শঙ্কর দাস, বালুরঘাট : অসহায় ও দুঃস্থদের কাছে আস্ত ভগবান বালুরঘাটের চকলেট দাদু। জেলার প্রত্যন্ত এলাকার পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষদের সেবা করাই তাঁর কাছে পরম ধর্ম।
ছোট্ট বেলা থেকে অভাব অনটন ও অসহায়তার বিরুদ্ধে লড়াই করে বড় হওয়া তাপস কুমার চক্রবর্তী। সকলে যাঁকে চকলেট দাদু নামেই চেনেন। এবছর দক্ষিণ দিনাজপুরের এই চকলেট দাদুকেই বঙ্গরত্ন সম্মান প্রদান করতে চলেছে রাজ্য সরকার। আগামী সোমবার শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উৎসবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তাঁকে এই সম্মানে ভূষিত করবেন। চকলেট দাদুকে বঙ্গরত্নর জন্য মনোনীত করায় হিলি থেকে হরিরামপুর ও কুমারগঞ্জ থেকে তপন সর্বত্র খুশির হাওয়া।
তাপস কুমার চক্রবর্তীর জন্ম হিলি থানার কিসমতদাপট গ্রামে। পিতা প্রয়াত ললিতমোহন চক্রবর্তীর জীবিকা ছিল গ্রামীণ পুরোহিতগিরি। পরিবারের আর্থিক অনটনে লেখাপড়া ও বড় হওয়ার লড়াইটা ছিল তাঁর নিদারুন কষ্টের। দারিদ্রতার কারণে ছিলনা প্রয়োজনীয় পোষাক ও পড়াশুনার বই খাতাপত্র। বাড়ি বলতে একটি মাত্র নড়বড়ে ঘর। বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতেও চাল দিয়ে পড়তো জল। নাবালক থেকে সাবালক হয়ে ওঠা পথের প্রতিটি পদক্ষেপে অভাবের কষ্ট ও অসহায়তার বেদনা তিনি অনুভব করেছিলেন। যে অনুভুতিগুলিই তাঁর জীবন-দর্শনকে পাল্টে দিয়েছে ও সমৃদ্ধ করেছে।
সতের বছর বয়স থেকেই তিনি সেবামূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। সেই সময় দুঃস্থ এক নিকটাত্মীয়ের কন্যার বিবাহ দিয়েই তাঁর সেবাযাত্রার শুরু। পরবর্তীতে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নেশায় বুদ্ হয়ে আজ ৬৮ বয়সেও সেই কাজে অবিচল তিনি। এই বয়সেও সাইকেল চালিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রত্যন্ত এলাকার আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া গ্রাম গুলিতে পৌঁছে দুঃস্থদের পেটে অন্ন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বই খাতা কলম পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। তাপস কুমার চক্রবর্তীর ব্যাগ নামক ঝোলাতে সব সময় মজুত থাকে চকলেট। গ্রামেগঞ্জের রাস্তাঘাটে শিশুদের দেখলেই তিনি ঝোলা থেকে সেগুলি বের করে তাঁদের হাতে গুঁজে দেন। এমনই সব কাজে মধ্য দিয়েই তাপস কুমার চক্রবর্তী শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলের হৃদয়ের চকলেট দাদুতে পরিণত হয়ে গেছেন।
ত্রিমোহিনী কৃষক সেবা সমবায় সমিতির সুপারভাইজার হিসেবে তাঁর প্রথম চাকরি জীবনের শুরু। তারপর সানাপাড়া এসসি হাইস্কুলে শিক্ষকতা। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গ তফশিলি জাতি ও আদিবাসী উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম নামক বিভাগে যোগদান। পেনশন নেই জেনেও শুধুমাত্র সেবার মানসিকতায় পশ্চাত্পদ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও কাজের লক্ষ্যেই এই বিভাগের চাকরিতে ১৯৮২ সালে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে চাকরিতে অবসর গ্রহণের পরেও আদিবাসী ও অসহায় দুঃস্থ মানুষদের পাশ থেকে সরে না গিয়ে উল্টে তাঁদের সাথে আষ্টেপৃষ্টে নিজেকে জড়িয়ে নেন। পেনশনহীন অবসর জীবনেও তিনি দৈনিক অনাহার অপুষ্টি ও দারিদ্রতায় জর্জরিত মানুষগুলির জন্য চালডাল তেলনুন ও ওষুধপত্র ভর্তি ব্যাগ নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে চলেছেন।
শুধু খাদ্য সামগ্রীই নয়। শিক্ষার আলো থেকে যোজন দূরে অবস্থিত গ্রামগুলির অসহায় মানুষরা যাতে সরকারী প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেন সেই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন এই মানুষটি। আদিবাসী যুবক যুবতিদের রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি ও নানান বিষয়ে তাঁদের মধ্যে সচেতনতা বোধও জাগিয়ে তুলছেন। বঙ্গরত্ন সম্মানের জন্য তাঁকে মনোনীত করার বিষয়টি তিনি জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক শান্তনু চক্রবর্তী মারফত জানতে পারেন। রবিবার সকালেই সরকারী ব্যবস্থায় চকলেট দাদুকে বালুরঘাট থেকে শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.