কলকাতা২৪x৭: আন্ডারওয়ার্ল্ড-অপরাধ জগত; এই কালো দুনিয়ার বাদশা হয়ত হয়নি মামুন, তবে তার নেটওয়ার্ক দেখে চমকে যাচ্ছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা অফিসাররা। ভারতে বন্দি হলেও, কোনও এক অদৃশ্য শক্তির বলে সে আগরতলা থেকে ঢাকায় নিজের গ্যাং কে চালাত। এ যেন একেবারে মারকাটারি ওয়েব সিরিজের ‘রিয়েল লাইফ’।
কম যায়নি ঢাকা পুলিশের জঙ্গি দমন শাখা (কাউন্টার টেররিজম বিভাগ)। সোমবার ভোরে তারা গোপনে অভিযান চালায়। অভিযানে ঢাকার মিরপুর পল্লবী অঞ্চল থেকে গ্রেফতার করা হয় কুখ্যাত গ্যাং লিডার মামুনকে।
জেরায় যা সব বলছে মামুন তাতে কিছুটা হলেও মিলে যাচ্ছে বাংলাদেশি আন্তর্জাতিক গ্যাংস্টার সুব্রত বায়েনের জীবনের কিছুটা। ভারতে থেকে বাংলাদেশের অপরাধ জগতের বাদশা হয়ে ছড়ি ঘুরিয়ে চলত সুব্রত বায়েন। তাকে ধরতে নেপালে রোমহর্ষক আন্তর্জাতিক অভিযানে অংশ নিয়েছিল কলকাতার পুলিশ।
সুব্রত বায়েনের মতো হাড়হিম করা অপরাধ চক্রের মাথা মামুন। জেরায় সে জানায়, বিএনপি ঘনিষ্ঠতার কথা। দলটির শাখা ছাত্রদল সংগঠনের হয়ে দাপিয়ে বেড়ানো ও পরে বিএনপি শীর্ষ নেতার মদতে গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে ত্রিপুরা চলে যাওয়ার বৃত্তান্ত।
গ্যাং লিডার মামুন স্বীকার করেছে, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় থাকাকালীন ২০০৮ সালে সেখানকার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। সেই সময় আগরতলা জেল থেকেই ঢাকার মিরপুর এলাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করতো মামুন। অর্থের বিনিময়ে কারাগারে বিশেষ সুবিধা পেতো সে। চালাতো মোবাইল ফোন। মোবাইলে যোগাযোগ করেই মিরপুর এলাকায় তোলা আদায় করত। তার ভাই জামিল এখনও ভারতে আত্মগোপন করে আছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ জানাচ্ছে, মামুনের বিরুদ্ধে ৬টি খুনের মামলা রয়েছে।
খালেদা জিয়ার আমলেই উত্থান মামুনের:
২০০১ সালে বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। জামাত ইসলামি সেই সরকারের শরিক ছিল। সেই বছরেই বিএনপি শাখা সংগঠন ছাত্রদল নেতা হিসেবে আবির্ভাব হয় মামুনের। রাজনৈতিক শক্তির বলে শুরু করে গ্যাং চালানো। ২০০১ সালে পুলিশ গ্রেফতার করলেও প্রভাবশালী তকমা থাকায় দ্রুত ছাড়া পায় মামুন। ফের শুরু করে গ্যাং চালানো। নতুন করে ধরপাকড় শুরু হতেই বিএনপির নেতা
নাসির উদ্দিন পিন্টুর পরামর্শে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিল মামুন। এরপর থেকে ত্রিপুরায় তার ফেরারি জীবন শুরু হয়।
জাল ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে আন্তর্জাতিক চক্র:
২০০৮ সালে আগরতলায় গ্রেফতার হয় মামুন। টানা ১০ বছর আগরতলার জেলে বন্দি ছিল ঢাকার গ্যাং লিডার। ২০১৮ সালে মুক্তি পেয়ে জাল ভারতীয় পাসপোর্ট বানায় মামুন। ঢাকা পুলিশ জানাচ্ছে, ওই জাল ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়েই থাইল্যান্ড,সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও নেপালে গিয়ে গ্যাং চালানোর জাল বিছিয়েছিল মামুন। বিভিন্ন দেশ থেকে নির্দেশ পাঠাত ঢাকায়। তার ফোন পেয়েই মামুন গ্যাং টাকা তোলা আদায় সহ বিভিন্ন অসমাজিক কাজ চালিয়েছে টানা প্রায় দু’দশক। তার স্ত্রী ও সন্তানরা অস্ট্রেলিয়ায় থাকে।
কুখ্যাত সুব্রত বায়েনের সঙ্গে মিল:
ঢাকার অপরাধ জগতের ডন সুব্রত বায়েন। তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা রয়েছে। এমনই সুব্রত বায়েন ২০০৪ সালে ঢাকায় তৎকালীন বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার পর পালিয়ে কলকাতায় আত্মগোপন করে। জেল থেকেই সে ঢাকার অপরাধ জগতে নির্দেশ পাঠাত। পরে জামিন পেয়ে নেপাল পালায় সুব্রত। এটা ২০০৮ সালের ঘটনা৷ তদন্তে নামেন কলকাতা পুলিশের তৎকালীন এসটিএফ যুগ্ম কমিশনার রাজীব কুমার৷ তাঁর নেতৃত্বেই শুরু হয় সুব্রত বায়েনকে ধরার রোমহর্ষক অভিযান৷ নেপালে ধরা পড়লেও সুব্রত বায়েন জেল ভেঙে পালায় ফের। ২০১৩ সালে সে ফের গ্রেফতার হয়।
সুব্রত বায়েন ও মামুন দুজনেই ঢাকার কুখ্যাত গ্যাং লিডার। তাদের অপারেশন পদ্ধতির মিল রয়েছে। মামুন কে জেরা করে তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের আরও সূত্র খুঁজছে ঢাকার পুলিশ।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.