সুমন ভট্টাচার্য: কঙ্গনা রানাওয়াত বনাম রিহানা, পপস্টার। বুধবার বিকাল পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়া যে লড়াই নিয়ে আলোড়িত ছিল, পরবর্তীকালে সেটা ‘মণিকর্ণিকা’র সঙ্গে হ্যারিসদের ‘পাঙ্গা’য় বদলে যাবে না তো?

এইরকম ভাবনার কারণ পপ সুপারস্টার রিহানা যখন দিল্লিতে শিখ কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন করে ট্যুইট করেছেন, তখন না হয় তাঁকে আক্রমণ করে একেবারে কৃষকদের ‘জঙ্গি’ বলেই দেগে দিয়েছেন, কিন্তু মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বোনঝি মিনা হ্যারিসও যখন সেই কৃষক বিক্ষোভের পাশে দাঁড়ান, তখন কঙ্গনা রানাওয়াত কি বলবেন?

আসলে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর সময় থেকেই ‘ক্যুইন’-এর অভিনেত্রী শুধু বলিউডের নয়, ভারতীয় রাজনীতির ‘স্কাড মিসাইল’, কখন কাঁর উপর আছড়ে পড়বেন, তা কেউ জানে না। সেই যে সাদ্দাম হোসেন বনাম মার্কিনি ফৌজের যুদ্ধের সময়, মানে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় আমরা ‘স্কাড মিসাইল’ বা ‘দূর নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপনাস্ত্র’র লক্ষ্যভেদের ক্ষমতা এবং হিসাবে ভুল হয়ে গেলে পরে কার মাথায় আছড়ে পড়বে, তাই নিয়ে আশঙ্কার কথা জানতে পেরেছিলাম।

‘গ্যাংস্টার’ বা ‘তনু ওয়েডস মনু’ দিয়ে বলিউডের যে নায়িকা একসময় আমাদের মুগ্ধ করে দিয়েছিলেন, তিনিই যে এখন দূর নিয়ন্ত্রিত বা ‘রিমোট কনট্রোলড মিসাইল’, সেই নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকতে পারে না। বলিউডের এই নায়িকা, যিনি প্রথমদিকে ট্যুইটারে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলতেন তাঁর ‘প্রাক্তন’ প্রেমিকদের বিরুদ্ধে কামান দেগে, তিনি যে সেই রোশনায় কবে রাজনীতির আঙিনায় এনে ফেললেন তা বোঝা যায়নি। কিন্তু সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর সময় থেকেই কঙ্গনা রানাওয়াত মানেই আগ্নেয়গিরি, এমন এক আগ্নেয়গিরি যার উদগীরণে কোথায় প্লাবণ আসবে, কেউ জানে না। কখনও তিনি মহারাষ্ট্র সরকার এবং শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরেকে নিশানা করেছেন, তো কখনও নিজের ট্যুইটে ‘ট্যাগ’ করে দিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকে।

Rihanna's tweet on Farmer's protest
কৃষকদের সমর্থনে এই টুইট করেন রিহানা।

মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে সংঘাতের জেরে কঙ্গনা হয়ত মুম্বাই ত্যাগ করেছেন, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কাউকে ‘ট্যাগ’ করে আক্রমণ করা বন্ধ করেননি। কৃষক বিক্ষোভের সময় তিনি যখন আন্দোলনকারী শিখ রমণীদের নিশানা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ শুরু করেছেন, তখন তাঁর সঙ্গে পাঞ্জাবী সংগীত এবং সিনেমার সুপারস্টার দলজিৎ দোশানজির যে ট্যুইট যুদ্ধ হয়েছিল, তা মনে রাখার মতো। সোশ্যাল মিডিয়া সেই সময় দলজিৎ-এর পাঞ্জাবীতে উত্তর এবং ‘পাঞ্জাবী অস্মিতা’ মনে করিয়ে দেওয়াকে চূড়ান্ত সমর্থন জানিয়েছিল। নেট নাগরিকদের কাছে দলজিতের গ্রহণযোগ্যতা টের পেয়ে যাওয়ার পর কঙ্গনা কিছুদিন চুপ করে গেলেও প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন লালকেল্লায় বিক্ষোভের ঘটনা নিয়ে ফের আসরে নেমে পড়েন। এবং যেহেতু কৃষকদের বিক্ষোভকে দলজিত বা অন্য পাঞ্জাবী সেলেব্রেটিরা সমর্থন করেছিলেন তাঁদেরকে একেবারে ‘জঙ্গি হামলায় মদতকারি’ বলতেও দ্বিধা করেননি।

