ফিরহাদের সঙ্গে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত নেতা, হুগলিতে চাঞ্চল্য

তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত নেতাকে ফের দেখা গেল রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রীর সঙ্গে। আগেরবার সরকারি অনুষ্ঠান না হলেও এবার কিন্তু একেবারে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে! আজ উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভা এলাকার ধর্মতলা গঙ্গা ইটভাঁটা সংলগ্ন জল পরিশোধনাগার প্রাঙ্গণ থেকে হুগলি জেলার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেই অনুষ্ঠানেই মঞ্চে মন্ত্রীর কাছাকাছি থাকতে দেখা যায় তৃণমূল থেকে গত বছরের নভেম্বরে বহিষ্কৃত হওয়া সত্যরঞ্জন ওরফে সোনা শীলকে। উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার পুর প্রশাসক তথা তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব মঞ্চে ছিলেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

উঠছে নানা প্রশ্ন

প্রশ্ন উঠেছে সরকারি কোনও পদে না থেকেও তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত ওই নেতা কীভাবে মঞ্চে থাকতে পারেন? উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল ইতিমধ্যেই বিজেপিতে গিয়েছেন। জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্যে আসে। লোকসভা ভোটের নিরিখে বেশ কিছু আসনে এগিয়েও আছে বিজেপি। তার মধ্যেই এই ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ঘটনার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে দিলীপ যাদবকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

কেন বহিষ্কার হন সোনা?

কেন বহিষ্কার হয়েছিলেন সোনা? দলবিরোধী, অনৈতিক কাজকর্মের অভিযোগে গত নভেম্বরে তৃণমূল তাঁকে বহিষ্কৃত হন তিনি। তাঁর স্ত্রী বাঁশবেড়িয়া পুরসভার প্রশাসক অরিজিতা শীল, তিনিও ছিলেন আজকের মঞ্চে। তবে সোনা শীলের থাকাটাই সকলকে অবাক করেছে। কেন না, গত নভেম্বরে দল যখন তাঁকে বহিষ্কার করে তখন বলা হয়েছিল ব্যক্তিগত স্বার্থে দলকে ব্যবহার করেছিলেন সোনা। সেই কারণেই এই পদক্ষেপ।

কী বক্তব্য ছিল দিলীপ যাদবের

দিলীপ যাদব বলেছিলেন, এই বহিষ্কার করেছে রাজ্য নেতৃত্ব। দলের কেউ যেন তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক না রাখেন। সত্যরঞ্জন ওরফে সোনা শীল অবশ্য তখন জানিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ সেটাই তাঁকে জানানো হয়নি। দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার দু-দিনের মধ্যেই সোনা শীলকে বাঁশবেড়িয়াতে এক বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠান মঞ্চে দেখা গিয়েছিল রাজ্যের মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তর সঙ্গে। এলাকায় জলের কলের কাজ দেখভালের জন্য সোনাকে বেশ কিছু দায়িত্বও দিয়েছিলেন মন্ত্রী। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, কীভাবে দলবিরোধী কাজ ও আর্থিক অনিয়মের জেরে দল থেকে বহিষ্কৃত এই নেতাকে এভাবে দায়িত্ব দিতে পারেন মন্ত্রী? তাহলে পিকে-র টিমের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে গঠিত কমিটি কি নাটক? রাজ্য বা জেলা নেতৃত্বের নির্দেশ কীভাবে অমান্য করতে পারেন একজন মন্ত্রী? নীচুতলায় কি দলের উপরতলার রাশ আলগা হচ্ছে?

উপস্থিত একেবারে সরকারি অনুষ্ঠানে

সেই অনুষ্ঠান সরকারি অনুষ্ঠান ছিল না। কিন্তু আজ সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে কীভাবে সোনা বসে রইলেন তা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তার উপর মঞ্চে উপস্থিত হেভিওয়েট মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের জেলা সভাপতি তথা উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার প্রশাসক দিলীপ যাদব। যে দিলীপ যাদবই বলেছিলেন, সোনার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবেন না তৃণমূলের কোনও কর্মী। দিলীপ যাদব ও তাঁর দাদা আচ্ছালাল যাদবের সঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক নিয়েও এখন জোর চর্চা চলছে। কোন্নগরের কানাইপুর পঞ্চায়েতের প্রধান আচ্ছালাল যাদব গতকালই শ্রীরামপুরের সাংসদকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর বক্তব্য রেখেছিলেন। এই আচ্ছেলাল যাদবের বাড়িতে অর্জুন সিং ও শঙ্কুদেব পণ্ডার যাওয়া নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। তবে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বর সঙ্গে কথা বলার পর আচ্ছালাল জানিয়েছিলেন, তিনি তৃণমূলেই থাকছেন। গতকাল উত্তরপাড়ার এক কর্মিসভায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। সাংসদ কর্মিসভার মাঝপথে চলে যেতেই আচ্ছালাল যাদব বলেছিলেন, উনি ক্ষ্যাপা সাংসদ। ওঁর কথার গুরুত্ব কেউ দেয় না। উনি দলের কর্মী হিসেবে সাংসদ হয়েছেন, আমি দলের কর্মী হিসেবে পঞ্চায়েতের সদস্য ও প্রধান হয়েছি। আমাকে বা দলের কর্মীদের অসম্মানের অধিকার ওঁর নেই। প্রবীর ঘোষাল নাকি আমার জন্যই বিজেপিতে গিয়েছেন বলা হচ্ছে। উনি দলবল নিয়ে প্রবীর ঘোষালের হয়ে আমাকে অসম্মান করতে চাইছেন। এটা মানব না। উনি আসলে বিজেপির হয়ে কাজ করে ওদের হাত শক্ত করছেন। দিলীপ যাদব বলেছিলেন, বড় সংসারে এমন ঠোকাঠুকি হতে পারে, সমস্যা মিটেও যায়।

মন্ত্রীর সঙ্গে একমঞ্চে

আজ এক মঞ্চে ছিলেন কল্যাণ-দিলীপ। কিন্তু সেখানে বহিষ্কৃত সোনা শীলের উপস্থিতি দেখে তৃণমূল কর্মীরা বলছেন, জেলায় এমন দলের অবস্থা যে বাঁচতে খড়কুটো ধরতে হচ্ছে! কোথায় দলের শৃঙ্খলা? সাসপেনশন হলে তবুও কথা ছিল। কিন্তু সোনা তো বহিষ্কৃত, দল ফিরিয়েও নেয়নি, সরকারি পদেও নেই। তা সত্ত্েও কীভাবে সরকারি অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর পাশে থাকা যায়? যেখানে আবার উপস্থিত দলের জেলা সভাপতিও, যিনি বলেছিলেন সোনার সঙ্গে দলের কেউ সম্পর্ক রাখতে পারবেন না!

কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুতে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে দেওয়া হবে চাকরি, ভোটের মুখে মাস্টারস্ট্রোক মমতার

More TMC News