নয়াদিল্লি: রবিবারের বারবেলা। ফের যেন টাটকা হয়ে উঠল ২০১৩ সালের কেদারনাথ বিপর্যয়ের স্মৃতি। সেই বছর মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভেসেছিল দেবভূমি উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা। রবিবার যোশীমঠেও যেন তারই প্রতিচ্ছ্ববি। আচমকা তুষারধসে বদলে গেল দৃশ্য। সুন্দরী উত্তরাখণ্ড হয়ে উঠল বিধ্বংসী। প্রকৃতিক তাণ্ডবলীলার সাক্ষী হয়ে রইল আসমুদ্রহিমাচল।
টেলিভিশনের পর্দায় ধ্বংসলীলার ছবি দেখে আঁৎকে ওঠেনি এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া দায়। জলের দুর্দমনীয় স্রোতে ভেসে যায় ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করতে থাকা ১৫০ জনের বেশি শ্রমিক। খবর পাওয়া মাত্রই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করে দেয় ভারতীয় সেনা ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। জানা যায় হিমবাহ ভেঙে পড়াতেই এই দুর্যোগ। এই হিমবাহ তৃতীয় বৃহত্তম নন্দাদেবী পর্বতে অবস্থিত। এটি গাড়োয়াল হিমালয়ের একটি অংশ। পশ্চিমে ঋষিগঙ্গা উপত্যকা ও পূর্বে গোরিগঙ্গা উপত্যকার মাঝে চামোলি জেলায় রয়েছে এই পর্বত। আর হিমবাহের অবস্থান হল নন্দাদেবী অভয়ারণ্য ও ঋষিগঙ্গার মাঝে।
ভূতাত্ত্বিকরা এই হিমবাহকে দুভাগে ভাগ করেছেন। নন্দাদেবী উত্তর ও নন্দাদেবী দক্ষিণ। দুটিরই দৈর্ঘ্য ১৯ কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৭ হাজার ১০৮ মিটার। এই হিমবাহ গলে অনেক নদীর সৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্য়ে একটি ঋষিগঙ্গা। এটি পরে ধৌলিগঙ্গা নাম নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বিষ্ণুপ্রয়াগের কাছে এই নদী অলকানন্দায় মিশেছে। ধৌলিগঙ্গা অববাহিকাতেই রয়েছে যোশীমঠ ও করণপ্রয়াগ। অন্যদিকে অলকানন্দার তীরে গড়ে উঠেছে শ্রীনগর, হরিদ্বার, রানিখেত ও ভীমতাল।
বিশ্বজুড়ে উষ্মায়ন শুরু হওয়ার পর দ্রুত গলছে হিমবাহ। বহু বছর ধরেই বিজ্ঞানীরা এই নিয়ে সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু রোজকার ইঁদুর দৌড়ে নাম লেখানো মানুষের ক্ষেত্রে সেদিকে মাথা ঘামানোর সময় কোথায়? অতএব প্রকৃতির রোষ বাড়তে বাড়তে মাঝেমধ্যেই বিস্ফোরণের আকার নিচ্ছে। রবিবারের ঘটনা সেই কথাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ২০১৯ সালে একটি সমীক্ষা সামনে এসেছিল। সেই সমীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছিল এক ভয়ানক তথ্য। গত ৪০ বছর ধরে ভারত, চিন, নেপাল ও ভূটানের উপর স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ চলে। তখনই জানা যায় দ্রুত গতিতে গলছে হিমালয়ের হিমবাহ।
ওই বছরই সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে এই সমীক্ষার কথা প্রকাশিত হয়েছিল। তখন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্য়ালয়ের গবেষক জোসুয়া মুরের জানিয়েছিলেন, হিমবাহ যে কত দ্রুত গলছে এটি তার স্পষ্ট প্রমাণ। গত চার দশকে হিমালয়ের হিমবাহ অতিরিক্ত পরিমাণে গলছে। সাধারণত উষ্ণতা জায়গার উপর নির্ভর করে। স্থানান্তর ঘটলে উষ্ণতারও পরিবর্তন হয়। কিন্তু গবেষণায় প্রকাশ পায় সারা পৃথিবীতে ১৯৭৫ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে যেখানে যে তাপমাত্রা ছিল, ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সব জায়গায় তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি করে বেড়েছে। প্রায় ৬৫০টি হিমবাহের অবস্থা নিরীক্ষণ করে এই সিদ্ধান্তে আসেন গবেষকরা। এও জানা যায় প্রতি বছর প্রতিটি হিমবাহ কমবেশি ০.২৫ ইঞ্চি বরফ গলাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে গোটা বিশ্বকে সংকটে পড়তে হবে। হাত থেকে তির বেরিয়ে গেলে আফশোস করেও কোনও উপায় থাকবে না।
কিন্তু বিজ্ঞানের আশীর্বাদে অলসতা ও বিলাসিতায় বয়ে যাওয়া অত্য়াধুনিক মানুষের কাছে সেসব বিষয়ে কান দেওয়ার সময় কোথায়? তাই তাদের বছর বছর মুখোমুখি হতে হয় প্রকৃতির তাণ্ডবের। প্রকৃতি যেন বারবার দরজায় টোকা দিয়ে বলে, “সতর্ক হও”। কিন্তু তাও মানুষ বধির। এভাবেই যদি চলতে থাকে একদিন উত্তরাখণ্ডের মতো বিপর্যয় সামনে থেকে দেখবে সারা পৃথিবীর মানুষ। তখন শুধু হা হুতাশ করা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। প্রকৃতির রুদ্ররোষ সেদিন সমূলে উৎপাটিত করবে মানব সভ্যতাকে।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.