লক্ষ্মীর ভরসার মান রেখেছেন, আবির্ভাবেই সৌরাশিসকে চমকে দিয়েছিলেন অশোক দিন্দা

মঙ্গল-সন্ধ্যায় সব ধরনের ক্রিকেটকে গুডবাই জানিয়েছেন অশোক দিন্দা (Ashoke Dinda)। বর্ণময়, লড়াকু চরিত্র। এরপর দিন্দা কী করবেন? ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, নাকি যোগ দেবেন রাজনীতিতে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চে থাকার কথা উঠলে দিন্দা পাল্টা বলেছেন, আমি মেদিনীপুরের ছেলে। শুভেন্দু অধিকারীর সভাতেও তো যেতে পারি। অর্থাৎ রাজনীতিতে আসা বা বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করেননি নৈছনপুর এক্সপ্রেস। দিন্দার অবসরের পর তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে লক্ষ্মীরতন শুক্লা ও সৌরাশিস লাহিড়ী দুজনেই তাঁকে প্রশংসায় ভরালেন।

দীর্ঘদিন লক্ষ্মীরতন শুক্লা (Laxmiratan Shukla)-র নেতৃত্বে খেলেছেন অশোক দিন্দা। লক্ষ্মীরতন শুক্লা বললেন,"দিন্দাকে শুরু থেকে দেখছি। মেদিনীপুর থেকে আসা একজন, কোলে মার্কেটের মেসবাড়িতে থাকত। সেখান থেকে যে জায়গায় পৌঁছেছে তা ভেবে ভালো লাগে। আমরা প্রথম থেকেই ওর মধ্যে লড়াকু মনোভাব দেখতে পেতাম। এই মনোভাব, সেই সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম, ডেডিকেশন দিন্দাকে দিন্দা বানিয়েছে। খুব কমই ওকে চোট পেতে দেখেছি। কোনওদিন না বলতে দেখিনি। কখনোই বলেনি যে্, ক্লান্ত লাগছে বল করতে পারব না। একজন ভালো প্লেয়ার হতে যে গুণটা সবার আগে জরুরি। বাংলার হয়ে, ভারতের হয়ে খেলেছে, আইপিএল খেলেছে এতো বছর। ওর উপর খুব বিশ্বাস রেখেছি বরাবরই। যখনই দিন্দার হাতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বল তুলে দিয়েছি, বিপক্ষের উইকেট তুলে নিয়ে অনেক তুল্যমূল্য ম্যাচে দলকে জিতিয়েছে। রণ (রণদেব বোস), ম্যাকো (শিবশঙ্কর পাল)-রা ছিল। ওদের সঙ্গেই দিন্দাকে পেয়েছি। জানতাম, ওর কাছ থেকে যা চাইছি দম রেখে জোরে গতিতে বল করে ও ঠিক সেটাই করে দেবে। এক কথায় বলতে হলে বলব, দিন্দা মন দিয়ে খেলত। ভারতীয় দলে আরও সুযোগ পাওয়া উচিত ছিল কিনা তা নিয়ে কিছু এখন বলছি না। এখন বাংলা থেকে জাতীয় নির্বাচকও নেই। হলে তখন বলব। তবে এটা ঠিক, অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। রাজনীতি, ক্রিকেট বা ষা কিছুর সঙ্গেই ভবিষ্যতে দিন্দা যুক্ত থাকবে সেটা একেবারেই ওর সিদ্ধান্ত। আমাদের সমর্থন ওর সঙ্গে থাকবে।"

অবসরের পর দিন্দা কী করবেন তা একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন সৌরাশিস লাহিড়ীও (Saurashish Lahiri)। অভিষেক ম্যাচ থেকে তাঁকে দেখেছেন, বছরের পর বছর ড্রেসিংরুম শেয়ার করেছেন। সৌরাশিস বললেন, "দিন্দা বাংলার সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের মধ্যে একজন। এক কথায় ক্যাপ্টেনরা যেমন প্লেয়ার দলে চান দিন্দা ঠিক তেমনই। বাংলার হয়ে যে পরিমাণ বোলিং করেছে, ক্লান্তিহীনভাবে বোলিং করে বহু ম্যাচ জিতিয়েছে তা অবিশ্বাস্য। অদম্য মনোভাব দেখিয়ে নিজেকে ১০০ শতাংশ উজাড় করে দিয়েছে। কোন উইকেটে বোলিং করছে তা দিন্দার কাছে বড় ছিল না। দিনের প্রথম ওভারেও যেমন, দিনের শেষ ওভারেও দিন্দা তেমনই। অসাধারণ পারফর্মার, অসাধারণ চরিত্রসম্পন্ন। ভালো লাগত ওর আগ্রামী মনোভাব, বিপক্ষকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে না দেওয়ার প্রত্যয়। সব সময় প্রস্তুত থাকত নিজের সেরাটা দিতে।" অভিষেক ম্যাচে সৌরাশিসকে চমকে দিয়েছিলেন দিন্দা। সে কথা বলতে গিয়ে সৌরাশিস বললেন, ২০০৫ সালে পুনেতে আমাদের ম্যাচ ছিল মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। সে ম্যাচেই দিন্দার অভিষেক হয়। সেবার কোচ পরশ মামরে আমাকে বলেছিলেন স্লিপ, গালিতে ফিল্ডিং করতে। অনুশীলন করে ওই ম্যাচে দাঁড়িয়েছিলাম। দিন্দার প্রথম কিংবা দ্বিতীয় ওভারের একটা বল ব্যাটসম্যানের ব্যাট ছুঁয়ে যে বিদ্যুতের গতিতে উড়ে গেল আমি রিয়্যাক্ট করার সময় পাইনি। সঙ্গে সঙ্গে উইকেটকিপার-অধিনায়ক দীপ দাশগুপ্তকে বলেছিলাম, কী জোরে বল! আমার হাতে লাগলে আর তো বল করতে পারব না। আমাকে অন্য জায়গায় দাঁড় করাও। এরপর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪২০ উইকেট গিয়েছে দিন্দার ঝুলিতে। যা রীতিমতো ঈর্ষণীয়।

ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম করা সত্ত্বেও দিন্দার জাতীয় দলে যতটা সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল তা হয়নি বলে আক্ষেপ রয়েছে বাংলার ক্রিকেট মহলে। সৌরাশিস অবশ্য বললেন, দিন্দার ভারতের হয়ে খেলা গর্বের ব্যাপার। এর পাশাপাশি রাজ্যের হয়ে তাঁর পারফরম্যান্স, অবদান প্রতিবার ড্রেসিংরুমে যেভাবে প্রশংসা, স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে তাও একজন ক্রিকেটারের কাছে অনেক। আশা করি, পরিবারের সঙ্গে তাঁর আগামী দিন আরও ভালো কাটবে।

More CRICKET News