ট হারল ভারত। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষবার দেশের মাটিতে অজিদের কাছে ভারত টেস্ট হেরেছিল। বিরাটের নেতৃত্বে দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে ভারত পরাজিত হল এই নিয়ে দু-বার।
উপমহাদেশে স্বপ্নের দৌড় ইংল্যান্ডের
ভারতে অধিনায়ক হিসেবে এখনও অবধি অপরাজেয় ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুট। বিদেশ সফরে টানা ৬টি টেস্ট জিতল তাঁর দল। সেই সঙ্গে এশিয়ার মাটিতে টানা ৬টি টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়ার ঘাড়েও নিঃশ্বাস ফেলছে ইংল্যান্ড। উপমহাদেশের বাইরের দল হিসেবে ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যবর্তী সময়ে এশিয়ার মাটিতে টানা সাতটি টেস্ট জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া, চেন্নাইয়ে পরের টেস্ট জিতলে সেই রেকর্ড স্পর্শ করার হাতছানি রুটদের সামনে। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কাকে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে হারানোর পর গত মাসেই শ্রীলঙ্কাকে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে হারিয়ে ভারতে পা রেখেছেন রুটরা।
সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রুট
ইংল্যান্ড শিবির জানিয়েছে, ভারতে আসার আগে শ্রীলঙ্কা সিরিজ খুব কার্যকরী হয়েছে। চেন্নাইয়ের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার পরিবেশের মিল রয়েছে। সকলে তাই দারুণভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছেন। অনভিজ্ঞ বেস-লিচ জুটির স্পিন আক্রমণ নিয়েও দুই ইনিংসে ভারতের কুড়িটি উইকেট তুলে নিয়েছে ইংল্যান্ড। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিয়ে রুট জানিয়েছেন, দলগত সংহতিতেই এই জয় এসেছে। প্রত্যেকে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন। টস জেতা আমাদের সুবিধা করে দিয়েছে। তারপর ভালো উইকেটে শুরু থেকেই যেভাবে ব্যাটসম্যানরা পরিকল্পনামাফিক নিজেদের প্রয়োগ করেছেন তাতে বড় রান তোলা সম্ভব হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাটিং করা আমাদের লক্ষ্য ছিল, সেই গেমপ্ল্যান সফল হয়েছে। ভারতে সিরিজ জিততে হলে বড় রান তুলতেই হবে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সময় আমাদের টার্গেট ছিল আগে ভারতের জয়ের সম্ভাবনার দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। বোলাররাও ভালো বল করেছেন। বিশেষ করে স্পিনাররা দুই ইনিংসেই ভালো বল করেছেন। শ্রীলঙ্কার উইকেটের সঙ্গে পুরো একরকম নয় চেন্নাইয়ের উইকেট। তা সত্ত্বেও ভালো বল করেছেন সকলেই। অভিজ্ঞ জেমস অ্যান্ডারসনের কথাও বলতে হবে। ৩৮ বছরে এসেও প্রতিদিন নিজেকে আরও উন্নত করছেন, তিনি ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের কাছে রোল মডেল। কিছু ক্ষেত্রে আরেকটু উন্নতি করে জয়ের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান রুট।
খুশি অ্যান্ডারসন, লিচ
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে ভেঙেছেন মূলত জেমস অ্যান্ডারসন আর জ্যাক লিচ। আজ প্রথম স্পেলে ৫ ওভারে ৬ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে একাই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন জিমি অ্যান্ডারসন। তিনি বলেন, উইকেট মন্থর ছিল। তবে ম্যাচ যত এগোচ্ছিল উইকেট ভাঙছিলও। সঠিক জায়গয় বল রাখাই আমার লক্ষ্য ছিল। তা পেরেছি, এই উইকেটে বোলিং উপভোগ করেছি। ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ শক্তিশালী, তবু জানতাম উইকেট এলেই চাপ বাড়ানো যাবে। শ্রীলঙ্কা সফরের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে বলে জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের স্পিনার জ্যাক লিচ। দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেট পেলেও প্রথম ইনিংসে ঋষভ পন্থের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছিলেন। তবু শেষ হাসি লিচ-ই হাসলেন দলকে জিতিয়ে। বললেন, পন্থ যেন আইপিএলে ব্যাটিং করছিলেন। টেস্টে এমন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। কামব্যাক করতে পেরে ভালো লাগছে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া রুটের অবদানের কথাও দুজনেই স্বীকার করে জানালেন, এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।