রাজ্যের ক্রীড়াবিদদের জন্য বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আজ নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে খেল সম্মান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি। বীর বাহাদুর ছেত্রীকে জীবনকৃতী সম্মানে ভূষিত করেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৬ জনকে খেল সম্মান, ২৬ জনকে বাংলার গৌরব এবং ৭ জনকে ক্রীড়াগুরু সম্মান প্রদান করা হয়। সেই মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি প্রশিক্ষিত হয়ে যাঁরা যুদ্ধে যায় তাঁদের চেয়েও শারীরিক ও মানসিক গঠনে এগিয়ে খেলোয়াড়রা। সকলের জন্যই যখন আমরা কিছু না কিছু করেছি, তখন ক্রীড়াবিদদের পাশেও থাকবে সরকার।
আমি সকল খেলোয়াড়ের ফ্যান। আমাদের রাজ্যে ৬০ বা তার বেশি বয়সের যে প্রায় ২ হাজার ক্রীড়াব্যক্তিত্ব রয়েছেন তাঁদের এক হাজার টাকা করে পেনশন দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এ রাজ্যে খেলার জন্য কিছুই ছিল না। আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে নানা সুযোগ করে দিচ্ছি। অন্য রাজ্যে সুযোগ-সুবিধা বেশি। তবে এবার থেকে বিশেযজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি বছর ১০০ জন খেলোয়াড় বেছে নেওয়া যাবে। তাঁরা যখন খেলতে যাবেন তাঁদের খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমফান-সহ বিভিন্ন সময় মানুষের পাশে থাকায় ক্লাবগুলির ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, এবার ৮,২৮৯ ক্লাবকে ১ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। ক্লাবগুলিকে টাকা দিলে অনেক বাবুর আবার রাগ হয়। কেন দেব না? বিপদে-আপদে তো মানুষের পাশে দাঁড়ায় ক্লাবগুলিই।
বছরভর নানা কর্মসূচি নেয়। সকলকে স্বাস্থ্যসাথীতে নাম নথিভুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাহলে চিকসার খরচ নিয়ে আর চিন্তা থাকবে না। রাজ্যে ক্রীড়া পরিকাঠামোর উন্নয়নের বিস্তারিত খতিয়ান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্টেডিয়াম সংস্কারের কাজে ৪০০ কোটি টাকা খরচ করেছি। ৯৪৭টি কোচিং ক্যাম্পকে ১ লক্ষ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ক্রীড়াক্ষেত্রের ৩৪টি সংস্থাকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক অনুদান এবারও দেওয়া হল বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমফান, করোনা পরিস্থিতি সামলানোর মধ্যেই মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল খেলার বিষয়টি সামনে এসেছিল।
আমি চাই মহমেডানও আইএসএল খেলুক। কোনও দল বা দেশ বড় জায়গায় একদিনে পৌঁছায় না। আমি চাই বাংলার ফুটবল বিশ্বকে নাড়িয়ে দিক। রাজ্য সরকার ফুটবল, টিটি, টেনিস ও তিরন্দাজির আকাদেমি করেছে। সাঁতার আকাদেমিও হচ্ছে। রাজ্য সরকারের ফুটবল আকাদেমির আকাশ সোরেন ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৫ দলে সুযোগ পাওয়ায় তাঁকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আরোগ্য কামনাও করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে ৫৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন করা হলো। এতে ৩ লক্ষ ২৯ হাজার কর্মসংস্থান হবে। আমরা বেকারত্ব ৪০ শতাংশ কমিয়েছি। অনেকে এ রাজ্যে এসে মিথ্যা, তোতাপাখির বুলি বলে, কিন্তু আমরা যা করেছি তা কাগজে-কলমে বাস্তবায়িত। আরও দেড় কোটি কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। জঙ্গলমহল কাপে জয়ী ও বিজিতদের হোমগার্ডে চাকরি দেওয়া হয়েছে। দু থেকে আড়াই হাজার ছেলে-মেয়ের চাকরি হয়েছে।
জঙ্গলমহল, তরাই-ডুয়ার্স, সুন্দরবনে খেলা আয়োজন করছি। পুলিশও কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে খেলার প্রতিযোগিতা করছে। ক্রীড়াবিদদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণের বিষয়েও রাজ্য সরকার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্রীড়াবিদদের আইএএস, আইপিএস, ডব্লুবিসিএসের মতো পরীক্ষায় বসার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এইসব পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে সল্টলেকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
আবাসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। খেলা জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে বলে দাবি করে শেষে খেলাশ্রী জিন্দাবাদ, খেলা জিন্দাবাদ, জয় হিন্দ, জয় বাংলা স্লোগান দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, বন্দুকে বন্দুকে নয়, উন্নয়নের জন্য বুদ্ধিতে যুদ্ধ করতে হয়। খেলোয়াড়রা আমাদের মণিকোঠায় থাকবেন। এখান থেকেই আরও বীর যোদ্ধা বেরোবেন, খেলার যুদ্ধে এগিয়ে যান।