Kangana's tweet to Rihanna
রিহানাকে এভাবেই খোঁচা দেন কঙ্গনা।

কিন্তু এবার পরিস্থিতিটা ভিন্ন। রিহানা একা শুধু কৃষক বিক্ষোভের সমর্থনে এসে দাঁড়াননি, তাঁর সঙ্গে পরিবেশ আন্দোলনের জন্য গোটা বিশ্বে সমাদৃত গ্রেটা থুনবার্গ এবং খোদ কমলা হ্যারিসের ঘনিষ্টতম আত্মীয় মিনা হ্যারিস ট্যুইট করেছেন। কঙ্গনা বা অন্য যেসব বলিউড তারকারা রিহানার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন, তাঁরা সবাই যদি ‘রিমোট কন্ট্রোলড স্কাড মিসাইল’ হন, তাহলে খেয়াল রাখা ভালো উল্টোদিকে হ্যারিসরা রয়েছে। অর্থাৎ কমলা হ্যারিসের বোনঝি মিনা হ্যারিসের সমর্থনকে হালকাভাবে দেখলে ভুল করা হবে। রিহানার ‘প্রতিস্পর্ধী’ হিসাবে কঙ্গনার মাঠে নামা নিশ্চয় কৃষক আন্দোলন যাতে গোটা বিশ্বের কাছে ভারতের অস্বস্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সেইজন্য জোরদার প্রচেষ্টা। কৃষক আন্দোলন এখন যেখানে দাঁড়িয়ে, সেই ঘূর্ণি পিচে যেসব সেলেব্রেটিরা ব্যাট করতে যাচ্ছেন, তাঁদের এটা মাথায় রাখতে হবে গ্রেটা থুনবার্গের মতো ‘অ্যাক্টিভিস্ট’ বা রিহানার মতো জনপ্রিয় পপস্টার যখন কৃষকদের আন্দোলনের বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন, তখন এমনিতেই গোটা বিশ্ব জানতে চাইবে নয়াদিল্লিতে কী হচ্ছে। তার সঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বা কমলা হ্যারিসের বোনঝি মিনা হ্যারিসের ‘রাজনৈতিক গুরুত্ব’টাকে যোগ করে নিতে হবে।

কঙ্গনা রানাওয়াত যদি সব বলকে স্পিনারদের ফুলটস ভাবেন, তাহলে বিপক্ষে পেস বোলার থাকলে তার বলের গতি বলিউডের নায়িকাকে সমস্যায় ফেলতে পারে। ‘দূর নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপনাস্ত্র’ হওয়ার যা যা সমস্যা, তা হয়ত বলিউডের এই অভিনেত্রী এখনও জানেন না। ভারতীয় রাজনীতিতে তিনি এতদিন যে তুফান তুলেছেন, সেটা যে বিশ্ব রাজনীতিতে কতটা বুদবুদের মতো তার উপলব্ধি হয়ত তাঁর নেই। আমাদের বরং চোখ রাখতে হবে নয়াদিল্লিতে চলতে থাকা এই কৃষক বিক্ষোভ এবার সত্যি সত্যি কতটা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকে।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

Caption: ৩৭৭ এর শেকল থেকে মুক্তির পর কোথায় দাঁড়িয়ে LGBTQ আন্দোলন। আলোচনায় বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়।