মোদীর সহানুভূতি নিয়ে প্রশ্ন
যোশী মঠে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলা সফর নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য মহঃ সেলিম। এদিন তিনি বলেছেন, যদি ন্যূনতম জনদরদী হতেন মোদী, তাহলে সরকারি টাকায় বাংলায় দলীয় কর্মসূচি না করে তাঁর বিশেষ বিমানে কিংবা হেলিকপ্টারে যোশী মঠে যেতেন। উত্তরাখন্ডের যোশী মঠে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রাণ না হারানো, আহত মানুষদের পাশে থাকতেন তিনি।
অন্যদিকে, মোদী বাংলার কৃষকদের প্রতি সহানুভূতির কথা বলেছেন অথচ ৭৬ দিন ধরে দিল্লি সীমান্তে পুলিশি বর্বরতা, লাঠি, জলকামানের মুখে দাঁড়িয়েও কৃষকরা বসে আছেন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে। গোটা দেশের কৃষকদের সঙ্গে নির্মম ব্যবহার করছে মোদী সরকার অভিযোগ করে সেলিম বলেছেন, মোদীর মুখে কৃষি ও কৃষকের কথা শোভা পায় না। দেশের কৃষকদের জন্য কোনও দরদ যদি ওঁর থাকতো তাহলে প্রধানমন্ত্রী দিল্লির কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেন বলে মন্তব্য করেছেন সেলিম।
তৃণমূল বিজেপির সমঝোতা হয়েছে আগেই
প্রধানমন্ত্রী মোদী হলদিয়ায় তৃণমূলের সঙ্গে বাম-কংগ্রসের সমঝোতার অভিযোগ তুলেছেন। যা নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করতে গিয়ে মহঃ সেলিম বলেছেন, সারা দেশ আসল সত্যি জানে। জন্মের সময় থেকে বিজেপি'র সঙ্গে তৃণমূলের প্রকাশ্যে বন্ধুত্ব, নির্বাচনী লড়াই, বিজেপির সঙ্গে একই মন্ত্রিসভায় থাকা। মোদীর সঙ্গেও মমতার সখ্য সুবিদিত বলেছেন সেলিম। গুজরাট দাঙ্গার সময় মোদীকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফুল পাঠিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। অন্যদিকে সেলিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেই জানিয়েছেন প্রতিবছর নিয়ম করে তিনি মোদীকে কুর্তা, মিষ্টি পাঠান। মমতার উপহারের বিনিময়ে মোদী কী উপহার দিয়েছেন সেটা তিনি বাংলার মানুষকে স্পষ্ট করে জানান, দাবি করেছেন তিনি। অন্যদিকে কেরালা প্রসঙ্গে মোদী বলেছেন, বাম-কংগ্রেসের বোঝাপড়ার কথা। এব্যাপারে সেলিম বলেন, কেরালা নিয়ে মোদীর গাত্রদাহ হওয়া স্বাভাবিক। কেরালায় আরএসএস খুন-সন্ত্রাস চালিয়েও সুবিধা করতে পারেনি। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, কেরালায় তৃণমূলের মত সহযোগী শক্তি মোদী এখনও পাননি।
মোদীর 'রামকার্ড' নিয়ে প্রশ্ন
বাংলার মানুষ যখন তোলাবাজ দুর্নীতিগ্রস্ত সারদা-নারদে অভিযুক্ত তৃণমূল সরকারকে থেকে লালকার্ড দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তৃণমূলকে লালকার্ড দেখানোর জন্য ১৬টি বামপন্থী দল, কংগ্রেস এবং তখন আরএসএস'র পরামর্শে মোদী ‘রামকার্ড' দেখিয়ে তৃণমূলের চোর-জোচ্চোরদের নিজেদের দলে টেনে জার্সি বদল করাচ্ছেন। অভিযোগ করেছেন সেলিম। যে তৃণমূল-মাওবাদীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে হাত মিলিয়ে নন্দীগ্রামের ষড়যন্ত্রের শরিক ছিল, দিনের পর দিন যে তৃণমূল-মাওবাদীদের যৌথবাহিনী নন্দীগ্রামে রাস্তা কেটেছে, মোদী তাদেরই নিজেদের দলে টানছেন। নন্দীগ্রাম নিয়ে মোদীর মন্তব্য হল আত্মঘাতী গোল। মন্তব্য করেছেন সেলিম। মোদী-অমিত শাহদের একাদশে তৃণমূলের চোর-অপরাধীরাই আলো করে বসে আছেন বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি।
কেন্দ্র সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন
মোদী বাংলায় এসে বলছেন, বিজেপি সরকারের আসলে উন্নয়ন হবে বাংলায়। এব্যাপারে সেলিমের প্রশ্ন, সাত বছর কেন্দ্র সরকার কেন বাংলায় একটিও প্রকল্প চালু করলো না। মোদী সরকার বাংলায় থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা ব্রিজ অ্যান্ড রুফ, দুর্গাপুর এএসপি, বেঙ্গল কেমিক্যাল, সাঁতরাগাছি প্রেস বিক্রি করতে চেয়েছে। বাংলাতে একটি কলকাতাকেন্দ্রিক ব্যাঙ্ক পর্যন্ত রাখতে দেয়নি মোদী সরকার। মোদী বলেছেন, লকডাউনের সময় তাঁর সরকারের ফিরিস্তির কথা। সেলিম দাবি করেছেন, লকডাউনের সময় বামপন্থীরাই ছিলেন মানুষের পাশে। বামপন্থীরা যখন দাবি করেছেন, আয়কর না দেওয়া প্রতিটি পরিবারকে মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা অর্থ সাহায্যের কথা, প্রতিটি পরিবারকে মাসে দশ কেজি করে খাদ্যশস্য দেওয়ার কথা মোদী সরকার একটি দাবিও না মেনে মানুষকে থালা বাজানোর আর হাততালি দেওয়ার নিদান দিয়েছেন বলে কটাক্ষ করেন সেলিম।