সিএবি-র প্রতিষ্ঠা দিবস কেন ফ্র্যাঙ্ক ওরেল দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়?

আজ ৩ ফেব্রুয়ারি। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (CAB) প্রতিষ্ঠা দিবস। এই উপলক্ষে বরাবরের মতো এই বিশেষ দিনটি উদযাপিত হচ্ছে ফ্র্যাঙ্ক ওরেল (Sir Frank Worrel) দিবস হিসেবেও। সিএবি-র ক্লাব হাউসে আয়োজন করা হয়েছে রক্তদান শিবিরের। অ্যাসোসিয়েশন অব ভলান্টারি ব্লাড ডোনারসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সাতটি ব্লাড ব্যাঙ্কে মোট ১২০০ ইউনিট রক্তদানের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। রক্তদাতাদের এবার দেওয়া হবে ঝুলন গোস্বামীর (Jhulan Goswami) সই করা সার্টিফিকেট।

কেন ফ্র্যাঙ্ক ওরেল দিবস?

প্রশ্ন জাগতেই পারে, কেন এই দিনটি ফ্র্যাঙ্ক ওরেল দিবস দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে? ১৯৮১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠা দিবসের অঙ্গ হিসেবে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি স্যর ফ্র্যাঙ্ক ওরেলের নামাঙ্কিত রক্তদানের এই কর্মসূচি করে আসছে। কেন এই পদক্ষেপ তার জন্য ফিরে যেতে হবে তারও ১৯ বছর আগে। ১৯৬২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিল ভারত, অধিনায়ক নরি কন্ট্রাক্টরের (Nari Contractor) নেতৃত্বে। তখনকার দিনে ব্যাটসম্যানদের জন্য হেলমেট ছিল না। পিচ খোলা থাকত, বিমার বা বাউন্সার দেওয়ার কোনও সীমা ছিল না। প্রথম টেস্টে বিশ্রী হারের মুখোমুখি হয় ভারত, ব্যর্থ হন কন্ট্রাক্টর। এরপর দ্বিতীয় টেস্টের আগে গ্রিফিথ, হল-সমৃদ্ধ বার্বাডোজের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে যায় ভারত। খেলার ইচ্ছা না থাকলেও দলের চোট সমস্যা থাকায় খেলেন কন্ট্রাক্টর। প্রথমদিকে খুব একটা অসুবিধা না হলেও হঠাৎ চার্লস গ্রিফিথের একটি বল সোজা গিয়ে কন্ট্রাক্টরের মাথায় লাগে। মাথায় চোট লাগায় জীবন সংশ, তৈরি হয়। ত্রিনিদাদ থেকে আনা হয় এক বিশিষ্ট চিকিৎসককে। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে অপারেশন। সে সময় প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হয়। সফররত ভারতীয় দলের চাঁদু বোরদে, পলি উমরিগড় ও বাপু নাদকার্নির রক্তের গ্রুপ কন্ট্রাক্টরের রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিলেছিল। সে সময় ফ্র্যাঙ্ক ওরেল ও তাঁর সতীর্থরা এগিয়ে আসেন ভারত অধিনায়কের জীবন বাঁচানোর জন্য রক্তদান করতে। তাঁদের এই মানবিক উদ্যাগে অপারেশন সফল হয়, ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে ওঠেন কন্ট্রাক্টর। তবে আর কোনও ভারতীয় দলে সুযোগ পাননি। এরপর ১৯৬৬-৬৭ মরশুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গে ওরেল ভারত সফরে আসেন। পরে তাঁর লিউকেমিয়া ধরা পড়ে। ১৯৬৭ সালের ১৩ মার্চ মাত্র ৪২ বছর বয়সে জীবনাবসান হয় ওরেলের।

ওরেলকে সম্মান সিএবি-র

ক্রিকেট-সহ খেলাধুলো যে কোনও সীমানায় আবদ্ধ নয় তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন ওরেল। সে কারণে সিএবি-ও সিদ্ধান্ত নেয় ১৯৮১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠা দিবসে ফ্র্যাঙ্ক ওরেলের নামাঙ্কিত রক্তদান শিবির আয়োজন করা হবে। বছর এগিয়েছে, কলেবরে বেড়েছে এই প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। প্রথম বছরেই রক্তদাতাদের দেওয়া হয়েছিল নরি কন্ট্রাক্টরের সই করা সার্টিফিকেট। এরপর প্রতি বছর দেশ-বিদেশের বহু ক্রিকেটারের সই করা সার্টিফিকেট দেওয়ার রীতি চালু আছে। ব্র্যাডম্যান, বোথাম, ইমরান, গাভাস্কার, কপিল, পঙ্কজ রায়, উমরিগড়, অরুণলাল, বেদী, ওয়াদেকার, বিশ্বনাথ, মুস্তাক আলি, দেওধর, বিজয় হাজারে, লালা অমরনাথ, ওয়ালকট, পতৌদি, রবি শাস্ত্রী, চন্দ্রশেখর, সোবার্স, টনি গ্রেগ, ওয়েসলি হল, প্রসন্ন, গ্রেগ চ্যাপেল, জন রাইট, সৌরভ, স্টিভ ওয়া, কুম্বলে, চুনী গোস্বামী, মাইক ব্রিয়ারলি, আলি বাখার, জয়সূর্য, রিচি বেনো, বেঙ্কটরাঘবন, লারা, দ্রাবিড়, যুবরাজ,লক্ষ্মণ, সচিন, বিরাট ও রোহিতের স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে রক্তদাতাদের। এবার দেওয়া হচ্ছে ঝুলনের সই করা সার্টিফিকেট।

এদিন সকালে সিএবি-র পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের মূর্তি ও জগমোহন ডালমিয়ার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া। সিএবি-র আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি রক্তদাতাদের উৎসাহিতও করেন।

ভারত বনাম ইংল্যান্ড ২০২১ : চিপকে ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় উজ্জ্বল কোন কোন ক্রিকেটার?

More CRICKET News