মডেল কেরলই এখন দুঃশ্চিন্তার কারণ ভারতের, জেনে নিন এর আসল কারণ
একসময় করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়েছিল এই কেরল। কিন্তু এখন চিত্রটা সম্পূর্ণ উল্টো। ভারতের ৪৪ শতাংশ করোনা কেস কেরল থেকে। কেরলের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোভিড–১৯ পজিটিভ কেসের হার দেশের জাতীয় গড় থেকে পাঁচগুণ বেশি কেরলে। গত বছরের মে–জুন মাসে দেশের অধিকাংশ রাজ্যে করোনা কেসের হার কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু কেরলের বিভিন্ন হাসপাতালের আইসিইউ বেড একপ্রকারভাবে ভর্তি রয়েছে করোনা রোগীতে।

সরকারকে সচেতন হতে হবে
মন্ত্রকের মতে, রাজ্যে আইসিইউ বেডের সংখ্যা ৩,০৫০টি, যার মধ্যে ১২০০টি সরকারি হাসপাতালে রয়েছে এবং ১৮৫০টি বেসরকারি হাসপাতালে। যার মধ্যে ৯০ শতাংশ রোগীদের দখলে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ এসএস লাল বলেন, ‘এখন যদিও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তবে যদি পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে এগোয় সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রককে কোভিড রোগীদের জন্য অস্থায়ী হাসপাতালের মতো বিকল্প ব্যবস্থার বন্দোবস্ত করতে হবে।' স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা রাজ্য সরকারের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও অ্যান্টিজেন টেস্টের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাকে এই পরিস্থিতির জন্য দোষারোপ করেছেন, তবে তাঁরা এও স্বীকার করেছেন যে বিপরীত ট্রান্সক্রিপশন-পলিমেরাস চেইন রিয়্যাকশান (আরটি-পিসিআর) টেস্ট, যা কোভিড-১৯ নির্ধারণের জন্য একদম সঠিক, এই টেস্টের কারণেই রাজ্যে কোভিড কেসের বৃদ্ধি ও ইচ্চ পজিটিভ হার ধরা পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে এটা খুবই খারাপ হচ্ছে, রাজ্যের অন্য চিত্র তুলে ধরার জন্য সরকার পুরনো রেকর্ডগুলিকে ফাঁকি দিচ্ছে। আমেরিকা থেকে ফেরা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লাল জানান যে আগের সতর্কতাকে না মানার ফলে রাজ্যকে এখন এটা ভোগ করতে হচ্ছে। তিনি এও বলেন, ‘রাজ্য ভাইরাসের আগে যেতে ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু মহামারির রেকর্ড পেরিয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতি খুবই গুরুতর। আমরা সরকারকে এ বিষয়ে অনেক আগেই সতর্ক করেছিলাম।'

গত তিনমাসে বিগড়েছে পরিস্থিতি
কেরলের পরিসংখ্যান বলছে, গত তিনমাসে রাজ্যের পরিস্থিতি বিগড়েছে। কোভিড-১৯ কেস বৃদ্ধি পেতে শুর করে অক্টোবর থেকে (দ্বিতীয় ওয়েভ)। রাজ্যে টেস্টের পজিটিভ হার (টিআরপি) বৃদ্ধি পেয়েছিল ১৩ শতাংশ, যা ১৩ অক্টোবর বেড়ে হয় ১৮.১৬ শতাংশ। নভেম্বরে এই টিআরপি হ্রাস পায় ৮ শতাংশে আর ডিসেম্বরে তা ফের ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। জানুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে ফের রাজ্যে করোনা কেস বাড়তে শুরু করলে ২৫ জানুয়ারি থেকে মধ্য-জানুয়ারি পর্যন্ত টিআরপি বৃদ্ধি পায় ১২.৪৮ শতাংশ। পজিটিভ কেসের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয় কোভিড মামলাও পাল্লা দিয়ে বাড়ে। পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, গত তিনমাসে গড় সক্রিয় কেসের সংখ্যা ছিল ৬৫ থেকে ৭০ হাজার পর্যন্ত। বুধবার সক্রিয় কেসের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১,৬০৭। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, কোভিড আক্রান্ত ২০টি শীর্ষ জেলার মধ্যে ১২ টি জেলা কেরলেই।

কেরলের ১২টি রাজ্য কোভিড আক্রান্ত
এরনাকুলাম ও কোঝিকোড়ে রাজ্যে কোভিড-১৯ কেসের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। কেরলের আইএমএ রাজ্য সরকারকে এরনাকুলামে লকডাউনের মতো কড়া সতর্কতা গ্রহণ করতে বলেছে, যাতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণে রাখা যায়। যদিও রাজ্য সরকার আইএমএর এই দাবি মানতে নারাজ। কারণ তা আসন্ন বিধানসভা ভোটের ওপর প্রভাব ফেলবে, যা মাত্র তিনমাস দূরে রয়েছে। আইএমএর কেরলের সভাপতি পিটি জাকারিয়াস বলেন, ‘রাজ্যটি বিপজ্জনকভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং এরনাকুলামের মতো কয়েকটি জেলায় লকডাউন সহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।' তিনি এও বলেন, ‘পরিস্থিতি সত্যিই খুব খারাপ। কিছু কিছু মানুষ এমন আচরণ করছেন যে ভ্যাকসিন এসে গিয়েছে মানেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।' জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং মহামারিবিদ ডাঃ বি রমন কুট্টি বলেন, ‘একমাত্র আশার খবর হল মৃত্যুর হার অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। কেরলে কম মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ জানতে আমাদের জেনেটিক গবেষণা করতে হবে।'

কেরলে প্রকৃত মৃত্যু অনেক বেশি
যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে কেরলে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, যিনি কোভিড মৃত্যু নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছেন,সেই ডাঃ এনএম অরুণ বলেন, ‘মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্যে মোট মৃত্যু হয়েছে ৩,৬৪৩ জনের। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিদিন মৃত্যুর পার্থক্যগুলি পোস্ট করেছি। আমার পরিসংখ্যান বলছে, সরকারি মৃত্যুর হার থেকে তিনগুণ বেশি মৃত্যু হয়েছে এই রাজ্যে।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিরুবন্তপুরমের এক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক স্বীকার করেছেন যে সরকারি তথ্যের চেয়ে প্রকৃত মৃত্যুর হার রাজ্যে অনেক বেশি।
প্রতীকী ছবি
'১২ দিনে ভারত ২.৩ মিলিয়কে টিকা দিয়েছে'! ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে সদর্পে দাবি মোদীর