লিবারেশনের 'একলা চলো' নীতি
বিহারের বিধানসভা ভোটে লিবেরেশন লড়াই করেছিল মহাজোটের অঙ্গ হিসাবে। অসমে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেও একই ভাবে জোট গড়ে উঠছে। কিন্তু বাংলায় বাম ও কংগ্রেস জোটের বাইরে গিয়ে 'একলা চলো' নীতি গ্রহণ করল লিবারেশন। প্রাথমিক ভাবে রাজ্যে ১২টি আসনের তালিকা দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা জানাল তারা। এই ১২টি আসনের বেশিরভাগই আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায়, যেখানে বিজেপির জমি খুবই শক্ত হয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এদিকে ভবিষ্যতে উত্তরবঙ্গে আরও আসনে প্রার্থী দিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিল লিবারেশন।
বাম জোট ছেড়ে 'স্বাধীনতা ঘোষণা'
একদিকে যখন বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতা নিয়ে অঙ্ক কষতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়, জোট ছেড়ে 'স্বাধীনতা ঘোষণা' করল লিবারেশন। বামফ্রন্ট ও সহযোগী মিলে ১৬ দলের মধ্যে আছে লিবারেশন। তাদের জন্য আসন ছাড়তে হবে ধরেই কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিলেন বিমান বসুরা। কিন্তু লিবারেশনের ঘোষণার পরে সেই অবকাশ আর থাকল না।
বাম-কংগ্রেস জোট
বৃহস্পতিবার কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে জোটের নেতাদের বৈঠক হয়৷ তার পর এক সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হয়ে ১৯৩টি আসনে সমঝোতা হওয়ার কথা জানা গিয়েছে। এই আসন রফা দুটি ধাপে হল৷ প্রথম ধাপে ৭৭টি আসন নিয়ে সমঝোতা হয়৷ আর দুই দিন আগে আরও ১১৬টি আসন নিয়ে সমঝোতা হল৷ বামফ্রন্ট ১০১টি আসনে লড়াই করবে৷ আর কংগ্রেস লড়বে ৯২টি আসনে৷
'আমরা চাই, বিজেপিকে ঠেকাতে'
এদিকে সংখ্যালঘু ভোট কাছে টানতে আব্বাস সিদ্দিকি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গেও আলোচনা করছে বামজোট। এই আবহেই বিজেপিকে ঠেখাতে তৃণমূলকে সমর্থন করার কথা শোনা যায় লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের গলায়। তিনি বলেন, 'বাম ও কংগ্রেস নেতারা যদি বলতেন যে বিজেপিকেই তাঁরা প্রধান শত্রু বলে মনে করছেন, তা হলে আমরা এই জোটে থাকতাম। কিন্তু সেটা তাঁরা বলছেন না। আমরা তাই স্বাধীন ভাবে লড়ছি। আমরা চাই, বিজেপিকে ঠেকাতে।'
কোন কোন আসনে লিবারেশন?
প্রাথমিক ভাবে ফাঁসিদেওয়া, ময়নাগুড়ি, মোথাবাড়ি, খড়গ্রাম, মন্তেশ্বর, জামালপুর, ওন্দা, রানিবাঁধ, কৃষ্ণনগর (দক্ষিণ), নাকাশিপাড়া, ধনেখালি, উত্তরপাড়া, এই আসনগুলিতে প্রার্থী দেওয়া হবে। তবে ওই আসনগুলিতে বাম ও গণ আন্দোলনের প্রার্থীদের সমর্থন জানাবে লিবারেশন। ওই আসনগুলিতে বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই করতে যদি তৃণমূল শক্তিশালী হয়, তবেই তৃণমূলকেই সমর্থন জানাবে তারা। তবে বাম জোটের এই বিভাজন আখেড়ে বিজেপিকেই সাহায্য করতে পারে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
তৃণমূলকে সমর্থন করতে গিয়ে বিজেপিকেই সাহায্য?
উত্তরবঙ্গের আটটি লোকসভা আসনের ৫৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে আছে ৩৬টি আসনে, তৃণমূল ১৪টি আসনে এবং কংগ্রেস ছ'টি আসনে। এছাড়া জঙ্গলমহল বা আদিবাসী অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলিতেও অনেকটাই এগিয়ে বিজেপি। এদিকে লিবারেশ প্রয়োজনে তৃণমূলকে 'সমর্থন'-এর কথা বললেও 'বাম ঐক্যে' ফাটল যে তৃণমূল বিরোধী ভোটগুলিকে আরও বিজেপিমুখী করে দেবে, তা বলাই বাহুল্য।